শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হোগলা পাতার দড়িতে ২০ হাজার নারীর ভাগ্য বদল

জুয়েল সাহা বিকাশ
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ভোলার গ্রামের নারীরা হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি করছেন দড়ি। সেই দড়ি কিনে নিয়ে বিক্রি করছেন ঢাকার পাইকারি বাজারে। ঢাকায় ওই দড়ি দিয়ে বিভিন্ন রকম শো-পিস ও আসবাবপত্র তৈরি করে চীন, জাপান, কানাডাসহ ৭৪টি দেশে বিক্রি করছে। এ নারীরা দড়ি বিক্রি করে সংসারে অর্থের জোগান দিচ্ছেন। দড়ি বুনে অনেক নারী ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। তাই বাড়ছে দিন দিন দড়ির কারিগর নারীর সংখ্যা। তবে ভোলার আড়তদাররা দড়ি দিয়ে ভোলায় বসে আসবাবপত্র তৈরি করার জন্য সরকারের সহযোগিতার দাবি জানান। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারা নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

নারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ভোলা সদরের চর সামাইয়া, চর ছিপলী, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, জয়নগর, বালিয়া, বাপ্তা, ইলিশা, রতনপুর, শিবপুর, রাজাপুর, তুলাতুলিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার নারী বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে পুরুষদের দিয়ে হোগলা পাতা সংগ্রহ করছেন। সেই হোগলা পাতা রোদে শুকিয়ে চিকন করে চিঁড়ে হাতে পাকিয়ে সুতলি তৈরি করছেন। সেই সুতলি দিয়ে বানাচ্ছেন দড়ি। সেই দড়ি বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি দড়ি তৈরি করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেন।

\হভোলা সদরের চর সামাইয়া ইউনিয়নের চর ছিপলী গ্রামের তাসনুর বেগম জানান, তার স্বামী রিকশাচালক। অভাব দূর করার জন্য তিনি প্রায় ২০ বছর আগে দড়ি তৈরি করা শুরু করেন। স্বামীর পাশাপাশি তিনিও সংসারের খরচ জোগান। দড়ি তৈরির টাকা দিয়ে নতুন ঘর করেছেন। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে বরিশাল থেকে পড়াশোনা করছেন।

একই গ্রামের ইয়ানুর বেগম জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে তার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অনেক দিন ঘরে বসে ছিলেন। স্বামীর আয় না থাকায় অনেক কষ্ট হতো। মানবেতর জীবনযাপন করতেন। পরে তাদের গ্রামের জাকির হোসেন তাকে দড়ি তৈরি করতে উৎসাহ দেন। এরপর তিনি স্বামীকে চিকিৎসা করে সুস্থ করেন। বর্তমানে তার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন ও তিনি দড়ি তৈরি করছেন। তাদের সংসারে কোনো অভাব নেই।

নবম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা ও মিম জানান, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তারা গ্রামের নারীদের সঙ্গে দড়ি তৈরি করেন। তা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে তাদের পড়াশোনা ও হাতখরচ জোগান। এমনকি প্রতি মাসে কিছু টাকা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন।

বিবি মরিয়ম ও জান্নাত বেগম জানান, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি এসে দেখেন নারীরা হোগলা পাতার দড়ি তৈরি করে আয় করছেন। তা দেখে তারাও এখন দড়ি তৈরি করছেন। নিজেদের কোনো খরচের জন্য স্বামীর কাছে চাইতে হচ্ছে না। রত্না আক্তার, আতিকা বেগমসহ একাধিক নারী জানান, প্রতিদিন ১ হাজার হাত দড়ি পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ১৬০ টাকা। এতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা। সংসারের কাজের ফাঁকে একজন নারী প্রতি মাসে দড়ি তৈরি করে ৪-৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। তবে তাদের দাবি, টাকা বেশি পেলে বেশি বেশি দড়ি বানাতে উৎসাহিত হতেন।

পাইকারি ক্রেতা মো. জাফর ও জামাল হোসেন জানান, নারীদের কাছ থেকে দড়ি কিনে তারা ভোলা সদরের খেয়াঘাট এলাকার বিডি ক্রিয়েশন নামে একটি পাইকারি আড়তে বিক্রি করেন। সেখান থেকে নিয়ে ঢাকায় ওই দড়ি দিয়ে সোফা, শো-পিস, চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে। এরপর তা ৭৪টি দেশে রপ্তানি করা হয়। তবে ভোলায় এসব আসবাবপত্র তৈরি করতে পারলে গ্রামের নারী ও তারা লাভবান হতেন।

ভোলা উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক মো. আরিফ হোসেন জানান, নারীদের এ শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। ভোলার নারীরাই যাতে দড়ি দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র বিদেশে রপ্তানি করতে পারে, সে জন্য দ্রম্নত কাজ শুরু করবেন। তাহলে ভোলার নারীরা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<87766 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1