কালের সাক্ষী শতবর্ষী এক বটবৃক্ষের গল্প

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী \হ বটগাছ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদের মাঝে অন্যতম। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় আকারের বটগাছ এখনো চোখে পড়ে। বটগাছ পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সমস্ত পাতা ঝরে যায়, বসন্তে গাছে নতুন পাতা গজায় এবং গ্রীষ্মে গাছে ফল ধরে। ফল ধরার মৌসুমে গাছের পাকা ফল খাওয়ার জন্য নানান প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে উলেস্নখযোগ্য হারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সুশীতল ছায়া দান, পশু-পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে বটগাছ বিশেষ ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া বিভিন্ন স্থানের হাটবাজার, দেবালয়, তীর্থস্থান, সাধু সন্নাসীর আশ্রমস্থল, ঈদগাহসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বটগাছের উপস্থিতি চোখে পড়ে। কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের বনগ্রাম-নন্দীপুর পুরাতন বাজারসংলগ্ন স্বর্গীয় শ্রী নিরোধ নারায়ণ চৌধুরীরবাড়ীর সামনে আজও সুস্থ-সবলভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দুই শতবর্ষী এ বটবৃক্ষটি। বটগাছটির তথ্য জানতে ওইস্থানে দেখা মিলে কেন্দ্রিক কালীপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু উত্তম কুমার সেনের (৫০) সঙ্গে। তিনি জানান, ওইস্থানের বটগাছটি সুপ্রাচীন- যার সঙ্গে চৌধুরীবাড়ীর পূর্বপুরুষদের অতীত স্মৃতি জড়িত। তা ছাড়া বর্তমানে এ বটগাছটির নিচে প্রতি বছর বার্ষিক কালীপূজার আয়োজন করা হয়। তিনি আরও জানান, আমি ছোট বেলা থেকে এ বটগাছটি এমনি আকার-আকৃতি দেখে আসছি, তা ছাড়া আমাদের পূর্বপুরুষদের মুখে এ গাছটি ব্যাপারে নানান গল্প শুনে আসছি। এ গাছটির নিচে এক সময় সাপ্তাহে দুদিন হাট বসতো। অনেক লোকের সমাগম ঘটতো, দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এখানে কেনাবেচা করতে আসতেন। যদিও বর্তমানে হাটটি অনিবার্য কারণে এখন আর জমে না। জানা যায়, ওই বটগাছটি চৌধুরীবাড়ীর কোনো একজন পূর্বপুরুষ বহু বছর আগে রোপণ করেছিলেন। তা ছাড়া ওই বটগাছটির স্মৃতি বর্ণনায় স্বর্গীয় শ্রী নিরোধ নারায়ণ চৌধুরী বাবু যখন বিশ্ববিখ্যাত লন্ডন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ট্রিনিটি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন তখন তিনি তার এন অটো-বায়োগ্রাফি অব আন নন ইন্ডিয়া নামক গ্রন্থ রচনা করেন বর্তমানে যাহার কিছু অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি মাস্টার্স কোর্সের অন্তর্ভুক্ত আছে, যাহার ব্যাখ্যায়ও তিনি বনগ্রামের চৌধুরীবাড়ীর এ বটগাছটির কথা উলেস্নখ করেছিলেন। আজও এ গাছটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ছুটে আসেন এবং গাছটিতে নানান জাতের চেনা-অচেনা পাখির কলতান শুনা যায়। সব মিলিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ বটগাছটি ওই এলাকার মানুষজনের কাছে ও চৌধুরী পরিবারের মানুষ জনের কাছে সুপ্রিয় অতীত স্মৃতি এবং বর্তমান প্রকৃতি পরিবেশের এক অনন্য উপাদান।