শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মনিরামপুর ও চৌগাছা সংবাদদাতা, যশোর
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যশোরের চৌগাছা উপজেলার বরাবরই নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে বেশ পারদর্শী। নতুন উদ্ভাবনে তারা কখনও সফল হন আবার কখনও ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তারপরও নতুন ফসল চাষের নেশায় কৃষক কখনও হাল ছাড়েন না। চলতি শীত মৌসুমে ইছাপুর গ্রামের এক চাষি পরীক্ষামূলক লাল বাঁধাকপির চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

চৌগাছা পৌর এলাকার ইছাপুর গ্রামের আবু বকর আলীর ছেলে কৃষক বাতেন আলী ওরফে আকরাম হোসেন। বাতেন আলী বছরের বারো মাসই কোনো না কোনো সবজি চাষ করে থাকেন। তবে শীত মৌসুম এলে তিনি হরেক রকম সবজি চাষে ব্যাপক ব্যস্ত সময় পার করেন। চলতি শীত মৌসুমে তিনি শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষের পাশাপাশি নতুন দুটি কপির চাষ করেছেন। একটি হচ্ছে ব্রো-কপি অপরটি হচ্ছে রেড কেবল। স্থানীয়রা এই রেড কেবল কপিকে লাল বাঁধাকপি হিসেবে চেনে।

কৃষক বাতেন বলেন, জন্ম থেকেই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাই কোন মাটিতে কি ধরনের ফসল বেশি ফলন হয় সেটি তার বেশ জানা। পরীক্ষামূলকভাবে এই কপি দেশি কপির সঙ্গে চাষ করে সাফল্যও পেয়ে যান তিনি। দেশি বাঁধাকপির ন্যায় লাল বাঁধাকপির চাষ করতে হয়। এই চাষের জন্য নতুন কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। প্রতি পিস কপি বাজারে ২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তিনি।

এ অঞ্চলে রেড কেবল কপির চাষ কম হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি কম। যার কারণে স্থানীয়দের এই কপির প্রতি আগ্রহ কম। তবে দেশের অন্য সব জেলাতে লাল বাঁধাকপির ব্যাপক চাহিদা বলে তিনি জানান।

এ বছরই প্রথম লাল বাঁধাকপির চাষ করাতে চাষে কিছুটা ত্রম্নটি ছিল, সে কারণে কপির সাইজ কিছুটা ছোট হয়ে যায়। ভালো ফলন হলে এক একটি কপি ১ থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজন হয় বলে তিনি জানান। তার নতুন চাষ পদ্ধতি দেখে স্থানীয় চাষিরা বেশ উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আগামী শীত মৌসুমে ইছাপুর মাঠে রেড কেবল কপির চাষ ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করছেন।

কৃষক বাতেন আলী প্রায় দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছেন দেশি ফুলকপি। এর পাশাপাশি নতুন জাতের একটি কপির চাষ করেছেন। যার নাম হচ্ছে ব্রো-কপি। দেখতে ফুলকপির ন্যায় হলেও এর রং সম্পূর্ণ সবুজ, খেতে অত্যন্ত সুস্বাধু। ব্রো-কপির চাষেও এই কৃষক সাফল্য পেয়েছেন। তিনি আগামী মৌসুমে নতুন জাতের দুটি কপির চাষ আরও বৃদ্ধি করবেন বলে জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইচ উদ্দিন জানান, চৌগাছার মাটি সব ধরনের সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। কৃষক নতুন নতুন চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো দিক।

মনিরামপুর সংবাদদাতা জি এম ফারুক জানান, যশোরের মনিরামপুর এ লাল বাঁধাকপি চাষ করে লালে লাল হচ্ছেন কৃষক খলিলুর রহমান। তিনি বিঘা প্রতি মাত্র ২৫ হাজার খরচ করে এখন পর্যন্ত খরচ পুষিয়ে নিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকার লাল বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন। অনেক কষ্টে ভারত থেকে বীজ এনে তিনি প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমিতে লাল বাঁধাকপির চাষ শুরু করেন। এ উপজেলায় খলিলই একমাত্র কৃষক যিনি এবারই প্রথম এ জাতের কপি চাষ করেছেন। স্বাদে ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় বাজারে রয়েছে এ কপির আকাশ চুম্বি চাহিদা। স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ কপি কিনছেন। খলিল পৌর এলাকার তাহেরপুর গ্রামের সৈয়দ আহম্মেদের ছেলে। তিনি বরাবরই নতুন জাত, বাজারে চাহিদাসম্পন্ন সবজি ও ফলের চাষ করেন। তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে তরমুজ, ব্রোকলি, মেটে আলু, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করছেন।

খলিল জানান, অনেক কষ্টে ভারত থেকে আড়াইশ গ্রাম বীজ ১৯ হাজার টাকায় কিনে এনে জমিতে চারা তৈরি করে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ২০-২২ ইঞ্চি দূরত্বে কার্তিক মাসের শেষের দিকে চারা রোপণ করে। চারা রোপণের ৬০ দিন পর তা খাওয়ার উপযোগী হয়। বিঘায় প্রায় ৭ হাজার লাল বাঁধাকপি হয়েছে। যার প্রতিটির ওজন প্রায় ২ কেজি। প্রতি কেজি ২৬ থেকে ৩০ টাকা দরে প্রতিটি গড়ে প্রায় ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ক্ষেতে এখন কপি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে নতুন করে একটি জমিতে ব্রোকলি চাষ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, উপজেলায় খলিল এবারই প্রথম লাল বাঁধাকপির চাষ করেছেন। ভিটামিন সি ও এ সমৃদ্ধ লাল বাঁধাকপির বাজারে চাহিদা থাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<87765 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1