ধান-পানের পরই গেন্ডারির চাষ বেড়েছে হরিণাকুন্ডুতে

গেন্ডারি আখের চাষ নিয়ে আশাবাদী হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরশেদ আলী চৌধুরী। তিনি জানান, মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ১৫ হেক্টর জমিতে এই আখের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। এটা খুবই লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এই চাষে ঝুঁকে যাচ্ছে। তারাও কৃষকদের এই চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, ধান-পানের পরই গেন্ডারি আখ চাষ এগিয়ে যাচ্ছে হরিণাকুন্ডু উপজেলায়।

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

তারেক মাহমুদ
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু বিভিন্ন এলাকায় গেন্ডারি আখের চাষ বেড়েছে। চলতি বছর উপজেলা বিভিন্ন এলাকার মাঠে প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে এই জাতের আখের চাষ হয়েছে। আগে এলাকার ব্যবসায়ীরা ফরিদপুর, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এই আখ ক্রয় করে এখানে এনে বিক্রি করতেন। এখন নিজেদের মাঠে হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। আর এই আখচাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। যে কারণে গত ৪ বছরে হরিণাকুন্ডু উপজেলার এই গেন্ডারি আখের চাষ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই উপজেলায় ছোট-বড় বাজারগুলোতে অসংখ্য গেন্ডারি আখের দোকান দেখা যায়। রাস্তার ধারে বসা এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে এই আখ। হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলা ধান চাষের পরই পান চাষের উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রচুর পরিমাণে পান চাষ হয়ে থাকে। ২০১২ সালের পর থেকে গেন্ডারি আখের চাষ শুরু হয়। এ বছর প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এর পাশাপাশি চিনিকলে সরবরাহের জন্য আরো ১৫ হেক্টর জমিতে অন্য জাতের আখের চাষ করা হয়েছে। সরজমিনে হরিণাকুন্ড উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ গেন্ডারি আখ দন্ডায়মান। বাঁশ দিয়ে টাল করে সোজা রাখা হয়েছে। একপ্রান্ত থেকে কাটা হচ্ছে, আরেক প্রান্তে আবার বড় হচ্ছে। এই কাটা আখ বাজারে বিক্রি করছেন। পারবতীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বারী মন্ডল জানান, তিনি গত দুই বছর গেন্ডারি আখের চাষ করছেন। তিনি জানান, ১৮ শতক জমিতে গেন্ডারি আখের চাষ করে এক মৌসুমে তিনি এক লাখ টাকা লাভ করেছেন। এ বছরও তিনি সমপরিমাণ জমিতে চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে ১২ হাজার টাকার বিক্রি করেছেন। আশা করছেন, এবারও লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে। হরিশপুর গ্রামের কৃষকরা জানান, ২০১২ সালের দিকে তাদের গ্রামের নাজিম উদ্দিন রাস্তার ধার থেকে আখ ক্রয় করে খাচ্ছিলেন। এই আখের চোখ বাড়িতে নিয়ে রোপণ করেন। এর থেকে ভালো আখ হয়। এর পরের বছর তিনি ফরিদপুর থেকে আখের বীজ নিয়ে আসেন। প্রথম বছর তিনি নিজে ১০ শতক জমিতে চাষ করেন। এরপর প্রতিবছর এই চাষ বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাদের মাঠের অর্ধেক জমিতে আখের চাষ। ওই গ্রামের কৃষক কলম আলী জানান, তার নিজের কোনো জমি নেই। ২৪ শতক জমি বর্গা নিয়ে এবার চাষ করেছেন। নিজেই দোকানে রেখে এই আখ বিক্রি করেন। প্রতিটি আখ ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়। আর যারা পাইকারি বিক্রি করেন তারা ৩০ থেকে ৪০ টাকা পান। একই গ্রামের ইতাহার আলী জানান, বাজারে ধানের মূল্য কমে গেছে। অন্য ফসল উৎপাদন করেও কৃষক খরচ উঠাতে পারছে না। সেখানে এক বিঘা জমিতে এক লাখ টাকা খরচ করলে ৪ লাখ টাকার গেন্ডারি আখ পাওয়া যায়। অল্প জমিতে অধিক লাভ হওয়ায় এলাকার কৃষকরা বর্তমানে এই চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এই গেন্ডারি আখের চাষ নিয়ে আশাবাদী হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরশেদ আলী চৌধুরী। তিনি জানান, মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ১৫ হেক্টর জমিতে এই আখের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। এটা খুবই লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এই চাষে ঝুঁকে যাচ্ছে। তারাও কৃষকদের এই চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, ধান-পানের পরই গেন্ডারি আখ চাষ এগিয়ে যাচ্ছে হরিণাকুন্ডু উপজেলায়।