ভূমিক্ষয় রোধ করে ঢোল কলমি

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের দেশের প্রকৃতি-পরিবেশ তথা গ্রামাঞ্চলের মানুষজনের কাছে ঢোল কলমি খুবই পরিচিত। রাস্তার ধার, বাড়ির পাশে, মাঠে-ময়দানে, জলাশয়ের ধারে, খাল-বিলের ধারে, হাওর-বাঁওড় ও পাহাড়ের ঢালে ঢোল কলমি ফুল চোখে পড়ে। ঢোল কলমি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পরিবার ঈড়হাড়ষাঁষধপবধব, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ওঢ়ড়সড়বধ পধৎহবধ। ইংরেজি নাম- চরহশ সড়ৎহরহম মষড়ৎু। আদিনিবাস সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার পেরু ও বলভিয়ার পাহাড়ি অঞ্চল। গাছ বেশ কষ্ট সহনশীল। তাই তো বন্যা, খরা, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ত পরিবেশসহ প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। তা ছাড়া গাছ দ্রম্নত বর্ধনশীল বলে অল্পদিনের মাঝে ঘন ঝোপে পরিণত হয়ে ওঠে। এ উদ্ভিদ আমাদের দেশের মানুষের কাছে এখনও আগাছা হিসেবেই পরিচিত। গাছের কান্ড ফাঁপা, উচ্চতা গড়ে ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। কান্ড দিয়ে কাগজ তৈরি হয়। ব্রাজিলের আদিবাসিরা এর কান্ড দিয়ে ধূমপান করতে পাইপ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। পাতা গাঢ় সবুজ, হৃদপিন্ডাকার, অগ্রভাগ সূচালো। এর গাছ ভূমিক্ষয় রোধ করে। তাই হাওড় অঞ্চলে বাড়ির পাশে, পুকুর পাড়ে রোপণ করা গেলে পানির স্রোত ও ঢেউ হতে মাটি ভাঙন রোধ করে। গ্রামাঞ্চলে ফসলি জমির আইলে চাষিরা জীবন্তবেড়া হিসেবে রোপণ করে থাকেন। ঢোল কলমির বীজ ও পাতায় বিষাক্ত উপাদান থাকে। তা ছাড়া গাছের পাতা তেঁতো স্বাদের ও কষযুক্ত বলে গরু ছাগল তা খায় না। ফলে ফসলি জমির বেড়া তৈরিতে ঢোল কলমির ব্যবহার অধিক লক্ষ্য করা যায়। তা ছাড়া জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অযত্ন-অবহেলা আর প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ঢোল কলমি গাছে সারাবছর ধরে দৃষ্টিনন্দন ফুল ফোটে। যা ছোট বড় সবার নজর কাড়ে। গ্রামাঞ্চলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ঢোল কলমির ফুল নিয়ে খেলা করতে দেখা যায়। বর্ষার শেষ ভাগ থেকে শরৎ, হেমন্ত ও শীতকালে গাছে অধিক পরিমাণে ফুল ফোটে। একটি মঞ্জরিতে একত্রে ৪ থেকে ৮টি ফুল ধরতে দেখা যায়। ফুল ফুটন্ত গাছে ফুলের মধু আহরণে বিভিন্ন রকম পতঙ্গের আগমন লক্ষ্য করা যায়। ফুল দেখতে ফানেল বা কলকির আকৃতির, গন্ধহীন, মাঝে পরাগ অবস্থিত। রং হালকা বেগুনি থেকে হালকা গোলাপি। পাপড়ি সংখ্যা পাঁচটি- যা নমনীয় কোমল। ঢোল কলমির রয়েছে কিছু ভেষজ গুণাগুণ। লেখা ও ছবি : মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী