দেশীয় ফল চালতা

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চালতা মাঝারি আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। উচ্চতায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পরিবার উরষষবহরধপবধব, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম উরষষবহরধ রহফরপধ। গাছের শাখা- প্রশাখা ছায়াঘন ছড়ানো এবং বেশ শোভাবর্ধক। এর জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ, ভারত, চীনের উষ্ণ আর্দ্র অঞ্চল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারে চালতা গাছ জন্মে। পাতা বৃহৎ আকারের, রং সবুজ, কিনারা করাতের মতো খাঁজ কাটা, শিরা-উপশিরা স্পষ্ট। গাছের কাঠ বেশ শক্তমানের, চামড়ার রং লালচে ধূসর ও মসৃণ। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি ও নিচু ভূমিসহ প্রায় সব ধরনের মাটিতে চালতা ভালো জন্মে। চালতা ফল হিসেবে ছোট-বড় সবার কাছে অতি পরিচিত। গাছের দীর্ঘ লম্বা আকারের সবুজ রঙের পাতার ফাঁকে সাদা রঙের ফুল ফোটে। ফুল হাল্কা সুগন্ধযুক্ত। ফুলের গঠন স্পষ্ট। ফুলের বাহিরের অংশে থাকে সবুজ বৃতি ৫টি, ভেতরের অংশে দুধসাদা রঙের কোমল বড় পাপড়ি ৫টি ও পাপড়ির মাঝখানে চাকতির মতো গোলাকার অংশে গর্ভদন্ডকে ঘিরে থাকে হলুদ রঙের অসংখ্য পুংকেশর। গর্ভদন্ডের মাঝখানে গর্ভকেশর অবস্থিত এবং তা তারার মতো সাজানো থাকে। ফুলের গড়নের এ বৈচিত্র্য রূপ ফুলকে করেছে আকর্ষণীয়। চালতা ফুলের অন্যরকম বৈশিষ্ট্য ফুল খুবই ক্ষণস্থায়ী ভোর বেলাতে ফুটা ফুলের পাপড়ি সন্ধ্যায় ঝরে পড়ে এবং ফুল ফোটার সময়ে পাপড়ির রং দুধসাদা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রং পরিবর্তন হয়ে পাপড়ি ঘিয়ে রং ধারণ করে এবং ঝরে পড়ে। তাই চালতা ফুলের প্রকৃত রূপ দেখতে হলে দুপুর হওয়ার আগেই দেখতে হবে। নিষিক্ত ফুলই চালতা ফলে পরিণত হয়। ফুল ফোটার মৌসুম বর্ষাকাল। চালতা ফল দেখতে প্রায় গোলাকার। এর ফল পাকার সময় শরৎ ও হেমন্ত। প্রায় প্রতি শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ও ফল ধরে। ফল স্বাদে টক মিষ্টি। পাকা ফলের রং হলদে সবুজ। ফল হতে তৈরি করা যায় আচার, চাটনি, জেলি ইত্যাদি এবং কাঁচা চালতা ডাল রান্নায় ব্যবহার হয়। চালতার ফল, বাকল ও পাতায় ভেষজ গুণাগুণ বিদ্যমান। ফলে বীজ হয়। পরিপক্ক বীজের রং বাদামি। বীজের মাধ্যমে চালতার বংশ বিস্তার করা হয়। তবে ইদানীং গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে খুব সহজে চালতার বংশ বিস্তার করা হচ্ছে। এতে কম সময়ের মাঝে চালতা ফল পাওয়া যায় এবং বড় টবেও চাষ করা যায়। আমাদের দেশে প্রায় বসতবাড়ি, পার্ক, উদ্যান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং বিক্ষিপ্তভাবেও ছোট বড় চালতা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। লেখা ও ছবি : মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী