বাকৃবি গবেষকদের সাফল্য

গবাদিপশুর ব্রম্নসেলোসিস রোগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মো. নাবিল তাহমিদ
ব্রম্নসেলোসিস রোগের টিকা উদ্ভাবনকারী গবেষক দলের সদস্যবৃন্দ - যাযাদি
গবাদি পশুর ব্রম্নসেলোসিস রোগের কারণে গর্ভপাত, বন্ধ্যত্ব ও মৃত বাচ্চা প্রসবজনিত নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এতে দেশের প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন ক্ষেত্র অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যান্য দেশে এই রোগের জন্য দায়ী ব্রম্নসেলা বায়োভার-১ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেয়া হলেও বাংলাদেশে এই রোগের জন্য দায়ী ব্রম্নসেলা বায়োভার-৩ এর জন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। আর এই রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। প্রায় দেড় বছর গবেষণা করে বায়োভার-৩ এর জন্য কার্যকরী ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে পরীক্ষামূলকভাবে সফলতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাকৃবির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান ও তার সহযোগী গবেষকরা। গত সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কথা জানান গবেষকরা। গবেষকরা বলেন, ব্রসেলোসিস প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের গবাদি পশুতে ব্রম্নসেলা বায়োভার-৩ শনাক্ত করে সেখান থেকে হিট কিলড্‌ ভ্যাক্সিন তৈরি করেছি। গবেষণার কার্যক্রমে আমরা গর্ভপাত ঘটেছে এমন গাভী থেকে মৃত বাচ্চা ও গর্ভফুল নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেছিলাম। পরে এসব নমুনা থেকে নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে কালচারের মাধ্যমে জীবাণু আলাদা করি। পরে সেই জীবাণুকে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে অকার্যকর করা হয়- যেন তা প্রাণী দেহে রোগ সৃষ্টি করতে না পারে। টিকা হিসেবে এর কার্যকারিতা অবলোকন করার জন্য অকার্যকর জীবাণু গিনিপিগের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। প্রতিসপ্তাহ অন্তর নয় সপ্তাহ পর্যন্ত ফলাফল রেকর্ড করা হয়। দেখা যায় দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা শুরু করেছে। এটি চতুর্থ সপ্তাহে সর্বোচ্চ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এরপরে এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে এবং নবম সপ্তাহে এর কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়া যায়নি। প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ডা. আব্দুলস্নাহ আল মারুফ, ফারজানা ইয়াসমিন, সুকুমার রায় ও আনন্দ চৌধুরী। টিকা বাজারজাতকরণের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উদ্ভাবিত টিকাকে আরও কার্যকরী এবং মানসম্মতভাবে তৈরি করার জন্য গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাণী দেহে এই টিকা আশানুরূপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে এটি বাংলাদেশে বাজারজাত করা সম্ভব হবে। এ জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে।