উপকূলে সিউইড চাষের সম্ভাবনা

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জান্নাত ঝুমা সিউইড, আমাদের দেশে সামুদ্রিকসম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নতুন উদ্যোগ। সিউইডের খাদ্যমান ও অন্যান্য উপযোগিতা সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ এখনও ততটা অবহিত ও সচেতন নন। তাই সিউইড চাষ, এর পুষ্টিমান এবং বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষকে সচেতন করে তোলতে হবে। শুধুমাত্র কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে নয়, অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলেও সিউইড চাষ প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে উপকূলীয় দরিদ্র জনসাধারণের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। মৎস্য খাতের উন্নয়ন ভাবনায় আমরা এতদিন শুধুমাত্র প্রচলিত মৎস্যসম্পদ যেমন মাছ ও চিংড়িকেই বিবেচনা করে আসছি। কিন্তু এর বাইরেও আমাদের জলাশয়ে বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রচুর অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে কাঁকড়া, কুচিয়া, ওয়েস্টার, শামুক, ঝিনুক, সিউইড ইত্যাদি অন্যতম। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বসম্পন্ন এসব অপ্রচলিত জলজসম্পদের উন্নয়ন, সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিগত কয়েক বছর যাবত গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। অমিত সম্ভাবনাময় আমাদের সমুদ্রসম্পদের সর্বোচ্চ ও সহনশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের সমুদ্রসীমায় মৎস্যসম্পদের মজুদ নির্ণয় এবং আহরণক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে 'আরভি মীন সন্ধানী' নামক জাহাজের মাধ্যমে বর্তমানে জরিপ কাজ পরিচালিত হচ্ছে। ২০২১ সালে মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে এসডিজির অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন এবং সুনীল অর্থনীতির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সামুদ্রিকসম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই সিউইডসহ বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন অন্যান্য অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। আশার কথা যে, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, ওয়েস্টার, সিউইড ইত্যাদি অপ্রচলিত জলজসম্পদ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা শুরু করেছে। ইনস্টিটিউট থেকে ইতোমধ্যে মিঠাপানির ঝিনুক থেকে মুক্তা উৎপাদন, ঝিকুক ও কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন এবং সিউইড চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে বাংলাদেশে মুক্তা, কাঁকড়া ও সিউইড চাষের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ১৪৭টি উপজেলায় প্রায় ৩ কোটি লোক বসবাস করে- যাদের অধিকাংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের সঙ্গে জড়িত। সিউইড চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে উপকূলীয় জনসাধারণের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।