মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন রবিউল

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
পড়াশোনা শেষে চাকরি জোটেনি বলে মন খারাপ হলেও শখের মাল্টা চাষ রবিউলের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে - যাযাদি
মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শিক্ষিত বেকার যুবক রবিউল ইসলাম। ৬ বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ করেছেন। এ বছর প্রথম মাল্টা গাছে ফল এসেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। আরো বিক্রি করতে পারবেন। দেশি জাতের এ মাল্টার স্বাদ মিষ্টি এবং রসালো। ফলে বাজারে এর চাহিদাও বেশি। আশা করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে এ ক্ষেত থেকে মাল্টা পাবেন। রবিউল ইসলাম রবি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা কাকলাশ গ্রামের মৃত ছবেদ আলী মন্ডলের ছেলে। রবিউল রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে চাকরি নামের সোনার হরিণের দেখা পাননি। তাই বলে থেমে যাননি উদ্যোমী এই তরুণ রবিউল। চাকরির অপেক্ষায় বসে না থেকে বাড়ির চারপাশের নিজেদের জমিতে বিভিন্ন সবজি, ফলদ ও ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেন। বসত ভিটের পাশঘেঁষা প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে এসব চাষ করলেও সফলতা আসতে শুরু করেছে মাল্টার ক্ষেতে। ২০১৭ সালের জুনের মাঝামাঝি ৮৫০টি মাল্টার চারা ৬ বিঘা জমিতে রোপণ করেন। অল্পদিনে মাল্টার গাছগুলো সতেজ হয়ে উঠে। সবুজে সবুজে ভরে উঠে বাগান। প্রতিবেশীদের নজর কাড়ে তার মাল্টার ক্ষেতে। মাত্র দুই বছরের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। মাল্টার ক্ষেত ঘুরে দেখা যায় এ বছর প্রায় দেড় শতাধিক গাছে মাল্টা ধরেছে। কিছু কিছু গাছে সবুজ রঙের মাল্টাগুলো পেকে হালকা হলুদ রং হয়েছে। এ ছাড়া তার সাজানো বাগানে চাষ করা হয়েছে দারুচিনি, তেজপাতা, আশফল, লটকন, কদবেল, চালতা, বেদানা, জলপাই, লিচু, আম, জাফরান, বেল, পেয়ারা, জাম, আমড়া, করমচা, আমলকী, লেবু, পাম গাছসহ নানা জাতের মৌসুমি সবজি। রবিউল জানায়, একই সঙ্গে লেখাপড়া শেষ করে বন্ধুরা অনেকে চাকরি করছে। আবার অনেকে বেকার বসে আছে। চাকরি জোটেনি বলে প্রথম প্রথম মন খারাপ হলেও শখের মাল্টা আমার সব ভুলিয়ে দিয়েছে। কোনো কাজই ছোট নয়। পরিশ্রমে কোনো কিছু উৎপাদনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারলে নিজের মর্যাদা বাড়ে বলে যোগ করেন। রবিউল জানান, ছোটবেলায় গ্রামের মানুষের ফলের বাগান দেখলে খুব ভালো লাগতো। তখন মনে হতো বড় হয়ে সুযোগ পেলে ফলের বাগান করবেন লেখাপড়া শেষ করেছেন কয়েক বছর আগেই। চাকরি জোটেনি। তাই লেগে পড়েছেন তার স্বপ্নের বাগানে। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন মাল্টার। প্রতি পিস মাল্টার কলমের চারা পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা এলাকার দক্ষিণবঙ্গের অভিজ্ঞ মাল্টাচাষি সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে ১৮০ টাকা দরে মোট ৮৫০টি চারা রোপণ করেন। দেশি জাতের এ মাল্টার খেতে কড়া মিষ্টি এবং রসে ভরপুর। মাল্টাসহ তার ফলের বাগানে সারাবছরের জন্য কৃষি শ্রমিক রেখেছেন ৪ জন। এ এলাকায় তিনিই প্রথম মাল্টার চাষ করেছেন। প্রথমদিকে এত বড় ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্ত লাগানোর কিছুদিনের মধ্যেই গাছগুলো সতেজ হয়ে উঠেছিল। পালস্না দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল আমার পুষে রাখা স্বপ্ন। তিনি শুনেছেন গাছ লাগানোর কমপক্ষে ৫ বছর পরে একটি মাল্টাগাছ ফল ধরার জন্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে ২০ বছর ভালোভাবে ফল পাওয়া সম্ভব। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বাগানটি ২০ ধরে রাখতে পারলে যাবতীয় খরচ বাদে এখান থেকে কোটি কোটি টাকা আসবে বলে যোগ করেন। মাল্টা পরিচর্যা বিষয়ে রবি জানায়, অনাবৃষ্টির সময়ে গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। আবার অতিবৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশন করতে হয়। আবার গাছে অনেক সময় মাকড়সা লেগে গাছের পাতা কুকড়ে দেয়। গাছে ফল এলে ভোমরা, মাছিসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। যে কারণে ক্ষেতে বাড়তি নজরদারি করতে হয়। রবি'র ভাই আতাউর রহমান জানান, রবিউল ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতো। এরপর লেখাপড়া শেষ করে চাকরি হয়নি। বসে না থেকে বাড়ির পাশে যে ১৫-১৬ বিঘা জমি আছে সে সব সময় বিভিন্ন ধরনের মসলা, ঔষধি, সবজি ও ফলদবৃক্ষ রোপণ করে সবটুকু জমি ছেয়ে ফেলেছে। ফসলি জমিতো তাই, প্রথম দিকে তাকে পরিবারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভালো করার কারণে এখন পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে সহযোগিতা করছে। কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রতিবেশী আইয়ূব হোসেন জানান, শিক্ষিত যুবক রবিউল ইসলামের বাড়ি তার গ্রামেই। ছোটবেলা থেকেই সে উৎপাদনমুখী। সবচেয়ে বড় কথা সে পরিশ্রমী। তার ধৈর্য শক্তি অনেক বেশি। সে লেখাপড়া শিখেও চাকরির পিছু না ঘুরে বাগান তৈরি করেছেন। তার এমন উদ্যোগ দেখে এলাকার অনেকেই অনুসরণ করতে শুরু করেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, কয়েকবার রবিউল ইসলাম রবির ক্ষেত দেখতে গিয়েছেন। অত্যন্ত সৃজনশীল মনের মানুষ রবি। মাল্টা ক্ষেত থেকে তার আশাতীত লাভ আসবে। ঠিকমত পরিচর্যার করতে পারলে মাল্টা ক্ষেত থেকেই তার জীবনের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরে যাবে বললেন এই উপজেলার কৃষি অফিসের কর্তা।