দুর্লভ ফুল নাগলিঙ্গম

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নূর আলম গন্ধী নাগলিঙ্গম সুউচ্চ ও চিরসবুজ বৃক্ষ। আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চল। পরিবার- খধপুঃযরফধপবধব, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম-ঈড়ঁৎড়ঢ়রঃধ মঁরধহবহংরং। নাগলিঙ্গম নামটি সংস্কৃত হতে নেয়া, তাই এর কোনো বাংলা নাম নেই। নাগলিঙ্গম আবিষ্কৃৃত হয় প্রায় তিন হাজার বছর আগে আমাজনের জঙ্গলে। ১৭৫৫ সালে ফ্রান্সের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জে এফ আউবেল্ট-এর নামকরণ করেন ক্যানন বল (ঈধহহড়হ নধষষ)। এ নাগলিঙ্গম বহু আগে থেকেই ভারত উপমহাদেশের এক পবিত্র উদ্ভিদ। শিবমন্দিরে এ গাছের রয়েছে বিশেষ কদর। কারণ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষজন শিব পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করে থাকেন। ভারতে নাগলিঙ্গমকে শিব কামান নামে ডাকা হয়। তা ছাড়া বৌদ্ধ মন্দিরে নাগলিঙ্গম গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তাইতো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে নাগলিঙ্গম গাছ রয়েছে বলে জানা যায়। এ গাছ উচ্চতায় প্রায় ৮০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কান্ড বেশ মোটা হয় ও গাছের কাঠ খুবই মজবুত। রং লালচে বাদামি। গাছের শাখা-প্রশাখা কম, সোজা উপরের দিকে বাড়তে থাকে। পাতা গাঢ় সবুজ ও গুচ্ছবদ্ধ। লম্বায় সাধারণত ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি এবং চওড়ায় ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। মূলত গ্রীষ্মকালে এর পাতা ঝরার সময়। তবে বছরে বেশ কয়েকবার পাতা ঝরায় এবং নতুন পাতা গজায়। নাগলিঙ্গম গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। তবে ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম গ্রীষ্ম। বছরের অন্যান্য সময়ে গাছে কম পরিমাণে ফুল ফুটতে দেখা যায়। নাগলিঙ্গমের ফুল শাখা-প্রশাখায় ফোটে না কান্ড ফুঁড়ে মঞ্জরি বের হয় এবং ওই মঞ্জরিতে ফুল ধরে। তাইতো গাছের প্রায় গোড়া থেকে উপর কান্ড পর্যন্ত এর ফুল ফুটতে দেখা যায়। একই মঞ্জরিতে অনবরত একাধিক ফুল ফুটতে থাকে। এর ফুলের সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে- যা নয়নাভিরাম। ফুল রঙে উজ্জ্বল গোলাপি, সাদা, লাল ও হলুদের মিশ্রণ। এর ফুটন্ত ফুলের পরাগকেশর নাগের ফণার মতো বাঁকানো থাকে। আর এ কারণেই গাছটির নাম নাগলিঙ্গম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পরাগদন্ড রঙে সাদা থেকে গোলাপি ও মাংসল। এর পরাগ দন্ডের শেষ অংশে অসংখ্য পুংকেশর থাকে। ফুলের পাপড়ি সংখ্যা ছয়টি- যা বেশ পুরু হয়। এর ফুলে রয়েছে মিষ্টি সুবাস- যা দূর থেকে অনুভব করা যায়। ফুল শেষে গাছে ফল ধরে। ফল আকারে গোলাকৃতির, মাংসল ও বেলের মতো বড়- যার রং বাদামি। তা ছাড়া ফল কামানের গোলার মতো বড় হয় বলে এ উদ্ভিদ কে ইংরেজিতে ঈধহহড়হ নধষষ :ৎবব বলে। এর প্রতি ফলে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত বীজ থাকে। বাংলাদেশের যে সব জায়গায় নাগলিঙ্গম গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে তা হলো- ঢাকার বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বাগানে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নটর ডেম কলেজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, কিশোরগঞ্জ শহরের আজিমুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় মাঠের পূর্ব প্রান্তে, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট শ্রীমঙ্গল, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, বান্দরবান ও কক্সবাজারের কয়েকটি বৌদ্ধমন্দির প্রাঙ্গণে। নাগলিঙ্গমের রয়েছে ভেষজ নানান গুণাগুণ। এর ফুল, বাকল ও পাতার নির্যাস এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিসেফটিক হিসেবে কাজ করে। তা ছাড়া পেটের পীড়া দমনে সহায়ক। বাকল দিয়ে বহুমূত্র রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। পাতার রস ত্বকের সমস্যা সারাতে ও ম্যালেরিয়ায় কাজ করে। কাটাছেঁড়া ও ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনেও নাগলিঙ্গম বেশ কার্যকর।