ধান ছেড়ে কলা আবাদে ঝুঁকছেন ধনবাড়ীর চাষিরা

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

মু. জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
'কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত' খনার প্রবাদের সত্যতা পেয়েছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কলাচাষিরা। ধনবাড়ী উপজেলায় কলাচাষ করে কৃষকদের পরিবারে কেবল ভাত কাপড়ের ব্যবস্থাই নয়, সামাজিকভাবে একটা অবস্থানও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন অনেকে। কলাচাষ করে শুধু দুঃখ ঘুচিয়েই নয়, পারিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবেই চলতে পারছেন তারা। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা দিন দিন কলাচাষের দিকে ঝুঁকছেন। ধান আবাদ করে বাজারে ধানের পর্যাপ্ত দাম না পাওয়ায় তারা কলাচাষের দিকে ঝুঁকছেন। এ উপজেলায় কলাচাষ করে অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন। আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পাওয়ায় সন্তানদের ভালোভাবে পড়ালেখাও করাতে পারছেন। ধনবাড়ী উপজেলার কলাচাষি রুহুল আমিন, আস্কর আলী ও নুরুল ইসলাম জানান, কলাচাষ করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। কলাচাষে প্রথম অবস্থায় সাথী ফসল হিসেবে মসলা জাতীয় ফসল, নানা ধরনের সবজি, বিভিন্ন ফসলসহ ধানও আবাদ করা যায়। কলার চারা লাগানোর অল্প দিনের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং দ্রম্নত ফল পাওয়া যায়। বৈশাখ মাসে কলার চারা রোপণ করলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফলন পাওয়া যায়। যেসব জমিতে পানি জমে না সেসব জমিতে কলাচাষ ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে কলাচাষের জন্য জাতভেদে আড়াইশ' থেকে সাড়ে তিনশ কলার চারা রোপণ করা যায়। একটি কলাগাছে দুই থেকে আড়াই মণ পর্যন্ত কলার ফলন হয়। একবার কলার চারা রোপণ করলে একটানা তিন বছর ভালোভাবে ফলন পাওয়া যায়- যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব হয় না। এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও তিন-চার গুণ টাকার কলা বিক্রি করা যায়। ধনবাড়ী ও মধুপুর এলাকার কলা ভালোমানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কলাচাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কলা কিনে নেয়। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে অনুপম, চাঁপা, মহেরে সাগর, মানকিসহ বিভিন্ন জাতের কলার চাষ করা হয়েছে। এসব জাতের কলাগাছ থেকে অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। কড়য়া গ্রামের কৃষক মো. খলিলুর রহমান জানান, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে কলাচাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সব খরচ বাদে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, কলা বিক্রি করতে আমাদের কোনো ঝামেলা হয় না। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা এসে কলা কিনে নিয়ে যায়। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় সহজেই কলা বিক্রি করা যায়। অপর কলাচাষি সমির হোসেন ও লিটন মিয়া জানান, তাদের অঞ্চলে কলার ভালো ফলন হয়। এখানকার চাষিরা কলা আবাদ করে কোনো ধরনের লোকসান না হওয়ায় দিন দিন তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এ এলাকার প্রতি ছড়ি কলা প্রকারভেদে সাগর কলা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, সবজি কলা (আনাজ) ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাঁপা কলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ অঞ্চলের কলা দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ধনবাড়ী বাজার, পাইস্কা বাজার, বলিভদ্র বাজার, মুশুদ্দি বাজার ও ইসলামপুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে কলার হাট বসে। ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ৭০ হেক্টর জমিতে কলাচাষ হয়েছে। কলাচাষে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এ আবাদে ঝুঁকছেন। কলা চাষের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কলাচাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।