বিদেশে যাচ্ছে বড়াইগ্রামের খেজুরের গুড়

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আশরাফুল ইসলাম, বড়াইগ্রাম (নাটোর)
খেজুরের গুড় একটি সুস্বাধু খাবার। ক্রমাগত ভেজাল মিশ্রণের ফলে এখন সেই খাবারে আস্থা হরিয়েছে ক্রেতা সাধারণ। তবে সেই আস্থা ফিরাতে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা বাহিমালী গ্রামে উৎপাদন হচ্ছে সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত খেজুর গুড়। এখানে উৎপাদিত গুড় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইংল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। আর ভেজাল মুক্ত এই গুড় তৈরি ও বাজারে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছেন আলেয়া ফার্ম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সারাদেশের ন্যায় অত্র এলাকায় শীত এলেই গ্রামগঞ্জে খেজুর রসের নাস্তা, পিঠা-পায়েসের ধুম পড়ে যায়। রাতের বেলায় গাছ থেকে রস নামিয়ে এই এলাকার গ্রামগুলোতে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ পরিচর্যার ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গাছিদের রস, গুড়, সংগ্রহ কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে তা চৈত্র মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। বিগত কয়েক বছর ধরে রসের পরিমাণ কমে গেছে। একই সঙ্গে রস থেকে গুড় তৈরির জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় গুড়ের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা গুরের সঙ্গে চিনি, সুগার মিলের চিটাগুড়সহ নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর ক্যামিকেল মিশাতে থাকে। এতে করে হারায় খেজুর গুড়ের স্বাদ, বাড়তে থাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এতেই কমতে থাকে খেজুর গুড়ের ক্রেতা। ক্রেতাদের আসল গুড়ের স্বাদ দিতে গত পাঁচবছর ধরে আলেয়া ফার্ম হাউস নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সরাসরি রসচাষিদের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ক্যামিকেল এবং অন্যান্য ভেজালমুক্ত খেজুর গুড় তৈরি করে দেশের অভ্যন্তরে 'রুট খেজুর গুড়' নামে বাজারজাত করে আসছেন। গুড়ের মান নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে তারা 'বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ' (বিসিএসআইআর) থেকে সনদ এবং বিএসটিআই থেকে টেস্ট সনদ নিয়েছেন। এ বছর তারা ইংল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করেছেন। আলেয়া ফার্ম হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক বলেন, আমরা আমাদের মনোনীত চাষিদের কাছে থেকে আমাদের সরবরাহকৃত কাঠামো (ভৎধসব) এর মাধ্যমে তৈরিকৃত পাটালি গুড় সংগ্রহ করি। এই গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য নিরাপদ পাত্র এবং খেজুর গাছে বাদুড়সহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে পর্দা সরবরাহ করে থাকি। পরে সংগ্রহীত গুড় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্যাকেজিং রুমে মোড়কজাত করে বাজারজাত করি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের মাঠ কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করে থাকেন। এক কথায়, মা যেমন পরিবারের নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুতে ভূমিকা রাখে ঠিক তেমনি আমরা গুণগত মানসম্পন্ন খেজুরের গুড় তৈরি করে বাজারজাত করে থাকি। পাটালী, গুড়ের পাওডার ও ঝোলা গুড়, আমরা এই তিন প্রকার গুড় বাজারজাত করছি। তিনি আরও বলেন, আমরা কানাডার ম্যাপল সিরাপ উৎপাদন ও প্রস্তুতপ্রণালির মতো বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি স্থাপন করে খেজুর গুড় ও খেজুর গুড় হতে অন্যান্য পণ্য তৈরি করতে চাই। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ খাবার দেশের মানুষের কাছে ঘরে ঘরে পৌঁছাতে চাই। নাটোর একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল এখান থেকে গুণগত মানসম্পন্ন খেজুর গুড় তৈরি করে এবং ব্রান্ডিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশ ও বিশ্ববাজারে পৌঁছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।