উপকূলীয় চরাঞ্চলে বিনামূল্যে ক্ষুদ্র খামারিদের সহায়তা

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সামছুল আলম/শায়লা শারমিন উপকূলীয় চরাঞ্চলের সরকারের সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সহায়তা প্রদান করা হবে। মুরগি, হাঁস ও ভেড়ার ক্ষুদ্র খামার স্থাপনের মাধ্যমে এসব পরিবারের পুষ্টি এবং আয় বৃদ্ধি করা, উপকূলীয় নারীদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে ডিম ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের ডিম, মাংসের চাহিদা পূরণ হবে। এতে করে একদিকে যেমন পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে অন্যদিকে নারী পুরুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ বাড়বে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন এই সহায়তার মাধ্যমে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পিছিয়ে থাকা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় অর্ধলাখ দরিদ্র পরিবারের মুখে ফুটবে হাসি। উপকূলীয় চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি, মৎস্য ও পশুপাখি পালন নির্ভর। কিন্তু প্রযুক্তিতে পিছিয়ে এসব এলাকায় এখনও প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নত হয়নি। চরাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এসব জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণ এবং নারীদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপকূলীয় চরাঞ্চলের সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প নামের তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ২০১৯ সালের মে মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের ৭ টি জেলার ১৬টি উপজেলার মোট ৬৮ টি ইউনিয়ন। এর সুফলভোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪০৮ টি পরিবার। সুফলভোগীদের মাঝে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, নোয়াখালী জেলার কবিরহাট, ফেনী জেলার সোনাগাজী, লক্ষ্ণীপুর জেলার লক্ষ্ণীপুর সদর, কমল নগর ও রামগতি উপজেলা। বরিশাল বিভাগের বরগুণা জেলার বেতাগী, পাথরঘাটা, তালতলী, বরগুণা সদর, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, গলাচিপা, রাঙ্গাবালি এবং ভোলা জেলার চরফ্যাশন, দৌলতখান ও লালমোহন উপজেলা। সুবিধাভোগী ৩৪ হাজার ৪০৮ টি পরিবারে মধ্যে ১৭ হাজার পরিবারকে ২০ টি করে হাঁস, হাঁসের ঘর ও হাঁসের ৬৫ দিনের খাদ্য, ১০ হাজার ২ শত পরিবারকে ২০ টি করে মুরগি, মুরগির ঘর ও মুরগির ৬৫ দিনের খাদ্য, ৬ হাজার ৮ শত পরিবারকে ৩ টি করে ভেড়া, ভেড়ার ঘর ও ভেড়ার ৮০ দিনের খাদ্য এবং পাশাপাশি ১ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা, ভ্যাকসিন ও মেডিসিন বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। ৬৮টি পরিবারকে কবুতর পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, কবুতরের ঘর প্রদান করা হবে। এছাড়া ৩৪০ জনকে উন্নতমানের নেপিয়ার ঘাস চাষের জন্য ৭ হাজার করে টাকা প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলো থেকে সুফলভোগী বাছাই কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। বর্তমানে ১৫০০ জনের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ন করা হয়েছে এবং আরো ২ হাজার জনের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।। প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা পরিবারগুলোকে আগামী নভেম্বর মাসে প্রকল্প সামগ্রী হস্তান্তর করা হবে। তাছাড়া, সুফল ভোগীদের প্রদেয় উপকরণ সমূহের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্প ভুক্ত প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে মোট ৬৮ জন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাঁরা সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করবেন কৃষকদের মাঝে। প্রতি ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ২০ টি গ্রম্নপে ৫০০ জন সুফলভোগী পরিবার প্রকল্পভুক্ত হবে। এর মাঝে ২৫০ টি পরিবার ১৮টি স্ত্রী হাঁস, দুটি পুরুষ হাঁস, ১৫০ টি পরিবার ১৮টি মুরগি, ২টি মোরগ, ১০০টি পরিবার ২টি ভেড়ি, ১টি ভেড়া, ১টি পরিবারকে কবুতর পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও ১ টি কবুতরের ঘর এবং ৫ জনকে উন্নতমানের ঘাস উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করা হবে। অন্যদিকে ভেড়া, মুরগি, হাঁস, কবুতর ও ঘাসের প্রদর্শনী পস্নট এই ৫ টি প্যাকেজের আওতায় সুফলভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে হাঁস ও মুরগি পালনকারীদের মধ্যে শতভাগ এবং ভেড়া পালনকারীদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীর কর্মসংস্থান ও আয়ের উৎস সৃষ্টির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ হবে। প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. নিতাই চন্দ্র দাস বলেন, চরের জীবন মূল ভূখন্ড থেকে অনেকটাই আলাদা। স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা, জীবন জীবিকা, অন্যান্য সেবা ও সুযোগ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন চরের লাখো মানুষ। উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে চরাঞ্চলে প্রায় ৩৫ হাজার দরিদ্র পরিবারের উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বৃদ্ধি পাবে প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন, সরবরাহ ও গ্রহণের পরিমাণ। প্রাণিজ খাদ্যের সয়লাভ ঘটবে। নারীরা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হবে। লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস পাবে এবং নারীর উন্নয়ন ঘটবে। চরাঞ্চলে ক্ষুদ্র খামারিরা ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণে অনুপ্রাণিত হবে। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সচেতনতা ও নৈপুন্য বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পভুক্ত উপজেলা সদরে ঘাসের বাজার চালু হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বেকার সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরো বলেন, উপকূলীয় চরাঞ্চলের প্রাণিসম্পদ নিয়ে এ ধরনের প্রকল্প এই প্রথম গ্রহণ করা হলো এবং এটা পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে হয়তো পরবর্তীতে সারাদেশে এ প্রকল্প গ্রহণ করবে সরকার।