চুইঝালের গ্রাম ঝিকরগাছার বারবাকপুর

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

এম আর মাসুদ, (ঝিকরগাছা) যশোর
দেড় যুগ আগে লাগানো শিমুল গাছটি বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার টাকা। অথচ, সাড়ে চার বছর আগে সেই শিমুল গাছের গোড়ায় পুঁতে রাখা চুইঝালের গাছ বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার টাকা। এরপর বাড়িতে খাওয়াও হয়েছে অনেক টাকার চুইঝাল। কথাগুলো বলছিলেন আবু কালাম। তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের মৃত আমির আলী দফাদারের ছেলে। পেশায় চা দোকানি। আবু কালাম জানান, সাড়ে চার বছর আগে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন একটি চুইঝালের লতা (কাটিং) এনে বাড়ির শিমুল গাছের গোড়ায় পুঁতে দিয়ে ছিলেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে গাছের গোড়া সবসময় শুষ্ক রাখতে চুলার ছাই দিতাম। কয়েকদিন আগে শিমুল গাছটি বিক্রি করার কারণে চুইঝালের গাছটিও বিক্রি করতে হয়েছে। তবে চুইঝালের বাজার দর জানা না থাকায় ৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে, শুনেছি আমার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকায় কিনে তিনি বিক্রি করেছেন ৩০ হাজার টাকায়। চুইঝাল মসলা জাতীয় উদ্ভিত। দেখতে অনেকটা পান (গেছো পান) গাছের মতো। অন্য গাছকে পঁ্যাচিয়ে এরা বাড়তে থাকে। প্রতি গিরাই গজানো শিকড় অন্য গাছকে আঁকড়ে ধরে রাখে। তবে চুইঝালের গোড়ার অংশ অনেক মোটা হয়। এটা শুষ্ক জায়গায় ভালো জন্মে। চুইঝাল (কাঠ অংশ) সব ধরনের মাংস ও শাক রান্নায় মসলার মতো ব্যবহার করা হয়। এটা দিয়ে রান্না করলে বাড়তি আর মরিচ না দিলেও হয়। চুইঝালে রান্নার মাংস ও শাক সুস্বাদু এবং পুষ্টি গুণের কারণে খুলনা-যশোরাঞ্চলে এর কদর খুব বেশি। তাই এই অঞ্চলের মানুষ বাড়িতে চুইঝালের চাষে অনেকটা ঝুঁকে পড়েছেন। সরজমিনে দেখা গেছে, ঝিকরগাছার বারবাকপুর গ্রামের সব বাড়িতে দু'চারটা করে এর গাছ আছে। গ্রামের ফয়সাল হোসেনের স্ত্রী রেখা খাতুনের বাড়িতে ৩টা গাছ আছে। ইতোমধ্যে দেড় হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করেছেন। আছে এখনো গাছ ভর্তি। সারা বছর খেয়েছেন ইচ্ছামতো। বছর তিনেক আগে লাগিয়েছিলেন। আব্দুল হালিমের স্ত্রী নাজমা খাতুন ও সফিকুল ইসলামের স্ত্রী কুলসুম বেগম জানান, বাড়িতে যতগুলো গাছ আছে, সবগুলোর গাছের সঙ্গে চুইঝাল আছে। ৮ হাজার টাকা বিক্রিকারী আবু কালাম বলেন, এবার বাড়ির ৭টি গাছের গোড়ায় চুইঝালের লতা পুঁতেছি। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, আড়াই বছর আগে উপজেলা পরিষদের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বারবাকপুর গ্রামে ৪শ পরিবারের মধ্যে চুইঝালের চারা বিতরণ করা হয়। তা থেকে এখন সম্পূর্ণ গ্রামটা চুইঝালের গ্রামে পরিণত হয়েছে। তার দাবি এই গ্রামের অনেক পরিবার আগামিতে চুইঝাল বিক্রি করে সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন।