বিনামূল্যে ভিটামিন, মিনারেল এবং ভ্যাকসিন পাবেন খামারিরা

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে কালো সোনা

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সামছুল আলম ও ইয়াসমিন আক্তার
দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে স্থানীয় মহিষের জাত উন্নয়ন করে অধিক উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন মহিষের জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৬২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে একদিকে যেমন দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হবে অন্যদিকে মহিষের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে খামারিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন হবে। গবেষকরা জানান, মহিষের দুধ উৎপাদন এবং দুধের গুণগতমানের কারণে এটি কালো সোনা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু মহিষ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। দুধ উৎপাদনে মহিষের অবদান ভারতে ৫৩%, পাকিস্তানে ৬৭%, নেপালে ৭১% এবং বাংলাদেশে ৪%। সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যমান ৩টি মহিষ খামার আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ১৬০টি উন্নত জাতের মহিষ ভারত থেকে ক্রয় করা হবে। উন্নত জাতের মহিষ উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের মধ্যে ইন্টার সিমেটিং কর্মসূচির অবকাঠামো তৈরি করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ভেটেরিনারি ডিস্পেন্সারি এবং বিভিন্ন খামার যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে খামারি ও উদ্যোক্তাসহ সর্বমোট ৬ হাজার জনের প্রশিক্ষণ এবং ৪টি কর্মশালার কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে খামারি পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট সংকর জাতের উন্নত মহিষ পাওয়া যাবে এবং দেশীয় বাজারে ভোক্তাদের মাঝে হৃষ্টপুষ্টকরণ মহিষ, মহিষের দুধ এবং মহিষের দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যের চাহিদা পূরণ হবে। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি দেশের ৮টি বিভাগের মহিষ ঘন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত উপকূলবর্তী এলাকাসহ ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। ফলে সেই সব এলাকার কৃষকরা মহিষ পালনে উপকৃত হবে। তারা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হবে, কৃত্রিম প্রজননের জন্য মানসম্পন্ন উপকরণ, বীজ বা সিমেনের প্রাপ্যতা বাড়বে, অধিক দুধ ও মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জিত হবে। ফলে মহিষ প্রবণ এলাকার কৃষকদের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশিদাররাও এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বারা লাভবান হবে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হবে। এর ফলে বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তরাও প্রাণিসম্পদ সাবসেক্টরে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত হবে এবং দেশে কৃষিনির্ভর শিল্পের বিকাশ লাভের দ্বারা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন ঘুরে জানতে পারে যে, বাংলাদেশে মহিষপ্রবণ এলাকায় ৩৬০ জন কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর প্রশিক্ষণ, কৃত্রিম প্রজননের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যাদি রি-এজেন্ট ক্রয়, মহিষ ঘন এলাকায় মহিষ পালনকারী কৃষকদের কৃমিনাশক, ভিটামিন-মিনারেল এবং ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। উন্নত জাতের ১৬০টি মুরাহ জাতের মহিষ (১৫০টি গাভী মহিষ ও ১০টি প্রজনন ষাঁড়) ভারত থেকে ক্রয় করা হবে এবং স্থানীয়ভাবে উন্নত জাতের ২০০টি ষাঁড় মহিষ বাছুর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রয় করা হবে। প্রকল্পটির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর অ্যান্ড মনিটরিং অফিসার ডা. মো. মুহসীন তরফদার রাজু বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে নারী, শিশু ও পুষ্টিহীন জনগোষ্ঠী সরাসরি উপকৃত হবে। আধুনিক ও মানসম্পন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশে মহিষ থেকে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়াও ভূমিহীন, ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক খামারিদের আয়ের উৎস, পুষ্টি সরবরাহ এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে মহিষ পালন সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম খামারি পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব হবে। ফলে মহিষের উৎপাদন বাড়বে, খামারিদের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবে। প্রজননের জন্য মানসম্পন্ন উপকরণ, বীজ বা সিমেনের প্রাপ্যতা বাড়বে, দুধ ও মাংসের উৎপাদনের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন হবে।