ব্রাসেলস স্প্রাউট নতুন সবজি

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ
ব্রাসেলস স্প্রাউট শীতকালীন সবজি। শীত প্রধান দেশের খুব জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশে এখনো চাষ শুরু হয়নি। শেরে বাংলা কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোঃ সোলায়মান উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা মাঠে এবছরই প্রথম চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হয়েছে। তিনি ইংল্যান্ড থেকে বীজ এনে এমএস ফেলো এর ছাত্রী নওরিন অন্তরাকে দিয়ে গবেষণা করান। গবেষণা সফল হয়েছে। ড. হাসনাত বলেন, ব্রাসেলস স্প্রাউট শীতকালে সারাদেশে চাষ করা যাবে ও সবজির জগতে এক নতুন সবজি সংযোজন হবে। এদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, মাটি ও পরিবেশ সম্পূর্ণ এই সবজি চাষের উপযোগী। ব্রাসেলস স্প্রাউট খেতে বাঁধাকপির মত। বাঁধাকপি যেভাবে রান্না করে খাওয়া হয় এটিও সেভাবে খাওয়া যায়। দেখতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির মত। ক্রসিফেরি পরিবারের অন্তর্ভূক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে- ইৎধংংরপধ ঙষবৎধপবধ। সারা বিশ্বে ব্রাসেলস স্প্রাউট নামে পরিচিতি। প্রত্যেক পাতার গোড়ায় কিছুটা বাঁধাকপির মত একটি করে ছোট কুঁড়ি বা স্প্রাউট হয়। এই কুঁড়িটিই খাওয়া হয়। প্রতিটির কুঁড়ির ওজন ৫০-৭০ গ্রাম। আকার ৭-১০ সেমি। প্রতিটি গাছে ৪০-৬০টি কুঁড়ি বা স্প্রাউট হয়। কুঁড়ি আসার ১৫-২০ দিন পর সংগ্রহ করে খাওয়া হয়। সপ্তাহে ১ বার গাছ থেকে কুঁড়ি তোলা হয়। গাছের জীনকাল ৯০-১৫০ দিন। গাছের উচ্চতা জাতভেদে ২-৪ ফুট হয়। তাপমাত্রা যত কম থাকে কুঁড়ি তত বড় ও বেশি হয়। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে কুঁড়ি ছোট হয়। স্বাদে, গন্ধে অনন্য এক পুষ্টিকর সবজি এটি। এই সবজিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান গস্নুকোসিনোলেট এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি ও কে এর পরিমাণ অন্যান্য সবজির চেয়ে বেশি। পুষ্টিগুণ ও স্বাদ বিবেচনায় সারাদেশে এর খুব জনপ্রিয়তা রয়েছে। আশা করি, বাংলাদেশেও এটি জনপ্রিয়তা পাবে। পর্যায়ক্রমে স্প্রাউট সংগ্রহ করে খাওয়া যায় বলে নষ্ট হয় না। গাছেই সংরক্ষণ করা যায়। বীজতলা তৈরি আদর্শ বীজতলার পরিমাপ হচ্ছে দৈর্ঘ্য ১০ মিটার, প্রস্থ ১২৫ সেমি, দুই বীজতলার মাঝে ৫০ সেমি ফাঁকা রাখতে হয়। বীজতলা জমি থেকে ১০ সেমি উঁচু থাকে। মাটি নরম ঝুরঝুর করে সমতল করে তৈরি করতে হয়। বীজতলা পরিচর্যা বীজতলা শুকিয়ে গেলে হালকা সেচ দিতে হবে। বেশি ভেজা থাকলে শুকাতে হবে। পিঁপড়া আক্রমণ করলে সেভিন পাউডার দিতে হয়। আগাছা পরিস্কার করতে হবে। বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার সময় ছাউনি দিতে হয়। সূর্যের আলো লাগানোর জন্য ছাউনি খুলে দিতে হবে। জমি তৈরি ৪-৫টি আড়াআড়ি ভাবে জমি চাষ দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে, মাটি নরম করে জমি তৈরি করতে হয়। মই দিয়ে জমি সমতল করতে হবে। সার প্রয়োগ বাঁধাকপির চেয়ে কিছু বেশি দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে গোবর ৬ টন, ইউরিয়া ১৫০ কেজি, টিএসপি ৯০ কেজি ও এমপি ১২০ কেজি লাগে। জমি তৈরির সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি ও এমপি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া তিনভাগ করে এক ভাগ চারা রোপণের ৭ দিন পর ছিটিয়ে, ২য় ভাগ ২৫ দিন পর ও ৩য় ভাগ ৪০ দিন পর বন্ধনী পদ্ধতিতে গাছের চারদিকে দিতে হয়। চারা রোপণের সময় ও পদ্ধতি আগাম ভাদ্র-আশ্বিন। নাবি বা বিলম্বে রোপণের সময় কার্তিক-অগ্রহায়ণ। ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়। দূরত্ব সারি থেকে সারি ৬০ সেমি বা ২ ফুট, চারা থেকে চারা ৪৫ সেমি বা ১.৫ ফুট। বিকেলে চারা রোপণ করা উচিত। পরিচর্যা চারা লাগানোর পর পর সেচ দিতে হয়। এরপর মাটির রসের অবস্থা বুঝে সেচ দিতে হয়। মাটি চাপড়া হলে বা শক্ত হলে নরম করতে হবে। আগাছা হওয়ার সাথে সাথে আগাছা দমন করতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে দু'সারির মাঝখান থেকে মাটি তুলে সারি বরাবর আইলের মত করে দিলে স্প্রাউট বড় হয়। পানি জমলে নিকাশ করতে হয়। দ্রম্নত ফলন পেতে চাইলে চারা লাগানোর দুই মাস পর গাছে মাথা ভেঙে দিতে হবে। একে টপিং বলে। এতে স্প্রাউটের সংখ্যা কম হলেও স্প্রাউট বড় ও ওজন বেশি হয়। কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেশে কৃষক দিয়ে কৃষকের মাঠে ব্রাসেলস স্প্রাউট চাষ করা প্রয়োজন। চাষ করার সময় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান বের করতে হবে। ফলন ভালো হলে চাষ করার অনুমতি দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাত উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সারাদেশে গবেষণা করতে পারে।