হিমায়িত মাংস আমদানির সিদ্ধান্ত দেশীয় খামারের জন্য আত্মঘাতী

বাংলাদেশ এখন মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। জনপ্রতি দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদা হিসেবে দেশে মাংসের চাহিদা বছরে মোট ৭২.৯৭ লাখ টন। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি থেকে মোট মাংস উৎপাদিত হয়েছে ৭৫.১৪ লাখ টন, অর্থাৎ উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়েছে ২.১৭ লাখ টন।

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ড. শরীফ আহম্মদ চৌধুরী সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত 'আসবে মাংস, যাবে পোশাক' শীর্ষক প্রতিবেদনটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের যে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন না করার জন্য আমরা বর্তমান জনবান্ধব সরকারকে অনুরোধ করছি। এ দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৬১ লাখ গবাদিপশু পালনকারী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা বিপন্নকারী ওই প্রস্তাবনার সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি। বিগত কয়েক বছরে প্রাণিসম্পদ খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে বাংলাদেশ এখন মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। জনপ্রতি দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদা হিসেবে দেশে মাংসের চাহিদা বছরে মোট ৭২.৯৭ লাখ টন। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি থেকে মোট মাংস উৎপাদিত হয়েছে ৭৫.১৪ লাখ টন, অর্থাৎ উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়েছে ২.১৭ লাখ টন। এর মধ্যে গরু-ছাগলের মাংস মোট মাংসের প্রায় ৫৫% ভাগ। বাংলাদেশের প্রায় ৮০-৯০% মাংস উৎপাদিত হয় ভূমিহীন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি (০-২.৪৯ একর) আকারের খামারে- যা কৃষির অন্যান্য উপ-খাত বিশেষত ফসল খাতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ফসলের বিভিন্ন উপজাত যেমন: খড়, কুড়া, ভুসিই মূলত এ ধরনের খামারে প্রাণির প্রধান খাদ্য। আবার এসব খামারের গোবর-আবর্জনা ওই খামারে ফসলি জমির জৈব সারের প্রধান উৎস। এভাবে পুষ্টির পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে এসব পরিবেশবান্ধব প্রাণির খামার দীর্ঘদিন যাবত এ দেশে টিকে আছে। সম্প্রতি এ দেশে গরু মোটাতাজাকরণে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে- যা বছরব্যাপী মোট প্রায় ১০-২০% শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করে। এসব খামারে ৫-১২ জন পর্যন্ত লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এভাবে প্রাণিসম্পদ খাত দেশের মোট জনসংখ্যার প্রত্যক্ষভাবে ২০% এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০% জনের কর্মসংস্থান করে। দেশে বর্তমান প্রায় ২৫৭.২৪ লাখ গরু-মহিষ ও ২৯৮.০০ লাখ ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে ৪৫.৮২ লাখ গরু ও মহিষ এবং ৭২.০০ লাখ ছাগল এবং ভেড়া দেশে উৎপাদিত হয়েছে। বছরের অন্যান্য সময়েও মাংসের জন্য প্রায় সমপরিমাণ গরু-মহিষ-ছাগল উৎপাদন হয়। অর্থাৎ সারা বছর প্রায় ৯০.০০ লাখ গরু-মহিষ এবং ১৪০.০০ লাখ ছাগল ও ভেড়া মাংসের জন্য খামারিরা উৎপাদন করেন। এ পরিমাণ পশুপালনের মাধ্যমে প্রায় ৩৭.০০ লাখ দরিদ্র খামারির বছরব্যাপী স্ব-কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। এ সব ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বাণিজ্যিক খামারের কৃষক পরিবারের আয়, খাদ্য, পুষ্টি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আপদকালীন সম্পদ হিসেবে ভূমিকা রাখছে। তবে নিকট অতীতেও এ অবস্থা ছিল না। নব্বইয়ের দশকে এ দেশে জবাইকৃত ৭০% গবাদিপশু আসতো দেশের বাইরে থেকে। হাড়-জিরজিরে, বয়সের ভারে ন্যুব্জ বলদ টেনেহিঁচড়ে কসাইখানায় নেয়ার দৃশ্য এখনও আমাদের স্মৃতিতে ভেসে উঠে। বর্তমান শতাব্দীর শুরু থেকে এ দেশে গরু মোটাতাজাকরণ শুরু হয়। ভারতের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে ২০১৪ সাল থেকে সীমান্ত পথে অবৈধভাবে গরুর অনুপ্রবেশ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। তখনই প্রথম বাংলাদেশের খামারিরা পবাদিপশু পালনে লাভের মুখ দেখেন। সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগের ফলে এ দেশে অসংখ্য ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ দেশে ৪,৪২,৯৯১টি নিবন্ধিত গরু মোটাতাজাকরণ খামার ও ৫৯,২৭৪টি ডেইরি খামার রয়েছে। তা ছাড়াও সারাদেশে রয়েছে অসংখ্য অনিবন্ধিত খামার। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পারিবারিক খামারের পাশাপাশি এসব বাণিজ্যিক খামার এখন দেশের বিফ ক্যাটেল সরবরাহের প্রধান জোগানদাতা। প্রাণিসম্পদ খাতের এই বিকাশমান ধারার বিপরীতে সম্প্রতি বেশ কিছু নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে তরল দুধে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি বিষয়ক প্রচারণা, কোরবানির চামড়া ক্রয়-বিক্রয় বিপর্যয় এবং সর্বশেষ হ্রাসকৃত শুল্কে আরো অধিকহারে মাংস আমদানির উদ্যোগ। স্বল্পমূল্যে আমদানিকৃত মাংসের ফলে দেশীয় গবাদিপশু উৎপাদনে তথা বাংলাদেশে মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে অবশ্যই ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়াও জাতীয় কৃষি অর্থনীতিতে, জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায়, পরিবেশের ওপর এবং সামাজিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে পারে মারাত্মকভাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রভাব : মাংসের জন্য উৎপাদিত ৯০ লাখ গরু ও মহিষ এবং ১৪০ লাখ ছাগল ও ভেড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রায় ৫৫.০০ হাজার কোটি টাকা সঞ্চালনে সহায়তা করে। এ সঞ্চালনের ন্যূনতম ৭০% (প্রায় ৩৮ হাজার কোটি) দরিদ্র বা অতিদরিদ্র খামারিদের মাঝে হয়ে থাকে। মাংস আমদানি বৃদ্ধি করা হলে এসব খামারি মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। তা ছাড়া সম্প্র্রতি গড়ে উঠা বাণিজ্যিক খামারগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে- যা এসব খামারে কর্মরত লাখ লাখ মানুষকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দিবে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে প্রভাব : দেশে উৎপাদিত এবং জবাইকৃত পশু শুধু মাংসই উৎপাদন করে না বরং চামড়াসহ অন্যান্য চামড়াজাতসামগ্রী উৎপাদন করে থাকে। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৮ কোটি বর্গফুট চামড়া উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করে জুলাই-অক্টোবর ২০১৯-এ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ আয় করে প্রায় ২,৯০০ কোটি টাকা- যা বাৎসরিক হিসাবে প্রায় ৮,৭০০ কোটি টাকা। অধিকহারে মাংস আমদানির ফলে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী চামড়া খাত মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। এর ফলে রপ্তানি আয় কমার পাশাপাশি এ খাতে কর্মরত প্রায় ৫৬ লাখ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব : বাংলাদেশের প্রায় ৮৬ লাখ হেক্টর আবাদি জমির অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ৫% জৈব পদার্থের তুলনায় গড়ে মাত্র ১.৯৬% জৈব পদার্থ রয়েছে। জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ। যার অভাবে দেশে খাদ্য উৎপাদন বিপুলভাবে ব্যাহত হবে। এ দেশে গবাদিপশু প্রতি বছর প্রায় ১২ কোটি টন গোবর সার উৎপাদন করে। যার ৮৩% গরু/মহিষ উৎপাদন করে। এই গোবরই বাংলাদেশের চাষকৃত জমির অন্যতম জৈব পদার্থের উৎস। অধিকহারে মাংস আমদানির ফলে এ দেশের গবাদিপশুর উৎপাদন কমবে ফলে জমিতে জৈব পদার্থ সরবরাহের হার কমতে থাকবে। ফলশ্রম্নতিতে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে- যা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে। প্রাণিসম্পদ শিল্প খাতে প্রভাব: বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ খাতের খাদ্য, ওষুধ এবং সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ খাতে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বৃহদাকার অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একইভাবে ছোট বড় প্রায় ২২৬ ফিড মিলে ৪০ লাখ টন প্রাণীর খাদ্য উৎপাদন ৪৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ দেশে প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মাংসের দোকানে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সম্ভাবনাময় মাংস খাতকে সামনে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে বেঙ্গলমিট, দেশীমিট এবং আরো বেশকিছু মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ, যেখানে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ ছাড়াও ভেটেরিনারি, টিকা ও ওষুধ সংশ্লিষ্ট প্রায় ৭০০ কোম্পানি দেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ব্যবসা করছে, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিদেশ থেকে মাংস আমদানির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠিত শিল্প/পেশাসহ বিকাশমান শিল্পের অপমৃতুু্য হতে পারে, বেকার হতে পারে লাখ লাখ মানুষ। আর্থিক খাতে প্রভাব : বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে বিভিন্ন ব্যাংক এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে। দেশে বর্তমানে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে শুধু প্রাণিসম্পদ খাতেই বিনিয়োগ হয় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিনিয়োগের অধিকাংশই হয়ে থাকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। মাংস আমদানির ফলে এখাতে বিনিয়োগ ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে- যা গ্রামীণ অর্থনীতিসহ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্ষেত্রকে আরো সংকুচিত করবে। এর ফলে দেশে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। পরিবেশের ক্ষেত্রে প্রভাব : বাংলাদেশে গবাদিপশু পালন এ দেশের গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে কৃষি খাতে বিভিন্ন উপজাত যেমন খড়, ক্ষুদ, কুড়া, ভুসিসহ ঘাস-লতাপাতা খাইয়ে এ দেশের গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া পালন করা হয়। আবার গোবর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারসহ ফসলের জমিতে জৈবসার হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই। অন্যদিকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় গরুকে চারণভূমিতে ছেড়ে পালন করা হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১.৮টি গরু পালন করা হয়। এই চারণভূমি মূলত আমাজন রেইন ফরেস্ট পুড়িয়ে প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটন ব্রাজিলিয়ান মাংস উৎপাদনে প্রায় ৩.৫ হেক্টর চারণভূমির প্রয়োজন হয়। সারা বিশ্বে বর্ধিতহারে মাংস রপ্তানির জন্য ব্রাজিলে প্রতি বছর হাজার হাজার হেক্টর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনাঞ্চল উজাড় করা হয়। ধ্বংস করা হয় হাজার হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। এভাবে ধ্বংস হয় 'পৃথিবীর ফুসফুস' খ্যাত আমাজন বন, উষ্ণতর হয় পৃথিবী। যার চরম শিকার হচ্ছে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ। যেখানে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন দেশের মধ্যে অন্যতম, সেখানে চরম পরিবেশ বিধ্বংসী প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত মাংস বাংলাদেশে আনয়ন আমাদের নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিল। সামাজিক কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে প্রভাব : বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ যুবক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান করা সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ জন্য অনেক শিক্ষিত যুবক উদ্যোক্তা হিসেবে কৃষির বিভিন্ন খাতকে বেছে নিয়েছে। এখানে স্ব-কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ দেশে সরাসরি মাংস আমাদানির ফলে কর্ম-সংস্থানের ক্ষেত্র সংকুচিত হবে তথা বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে- যা সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং শান্তিশৃঙ্খলার অবনমন ঘটাবে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুসারে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাংস আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ২৪ লাখ ৭৯ হাজার ডলার এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাংস আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৭ লাখ ২৮ হাজার ডলার। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল সর্বোচ্চ পরিমাণ। চলতি ২০১৯ বছরে এপ্রিল-জুলাই মেয়াদে ভারত থেকে মোট মাংস আমদানি হয়েছে ৫৪৭ টন। এ হারে আমদানি করা হলে ভারত থেকে বছরে মাংস আমদানির পরিমাণ হবে প্রায় ১৮৬১ টন। বিগত বছরে ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশ থেকে যে পরিমাণ মাংস আমদানি করা হয়েছিল তা যদি চলতি বছরেও করা হয় তবে বছর শেষে মোট আমদানিকৃত মাংসের পরিমাণ হবে প্রায় ২৫০০-৩০০০ টন। এর অর্থ দাঁড়ায় শুধু এ বছরেই ১০-১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান থেকে দেশ বঞ্চিত হবে। বৃদ্ধি পাবে বেকারত্ব, ধ্বংস হবে গ্রামীণ অর্থনীতি- যা এ দেশকে সামগ্রিকভাবে পিছনে ঠেলে দিবে। সরকার সম্প্র্রতি দেশে দুধ ও মাংস বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ৪২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ দেশে, বর্ধিতহারে মাংস আমদানি অব্যাহত থাকলে এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য নিশ্চিত বিফলে যাবে। এ দেশে মাংসের প্রায় ৪৫% আসে পোল্ট্রি খাত থেকে। বাংলাদেশের তুলনায় অনেক সস্তায় উৎপাদিত পোল্ট্রি মিট এ দেশের বাজারে প্রবেশ করলে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানকারী এ খাতও ধ্বংসের মুখোমুখি হবে।