বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণের উপায়

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সমীরণ বিশ্বাস
বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা কর্তৃক আক্রান্ত ফল ও গাছ -যাযাদি
বেগুন শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে এটি প্রায় সারা বছর মেলে। কিন্তু সমস্যা একটাই বেগুনের পোকা। উপরে সুন্দর ফিটফাট বেগুন। কাটলে ভেতরে পোকা। এই সেই ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা- যা বেগুনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি কম বয়সী ডগাকে আক্রমণ করে। আক্রান্ত ডগা তাজাভাব হারাতে থাকে। আক্রান্ত ডগার আকার নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি আক্রান্ত বেগুন রান্না করলে এর স্বাদ হয় তেতো। মারাত্মক আক্রমণের ফলে পুরো গাছটিই মরে যেতে পারে। বেগুন গাছ লাগানোর পর থেকে বেগুন তোলা পর্যন্ত ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা গাছকে আক্রমণ করে। ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার বিভিন্ন স্থানীয় নাম রয়েছে। যেমন- আলমারা, ডগাভাঙা এবং ফল ছিদ্রকারী পোকা। পূর্ণবয়স্ক পোকা একটি মথ। মথগুলো শেষরাতে ওড়াউড়ি করে। তাই এদের সহজে দেখতে পারবেন না। মথ কম বয়সী ডগার উপরে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কিড়া বের হয়ে ডগায় ঘুরে বেড়ায়। কিড়া ডগা ও ফলের ভেতরে ছিদ্র করে ঢোকে খাবার খায়। এ কারণেই ডগার তাজাভাব হারিয়ে যায়। কিড়া বড় হয়ে ডগা ও ফল ছিদ্র করে বের হয়ে আসে। এরপর এরা মাটিতে চলে যায় এবং শুকনো, ঝরাপাতার সঙ্গে কোকুন তৈরি করে। এই কোকুনের ভেতর থেকে পূর্ণাঙ্গ মথ বের হয়ে আসে। ডিম দেওয়ার জন্য মেয়ে মথ পুরুষ মথের সঙ্গে মিলিত হয়। একটি মথ সারা জীবনে ২৫০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যেমন-১. মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করুন। আজকাল বিটি বেগুন নামে এক ধরনের জাত বেরিয়েছে- যা এই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। বীজ কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, বীজে যেন কোনো রোগ বা ক্ষতিকর কিছু না থাকে। দিনে অন্তত দু'বার ক্ষেত পরিদর্শন করুন। কারণ এটি খুব দ্রম্নত বদলে যেতে পারে। গাছের নিচের দিকের অপেক্ষাকৃত পুরনো পাতাগুলো সরিয়ে ফেলুন। ঝরাপাতাগুলো সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন। যাতে পোকা কোকুন তৈরি করতে না পারে। কোনো আক্রান্ত গাছ আছে কি না, তা দেখার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য করুন, কোনো ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে কি না। ধারালো ছুরি দিয়ে আক্রান্ত ডগা, ফুল বা ফল কেটে ফেলুন। সেগুলো সরিয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলুন। ক্ষেতের ধারে-কাছে আক্রান্ত গাছের অংশগুলো ফেলবেন না। এতে নতুন মথ জন্ম নিতে পারে। ক্ষেতের চারপাশে জালের বেড়া দিয়ে মথের প্রবেশ ঠেকাতে পারেন। অর্ধসেমি ছিদ্রযুক্ত এবং ৩ মিটার উঁচু জাল ব্যবহার করুন। মথকে দূরে রাখতে জালটির ছিদ্র ছোট হতে হবে। মথ ৩ মিটারের উপরে উড়তে পারে না। সাদা নাইলনের জাল ব্যবহার করুন। সাদা জাল ফসলের উপরে ছায়া দেয় না। এতে পাখিরাও বেগুন গাছের ফুল এবং কচি ফল নষ্ট করতে পারে না। সূর্য ওঠার আগে খুব সকালে মথগুলো বেগুন গাছের কচি ডগায় উড়ে উড়ে ডিম পাড়ে। খুব সকালে উড়ন্ত মথগুলো দেখে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলুন। ক্ষেতে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন পোকার বিভিন্ন গন্ধ বা ফেরোমন থাকে। স্থানীয় কৃষি ডিলারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের পোকা ধরার ফাঁদ কিনতে পারেন। নিশ্চিত হয়ে নিন যে, মথ মারার জন্য আপনি সঠিক ফাঁদটিই কিনেছেন কি না। ডিলারকে বলুন, আপনি বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা মারার ফাঁদ কিনতে চান। ফাঁদের নিচের দিকে মথেরা ডিটারজেন্ট পানিতে ধরা পড়ে। ফেরোমন ফাঁদ ১০-১২ মিটার দূরে-দূরে পাতুন। প্রতিদিন ফেরোমন ফাঁদ পরখ করুন। দরকার হলে ডিটারজেন্ট পানি রিফিল ও পরিবর্তন করুন। স্থাপনের ৪০ দিন পরপর ফেরোমন টোপ বদলান।