হাওর ভ‚মিপুত্রের স্বপ্ন পূরণ

বাকৃবিতে চর ও হাওর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

মো. নাবিল তাহিমিদ, বাকৃবি
অবহেলিত হাওর অঞ্চলের কৃষি ও দুদর্শাগ্রস্ত মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে সবসময়ই কাজ করে গেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের ১৯৮৪-৮৫ বষের্র শিক্ষাথীর্ কৃষিবিদ ড. নিয়াজ পাশা। হাওর ও চর উন্নয়ন ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা ছিল তার জীবনের অন্যতম স্বপ্ন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে একটি প্রস্তাবনাও পেশ করেছিলেন তিনি। তারই ফলশ্রæতিত গত ২২ জুলাই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনমির্লনী অনুষ্ঠানে এসে বাকৃবিতে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করে পূরণ করলেন নিয়াজ পাশার অপূণর্ স্বপ্ন। কিন্তু দেখে যেতে পারলেন না হতভাগ্য সাংবাদিক ড. নিয়াজ পাশা। তাছাড়া চর ও হাওর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্টজনদের কেউই নিয়াজ পাশার অবদান উল্লেখ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিয়াজ পাশার সহধমির্ণী মিসেস ফারজানা আশা। ড. নিয়াজ পাশার হাত ধরেই শুরু হয় তৎকালীন কৃষি সাংবাদিকতা। তিনি বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। হাওরের প্রতি ছিল তার অসম্ভব ভালোবাসা, প্রবল টান ও অনুভ‚তি। তাইতো নিজের নাম মো. নিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে তার নিজ গ্রামের নাম ‘লাইমপাশা’ নামের শেষাংশ জুড়ে দিয়ে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন নিয়াজ পাশা নামে। একজন সফল কৃষি প্রকৌশলী হয়েও তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন দৈনিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকায় নানা প্রবন্ধ, কৃষির নানাবিধ সমস্যা ও সম্ভাবনার সংবাদ লিখে যেতেন। মালয়েশিয়া হতে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অজের্নর পর দেশে ফিরে তিনি কৃষি সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে আরও বেশি মনোনিবেশ করেন। হাওরের কৃষি ও কৃষকের দুঃখ দুদর্শার কথা অনবরত লিখতে থাকেন পত্রিকার পাতায়। কমর্জীবনে তিনি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কমর্রত ছিলেন। শেষজীবনে তিনি সাকর্ এগ্রিকালচার সেন্টার ঢাকার সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার পদে কমর্রত ছিলেন। নিয়াজ পাশার সহধমির্ণী ফারজানা আশা বলেন, ‘হাওর অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুদর্শা ও হাওরের সম্ভবনা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক সংবাদ ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেন ড. নিয়াজ পাশা। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউিট প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি প্রস্তাবনাও পেশ করেন তিনি। এরই ফলশ্রæতিতে দেশে প্রথমবারের মতো হাওরাঞ্চল উন্নয়নের জন্য ইনস্টটিউিট প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ব্রেইন স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও বাকশক্তিহীন হয়ে ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাওর ভূমিপুত্র ড. নিয়াজ পাশা। তিনি আজ নেই, তবে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তার স্বপ্ন পূরণের জন্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। চর ও হাওর অঞ্চলের ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানে হাওরাঞ্চল সম্পকের্ জানা যায়, দেশের পূবর্-উত্তারাংশে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ৫৭টি উপজেলা নিয়ে হাওর এলাকা গঠিত। মোট চাষযোগ্য ০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর জমি থেকে বছরে প্রায় ৫.২৩ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন হয়। জিডিপিতে হাওরের অবদান ৩% এবং এর ২৫% আসে কৃষি থেকে। কিন্তু আগাম বন্যায় বছরে ক্ষতি ০.৩৩ মিলিয়ন হেক্টর, যার আথির্ক মূল্য ৩.৪৮ মিলিয়ন টাকা। এ ক্ষতি জাতীয় কৃষির প্রায় ৩%। সেসব এলাকায় বছরে কৃষিজমি কমছে ০.৩৩% হারে। হাওর এলাকায় ৩৪% পরিবার প্রান্তিক কৃষক, ৫% পরিবার জাতীয় লেভেলের নিচে, ৫১% পরিবার ক্ষুদ্র কৃষক এবং ২৮% লোক অতি দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে। হাওর ও চর উন্নয়ন ইনিস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রকিবুল ইসলাম খান বলেন, হাওর ও চর উন্নয়ন ইনিস্টিটিউটের পিছনে ড. নিয়াজ পাশার অবদান অসামান্য। হাওর নাম আসলেই তাকে স্বরণ করতে হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিজে যেহেতু ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেছেন তাই আশা করছি শীঘ্রই পুরো কাজ সম্পন্ন হবে। এ ইনস্টিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদই জড়িত থাকবে। এখান থেকে একাডেমিক ডিগ্রি, পিএইচডি ডিগ্রি, গবেষণাসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকবে বলে আশা করছি।