শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফসলের সাদামাছি দমনে জৈব নির্যাসের ব্যবহার

কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ফসলে সাদামাছি দমনে নিমতেল ও নিমের নির্যাসের পাশাপাশি জৈব ওষুধের ওপর ভরসা রাখতে বলছেন ভারতের কৃষি বিশেষজ্ঞরা। বাজার চলতি যে কোনো কীটনাশক কিনে হঠাৎ করে প্রয়োগ করলে ফল উল্টো হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। সে ক্ষেত্রে ফলন মার খাওয়া ছাড়াও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে গাছের। ফলে এ বিষয়ে সজাগ থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মত কৃষি বিজ্ঞানীদের। ভারতের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. পার্থপ্রতিম ধরের মন্তব্য, সাদামাছি মারতে গিয়ে তারা দেখেছেন, গাছে থাকা অনেক বন্ধুপোকা এদের সঙ্গে লড়াই করছে। অতএব, বন্ধুপোকা বাঁচিয়ে রেখেই এই সাদামাছি নিধনের পথ খুঁজতে হবে। আপতকালীন ব্যবস্থা হিসেবে তারা নিমতেল, জৈব ওষুধ ও রাসায়নিক ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। তাতে দেখা গিয়েছে,বন বেগুন ও এক ধরনের ফুলগাছের নির্যাস (বাংলায় যাকে চিত্রা বলে) থেকে তৈরি ওষুধ প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছেন। ওই ওষুধের সঙ্গে সিলিকন জাতীয় আঠা মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। প্রয়োগের মাত্রা এক লিটার জলে ১ মিলি।

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চাকদহ ও হরিণঘাটা বস্নকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সাদামাছির মারাত্মক দাপট দেখা দিয়েছে। এর আক্রমণে প্রাথমিকভাবে নারকেল গাছের পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে। পরে আক্রান্ত পাতা কালো হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত গাছের ফল আকারে ছোট হয়ে যাচ্ছে। ডাবের ভেতরে জলের পরিমাণও কম হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন নদীয়া জেলার উপকৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায় চৌধুরী।

তিনি বলেন, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্ডৌরি খামারেও নারকেল বাগানে এই সাদামাছির আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীরা মাছিটিকে শনাক্ত করেছেন। এদের বৈজ্ঞানিক নাম রিগো স্পাইরালিং হোয়াইট ফ্লাই। এরা বিভিন্ন সব্জিতেও ছড়িয়ে পড়ছে। সঠিক পদ্ধতিতে এদের যাতে দমন করা যায়, তার উপায় খুঁজে বের করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

চাকদহ বস্নকের সহকৃষি অধিকর্তা ড. স্বপনকুমার সিংহ জানিয়েছেন, সগুনা পঞ্চায়েতের ঘোড়াগাছা গ্রাম ও তার আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে রবিয়াল হোসেন, ফজর আলি মন্ডল, সরিফুল মন্ডলদের মতো কৃষকরা তাকে জানিয়েছেন, সাদামাছির আক্রমণ তাদের নারকেল বাগান ছাড়াও ঝিঙে, পটল, লাউ, বেগুন, পেয়ারার জমিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীরা এসে এই মাছির দাপট সরজমিনে দেখে গেছেন।

রানাঘাট মহকুমার সহকৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু) শুভঙ্কর বসাক ও হরিণঘাটা বস্নকসহ কৃষি অধিকর্তা ড. প্রসূন ভৌমিক বলেন, এই সাদা মাছি নারকেল গাছের ভেতরের পাতায় আক্রমণ করে। জেলার সহকৃষি অধিকর্তা (শস্য সুরক্ষা) ড. প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সাদামাছির আক্রমণ চাকদহ ও হরিণঘাটা এলাকায় দেখা দিয়েছে। এই মাছি নিয়ন্ত্রণে ওষুধগুলো এখনও পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। তবে ভালো কাজ হচ্ছে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় নারিকেল গবেষণা ও পরিকল্পনা পরিষদের অধ্যাপক ড. দীপক ঘোষ জানিয়েছেন, দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই সাদামাছির আক্রমণ আগেই দেখা গেছে। এ রাজ্যে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুরে এর আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।

নদীয়ার হরিণঘাটা বস্নকের নগরউখরা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দেউলি গ্রাম থেকে চাষি অশোক ঘোষ তার বাঁধাকপি ও ফুলকপির জমিতে সাদামাছির আক্রমণের কথা জানিয়েছেন। তিনি আক্রান্ত ফসলও নিয়ে এসেছিলেন। তবে চাষিরা যেন মোটেই নিজে থেকে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার না করেন। তাহলে ফল উল্টো হতে পারে। গাছ ধুইয়ে স্প্রে করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86846 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1