খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি

খাদ্যের চাহিদা মিটলেও পুষ্টির চাহিদা পূরণে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর প্রায় দুতৃতীয়াংশই কোনো না কোনো মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে, এর মধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ শিশু ভুগছে মারাত্মক অপুষ্টিতে। এর কারণ পুষ্টি সচেতনতার অভাব অথবা পুষ্টিকর খাবার ক্রয় করার অসামর্থ্যতা ...

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার প্রথমটিই খাদ্য, আর বাংলাদেশের ৯০ ভাগ লোকের প্রধান খাবার ভাত। কোনো দেশের শিল্প, সাহিত্য ও অর্থনীতি কিংবা রাজনীতি সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় এই খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে খাদ্যশস্য বলতে আমরা ধানকেই বুঝে থাকি। ধানকে এ দেশের জাতীয় সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্য পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করতে না পারলেও দু বা তিন বেলা ভাতের সংস্থান প্রায় সবারই সামর্থ্যের মধ্যে। এটি বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন ভাতে কিভাবে শরীরের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যে উপদানগুলো দেহের প্রয়োজন অনুসারে সংযোজন, সরবরাহ বা পরিমাণে বৃদ্ধি করা যায়। বাংলাদেশে মাথাপিছু চালের গ্রহণ হার হিসেবে মোটামুটি দৈনিক যে পরিমাণের চারগুণ পুষ্টি আমরা চাল বা ভাত থেকে পাই- যা কোনোভাবেই আমাদের চাহিদার সমান নয়। এ কারণে খাদ্যের চাহিদা মিটলেও পুষ্টির চাহিদায় পূরণে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে ৫ বছরের কমবয়সী শিশুর প্রায় দু-তৃতীয়াংশই কোনো না কোনো মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে, এর মধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ শিশু ভুগছে মারাত্মক অপুষ্টিতে। এর কারণ পুষ্টি সচেতনতার অভাব অথবা পুষ্টিকর খাবার ক্রয় করার অসামর্থ্যতা। বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু চালের চাহিদা বছরে জনপ্রতি ১৩৪ কেজি, যা খাদ্যের বহুমুখিতা ও খাদ্যাভাসের পরির্বতনের ফল। চাল কে প্রধান খাদ্যশস্য বিবেচনায় রাখতে হলে আমাদের কমপক্ষে ৬০-৬৫% ক্যালরি চাল থেকে নিতে হবে। তা না হলে ডায়বেটিক, স্থূলতাসহ বিভিন্ন জীবনাচরিত (লাইফ স্টাইল) রোগ বেড়ে যাবে। সে হিসেবে মাথাপিছু চালের গ্রহণ (ঈড়হংঁসঢ়ঃরড়হ) জনপ্রতি ১৩৩ কেজি নিচে আসা উচিত হবে না। অথচ, ইদানীং দেখা যাচ্ছে, অনেকে ওজন কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা থেকে ভাত বাদ দিয়ে দিচ্ছেন; বিশেষ করে টিনএজ বা অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা। ভাতের পরিবর্তে তারা জাংক বা ফাস্ট ফুডের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে- যা ভাতের তুলনায় আরও বেশি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার। ক্যালরির হিসেবে যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখা যাবে, ১ কাপ ভাত থেকে ১৫০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। অন্যদিকে ১ কাপ পোলাও থেকে ৩০০ এবং ১ কাপ বিরিয়ানি থেকে ৫০০ ক্যালরি পাওয়া যায়। একইভাবে রুটির পরিবর্তে পরোটা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, লুচি-পুরি, শর্মা ইত্যাদি বেশি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার। আমাদের মনে রাখতে হবে, ওজন বাড়ার পেছনে মূলত পরিমাণে বেশি খাবার খাওয়া, বেশি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং ক্যালরি খরচ না করা অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রম না করাই দায়ী। প্রতিদিন যদি কেউ ১০০ ক্যালরি বেশি খাবার খায়, তাহলে তাকে ২০ থেকে ২৫ মিনিট দ্রম্নত হাঁটতে হবে। এতে শরীরে ক্যালরি জমার ঝুঁকি কম থাকবে। অনেকেই হালকা-পাতলা গড়নের শরীর গঠন ও বহুমূত্র রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আটার রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আসল কথা হলো ভাত বা রুটি বলে কোনো সমস্যা নেই। মোটা বা চিকন হওয়ার প্রধান কারণ খাওয়ার পরিমাণ। বহুমূত্র রোগীর রক্তের গুস্নকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাত বা রুটি কোনটাকেই ভালো বা খারাপ বলার সুযোগ নাই; তবে যে সব শস্যদানা জাতীয় খাদ্যে স্স্নো ডাইজেস্টেবল শর্করা (ঝষড়ষিু উরমবংঃরনষব ঝঃধৎপয) বেশি সে সব খাদ্যকে ভালো বলা যায়। যে সব গমের আটার দ্রম্নত ডাইজেস্টেবল শর্করা (জধঢ়রফষু উরমবংঃরনষব ঝঃধৎপয) বেশি সে সব খাদ্য বহুমূত্র রোগীর জন্য অবশ্যই অনুপযোগী। অন্য কথায় বলতেই হয়, যেসব চালের ভাতে স্স্নো ডাইজেস্টেবল শর্করা এর পরিমাণ বেশি সেগুলো বহুমূত্র রোগীদের রক্তের গস্নুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ উপযোগী। শস্যদানার মধ্যে পুষ্টিগুণের বিবেচনায় চালের চেয়ে ভালো গুণাগুণের কোনো খাদ্য আর নেই। আমাদের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বহুমূত্র রোগীদের উপযোগী তিনটি ধানের জাত অবমুক্ত করছেন- যেমন বিআর১৬, ব্রি ধান৪৬ এবং ব্রি ধান৬৯। অনেকের ধারণা নিয়মিত ভাত খেলে স্থূলতা বাড়ে। এটি আসলে সত্যি নয়। বরং আমরা প্রতিনিয়ত বাইরে যেসব স্ট্রিট ফুড বা মুখরোচক খাবার খাই, সেসব খাবারের সঙ্গে ট্রান্সফ্যাট খাচ্ছি এগুলোই ডায়বেটিক, স্থূলতা বা বহুমূত্র এ জাতীয় লাইফস্টাইল রোগের জন্য অনেকখানি দায়ী। এখন আসি- এই ট্রান্স ফ্যাট আসলে কী? এটা এক ধরনের ক্ষতিকারক চর্বি, যা তেলে ভাজা খাবারের মচমচে ভাব বাড়ায় এবং খাদ্য বেশি সময় ধরে সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এই চর্বি খাবারের স্বাদ বাড়ায় এবং টেক্সচার ধরে রাখে। এটি আমাদের দেশে ডালডা বা বনস্পতি হিসেবে অধিক পরিচিত; এর আসল নাম হাইড্রোজিনেটেড অয়েল। অতিরিক্ত ভাজা তেলে ট্রান্সফ্যাট পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জিংক শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। এটি মানবদেহে ২০০ এরও বেশি এনজাইমের নিঃসরণে অংশগ্রহণ করে যেগুলো দেহের অনেক বিপাকীয় কাজে এটি অংশ নেয়। এ ছাড়া দেহে এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শর্করার ভাঙনে, দেহ কোষের বৃদ্ধিতে এবং পলিপেটাইড, গ্যাসটিন নিঃসরণের এর মাধ্যমেই স্বাদের অনুভূতি বা রুচি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। জিংক ডিএনএ ও আরএনএ পলিমারেজ এনজাইমের একটি আবশ্যক উপাদান। কঙ্কালের বৃদ্ধির জন্য কেরোটিন তৈরি ও তার পরিপক্বতা, ক্ষত সারানো, আবরনি কোষের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজের দ্বারা জিংক ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে থাকে। উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীদের বেড়ে উঠার ব্যাপারে জিংকের অভাব হলে শিশু-কিশোররা বেটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানীরা জিংকসহ শরীরের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানগুলো দেহের প্রয়োজন অনুসারে কিভাবে চালে সংযোজন, সরবরাহ বা পরিমাণে বৃদ্ধি করা যায় সেটি নিয়ে গবেষণা করছেন। এই গবেষণায় প্রথম সাফল্য হলো ২০১৩ সালে ব্রি'র বিজ্ঞানীরা বিশ্বের সর্বপ্রথম জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত ব্রি ধান৬২ উদ্ভাবন। মানুষের শরীরে জিঙ্কের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার পুরোটাই মিটাতে পারে এই ব্রি ধান৬২ জাতের চালের ভাতের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে ব্রি জিংকসমৃদ্ধ আরো চারটি জাত যেমন- ব্রি ধান৬৪, ৭২, ৭৪ এবং ৮৪ অবমুক্ত করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জিংকের দৈনিক চাহিদা ১৫ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দৈনিক চাহিদা ১২ মিলিগ্রাম। ব্রি উদ্ভাবিত জিংকসমৃদ্ধ জাতে জিংকের পরিমাণ ১৯-২৪ মিলিগ্রাম। সাধারণত লাল মাংস, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, সয়া, দুগ্ধজাত খাবার, মাশরুম, যকৃত এবং সূর্যমুখীর বীজ জিংকের চমৎকার উৎস কিন্তু জিংকসমৃদ্ধ ভাতের ন্যায় এগুলো সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য নয়। অনুরূপভাবে, প্রোটিন বা আমিষের অভাবে দেহে সুনিদিষ্ট অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয়। শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য পূর্ণ বয়স্কদের ক্ষেত্রে ১ গ্রাম, শিশুদের জন্য ২-৩ গ্রাম আমিষের প্রয়োজন। মাছ, মাংস ও ডাল প্রোটিনের অন্যতম উৎস হলেও এসব খাবার ততটা সহজলভ্য নয়- যতটা সহজলভ্য ভাত। ব্রি উদ্ভাবিত প্রোটিনসমৃদ্ধ জাতগুলোতে যে পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে তা আমাদের প্রোটিনের চাহিদার ৬০ভাগ পূরণ করতে সক্ষম। এসডিজির ২নং অভীষ্টকে সামনে রেখে ব্রি অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন- আয়রন, এন্টি-অক্সিডেন্ট, গাবা ও প্রোভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এবং লো-জিআই ধানসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর ধান উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া শরীরের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানগুলো দেহের প্রয়োজন অনুসারে চালে সংযোজন, সরবরাহ বা পরিমাণে বৃদ্ধি করে উদ্ভাবনকৃত জাতগুলো অবমুক্তকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত উদ্ভাবনে বিশ্বের সর্বাধুনিক বায়োফর্টিফিকেশন ও জিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রি'র গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল অল্প জমি থেকে বেশি পরিমাণ ধান উৎপাদন করা। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোই ছিল তখনকার মূল লক্ষ্য। এখন দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে সেই সঙ্গে মানুষের চাহিদা ও রুচির পরিবর্তন এসেছে। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরু-সুগন্ধি এবং রপ্তানি উপযোগী প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে ব্রি। এক সময় আমাদের দেশে খাদ্যে সংকট ছিল, কিন্তু এখন আমাদের আর কোনো খাদ্যে সংকট নেই। দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা লোকের সংখ্যা কমতে কমতে এখন ১২ দশমিক ৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষ এখন পয়সা খরচ করে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার খেতে চায়। যেহেতু মানুষ স্বভাবত সরু ও চিকন চাল পছন্দ করে তাই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মোটা চালকে মেশিনে ছেঁটে সরু করে বাজারে বিক্রি করে, যেটি স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। চাল ছেঁটে যাতে চালকে অনিরাপদ করতে না হয় সে জন্য ব্রি ইতোমধ্যে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন জাত যেমন- ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৬৩, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮৪ এবং ব্রি ধান৮৬ উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় জাতসমূহ যেমন- বিরই, টেপি বোরো, রাতা বোরো, বালাম, কাটারি ভোগ, কৃষ্ণভোগ, রাণীস্যালুট থেকে উফশী জাত উদ্ভাবনের কাজ ব্রিতে গুরুত্বের সঙ্গে চলমান রয়েছে। আমাদের কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক প্রায়ই বলে থাকেন, খাবার শুধু সহজলভ্য (আধরষধনষব) হলেই হবে না সাধারণের কাছে নিরাপদ ও সহজপ্রাপ্য (অপপবংংধনষব) হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ- দুধের উৎপাদন ১০ গুণ বাড়লেও দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। তারা দুধ ক্রয় করতে পারেন না বা পারলেও সেটি বিক্রি করে ভাতের সংস্থান করেন। কেননা, তাদের পুষ্টির অধিকাংশ ক্যালরি, প্রোটিন ও মিনারেল আসে ভাত থেকে। ভাত তাদের কাছে সহজলভ্য। সাধারণ মানুষ দুধ-ডিম ও মাংসসহ অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার কিনতে না পারলেও ভাত নিয়মিত খেতে পারছেন। তাই ভাতের মাধ্যমে কিভাবে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক নিয়মে ও পরিমাণ মতো খাদ্য গ্রহণে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে; সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষিত ও সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে এবং প্রচার মাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে জনমত তৈরি করতে হবে। তাহলেই কেবল টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। লেখক: ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, ব্রি, গাজীপুর।