মনিরামপুরে ঔষধি গুণসম্পন্ন চিয়া চাষ

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

জি এম ফারুক আলম, মনিরামপুর (যশোর)
যশোরের মনিরামপুরে 'চিয়া' নামের নতুন ফসলের চাষ শুরু হয়েছে। উদ্ভিদ জাতীয় চিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম-ঝধারধ যরংঢ়ধহরপধ। অতিশয় পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন চিয়া খধনরধঃধব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। চিয়া শব্দের অর্থ শক্তি। এটি দেখতে অনেকটা তিল, মসলা জাতীয় রবি ফসলের মতো। নতুন এ ফসলের চাষ করেছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ভোজগাতি গ্রামের হাফিজুর রহমান। তার বড় ভাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের এনে দেয়া বীজ দিয়েই ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি এ ফসলের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস আগামী মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। প্রফেসর ড. মশিউর রহমান জানান, চিয়া বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বন্ধুদের কাছে জানতে পেরে তিনি চিয়ার ওপর গবেষণায় আগ্রহী হন। ২০১৬ সালে বন্ধুদের মাধ্যমে কানাডা থেকে বীজ এনে দেশের জলবায়ু ও মাটিতে চাষের জন্য গবেষণা করে ২০১৭ সালে তিনি সফলতা পান। ওই বছরই তিনি গ্রামের বাড়িতে তার ভাই হাফিজুর রহমানকে দিয়ে চাষ শুরু করান। এ ফসলের নাম এখনো কৃষি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানেন না। এর দামও অনেক বেশি। এটি সাধারণত কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, আমেরিকা, চিলি, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চাষ হয়। এটি দেশের নিন্ম বা মধ্যে বিত্তদের নাগালের বাইরে। বিদেশ থেকে আমদানি করে ঢাকার অভিজাত শপিংমলে কেজি প্রতি ২৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। চিয়ার বীজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেভাবে ইসপগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে খেতে হয়, সেইভাবে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এক ধরনের জেলি বের হয়। এই জেলিই খেতে হয়। এ ছাড়া রুটি, পুডিং, কেক, পাউরুটির সঙ্গে মিক্সিং করে খাওয়া যায়। চিয়া বীজে ১৫-২০% প্রোটিন, ১৮-৩০% চর্বি, ৪১% ডায়েটারি ফাইবার, ১৮-৩০% অ্যাশ এবং ৯০-৯৩% শুষ্ক পদার্থ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪০৭ গ্রাম পটাশিয়াম, ৩৩৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, ৮৬০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৫৫.২ মাইক্রোগ্রাম সেলেনিয়াম, ৭.৭২ মাইক্রোগ্রাম আয়রন, ২.৭২ মাইক্রোগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ ও ১৮ গ্রাম ওমেগা-৩-ফ্যাটি এসিড। এই এসিড শরীরের ট্রাইগিস্নসারিন বাড়ায় এবং কোলেস্টরল কমায়। বিভিন্ন ফল ও সবজির তুলনায় চিয়া বীজে বেশি ফাইবার থাকায় কোষ্ঠ্যকাঠিন্য নিরাময়ে খুবই উপযোগী। পেটের রোগ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোসহ ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এটি নিয়মিত সেবনে ওজন কমায়। সরেজমিন চিয়া ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, এটি অনেকটা তিল জাতীয় উদ্ভিদের মতো। ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার এ উদ্ভিদের প্রায় ১৩ ইঞ্চি ঊর্ধ্বাংশ বীজের ভারে নুইয়ে পড়ে। কিছুদিনে মধ্যে এটি কাটা হবে। হাফিজুর রহমান জানান, জমি প্রস্তুত করে কার্তিক-অগ্রায়ণ মাসে বীজ ছিটিয়ে বপন করা হয়। বিঘা প্রতি ২০০ গ্রাম বীজ লাগে। তিল মসলা জাতীয় ফসল মতো রোদে শুকিয়ে মাড়িয়ে বীজ ছাড়ানোর মতো চিয়া বীজ বের করতে হয়। এটিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম বলে কীটনাশকের ব্যবহার করা লাগে না। দুই/একবার সেচ দিলেই হয়। তবে জমি প্রস্তুতির আগে এবং বীজবপনের ১৫/২০ দিন পরে সামান্য ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি প্রয়োগ করতে হয়। বীজ বের হলেই এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন চিয়া আগামী রবি মৌসুমে প্রতি ইউনিয়নে চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে।