মসলার নাম ফিরিঙ্গি

বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোছা. শামসুন্নাহার মাহমুদার নেতৃত্বে আটজন কৃষিবিজ্ঞানী ছয় বছরের গবেষণায় বারি ফিরিঙ্গি-১ জাত উদ্ভাবন করেছেন। ফিরিঙ্গি বীজ অনেকটা মেথির মতো। কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন- গাছের বৃদ্ধি এবং ফল বা পডের আকৃতির কারণে মেথির সঙ্গে ফিরিঙ্গির পার্থক্য রয়েছে...

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

কৃষি ও সম্ভাবনা ডেস্ক
মসলাটির নাম ফিরিঙ্গি। বহুমূত্র রোগ নিয়ন্ত্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর, হজম শক্তি ও রুচি বর্ধনে কার্যকরী এ মসলাটি বিদেশি ফসল হলেও দেশেই এর নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। ফেবেসি গোত্রভুক্ত এ মসলার নির্ধারিত কোনো জাতই এতদিন দেশে ছিল না। দীর্ঘ ছয় বছর গবেষণা করে মসলাটির একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) একদল বিজ্ঞানী। উদ্ভাবিত জাতের নাম দেওয়া হয়েছে 'বারি ফিরিঙ্গি-১'। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ বোর্ড জাতটি চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কৃষকরা ফেবেসি গোত্রীয় ফিরিঙ্গির মিশ্রণ চাষাবাদ করছেন- যা রান্নায় পাঁচফোড়নের একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয় বলেই ফিরিঙ্গির এ জাতটি উদ্ভাবন করলেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোছা. শামসুন্নাহার মাহমুদার নেতৃত্বে আটজন কৃষিবিজ্ঞানী ছয় বছরের গবেষণায় বারি ফিরিঙ্গি-১ জাত উদ্ভাবন করেছেন। ফিরিঙ্গি বীজ অনেকটা মেথির মতো। কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য- যেমন গাছের বৃদ্ধি এবং ফল বা পডের আকৃতির কারণে মেথির সঙ্গে ফিরিঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। গবেষক দলের প্রধান শাসুন্নাহার মাহমুদা বলেন, ফিরিঙ্গি গাছের পাতা এবং ফল মেথির মতোই ব্যবহৃত হয়। তবে আমাদের দেশে ফিরিঙ্গির ফল বা পডসহ বীজ পাঁচফোড়নের মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতবর্ষে এটি 'কাচুরি মেথি' নামে পরিচিত এবং গাছটির পাতা শুকিয়ে বাজারজাতের জন্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে এ ফসলটি এখনও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হয় না। তিনি বলেন, ফিরিঙ্গি বীজ নানা প্রকার তরকারি, আচার, চাটনি ইত্যাদি স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে বেশ উপযোগী। ফিরিঙ্গির যথেষ্ট ঔষধি গুণ রয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমশক্তি ও রুচি বৃদ্ধি করে। এ জাতের গাছের উচ্চতা ২২-৩৫ সেন্টিমিটার। প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৫-৬টি। প্রতি গাছে পডের (ফলের) সংখ্যা ৩৬০-৪৬০টি। প্রতিটি পডে ৮-১০টি বীজ থাকে। বীজগুলো শুষ্ক ও হলুদাভ বাদামি বর্ণের। এ জাতে রোগবালাই নেই বললেই চলে। প্রতি এক হাজার বীজের ওজন ১.১-১.২ গ্রাম। জাতটির জীবনকাল ৯০-১০০ দিন। প্রতি হেক্টরে পডের উৎপাদন ১.৬-১.৯ টন এবং বীজের ফলন ০.৪-০.৫ টন।