রূপবান শিম চাষে লাভবান কৃষক

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড
কাঙ্ক্ষিত ফলন ও বাজারদর ভালো থাকায় রূপবান শিম চাষে লাভবান সীতাকুন্ডের কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে আড়াই শতাধিক কৃষক এ রূপবান শিমের চাষ করেছেন। ভালো ফলন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এ শিম আবাদের মাধ্যমে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন সীতাকুন্ডের কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ফসলি জমিতে কৃষকরা এ শিমের আবাদ করলেও সবচেয়ে বেশি রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল বস্নকে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ডের কৃষি জমিতে গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিমের আবাদ শুরু হয় ২০১০ সালে। বিগত ২০১৮ সালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১৫ হেক্টর জমিতে ১০৫ জন কৃষক এ শিমের আবাদ করেন। এতে রোগবালাই কম ও কাঙ্ক্ষিত ফলনে বেশ লাভবান হন কৃষকরা। ধীরে ধীরে রূপবান শিমের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছরে উপজেলার বড়দারোগার হাটের টেরিয়াইল বস্নক-১নং, সৈয়দপুর, বাড়বকুন্ড, মুরাদপুর ইউনিয়ন ও পৌরসদরের শেখ পাড়া, এয়াকুবনগর, মহাদেবপুর এলাকায় প্রায় আড়াই শতাধিক কৃষক ৩০ হেক্টর ফসলি জমিতে এ শিমের চাষ করেন। এতে কাঙ্ক্ষিত চাহিদার দ্বিগুন ফলনের কারণে বর্তমানে শিমের উৎপাদন ধরা হয়েছে ৪০০ মেক্ট্রিক টন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ফসলি জমিতে গ্রীষ্মকালীন সু-স্বাদু সবজি রূপবান শিমের আবাদ হলেও সবচেয়ে বেশি এ শিমের আবাদ হয়েছে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল বস্নকে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপবান শিমের মরা ফুল বাচাই ও ফুল রক্ষায় মহাব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। শারিরিক ক্লান্তি ভুলে ও খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে শিম ক্ষেতের ফুল ও ফলের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন তারা। বারৈয়াঢালা বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, এখানকার উঁচু জমিগুলোতে কৃষকরা আগে ধানসহ নানারকম সবজির আবাদ করতেন। বর্তমানে ওসব জমিগুলোতে তারা লাভজনক সবজি গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিমের আবাদ করেছেন। শিমের মূল্য ভালো বলে এ বস্নকে ১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০০ জন কৃষক কমরবেঁধে রূপবান শিম আবাদে নেমেছেন। চলতি মৌসুমে শিমের সুনামের কথা শুনে পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের হাটবাজারে পাইকার শিম ক্রয়ের জন্য ছুটে আসছেন। বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন টেরিয়াইল বস্নকের কৃষক মো. রবিউল হোসেন বলেন, প্রথমে কৃষি অফিসের পরামর্শে শিমের আবাদ শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। সে হিসেবে বৈশাখ মাসে ৮০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিমের আবাদ করা হয়। সঠিক পরিচর্যার ও রোগবালাই কম হওয়ায় শিমের কাঙ্ক্ষিত ফলন রয়েছে। প্রথম অবস্থায় আহরণ করা শিম বাজারে ১২০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করেছি। বর্তমানে দাম একটু পড়লেও রূপবান শিম ৮০/৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিমের শেষ মৌসুম আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি। একই বস্নকের কৃষক মো. নুরন নবী জানান, চলতি মৌসুমে ৩০ শতক ফসলি জমিতে গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিমের আবাদ করেছি। শিমে বাঁশের কঞ্চি দেয়া, কীটনাশক প্রয়োগ ও শ্রমিকের বেতনসহ প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে শিমের কাঙ্ক্ষিত ফলন ও বাজারদর ভালো থাকায় প্রায় ৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আরো ৮০/৯০ হাজার টাকা শিম বিক্রি করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাফকাত রিয়াদ দৈনিক যায়যায়দিনকে বলেন, শিম আবাদ জনপ্রিয় করার জন্য মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিরলস কাজ করছেন। তারা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী কর্মসূচি চালু রেখেছেন। এবারও গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে জৈব বালাই নাশক তথা ফেরোমান ফাঁদ ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সীতাকুন্ডের ৩০ হেক্টর ফসলি জমিতে রূপবান জাতের শিমের চাষ করেছেন প্রায় আড়াই শতাধিক কৃষক। এতে কাঙ্ক্ষিত ফলনের পাশাপাশি খরচের তুলনায় দাম একটু বেশি পাওয়ায় অধিকাংশ কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।