গ্রীষ্মকালীন পুঁইশাক রোপণের সময় এখনই

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২০, ০০:০০

কৃষিবিদ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম
গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের অন্যতম লতানো ও পাতাজাতীয় সবজি পুঁই। দীর্ঘজীবী তবে সাধারণত বর্ষজীবী হিসেবে জন্মানো পুঁইয়ের পাতা ও কচি ডগা ছাড়াও কিছুটা শক্ত ও আঁশযুক্ত শাখা-প্রশাখাও ডাঁটার মতো খাওয়া যায়। ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ পুঁইশাক লতানো প্রকৃতির হওয়ায় বসতবাড়িতে বেড়া বা দেয়ালঘেঁষা মাচায় সহজেই লাগানো যায়। এমনকি ছাদ বাগানে বা বারান্দার গ্রিলেও পুঁই বেড়ে উঠতে পারে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শীতের দুই-তিন মাস ছাড়া প্রায় সারাবছরই পুঁইশাক পাওয়া যায়। স্বল্প সময়ে একই গাছ থেকে কয়েকবারে শাক ও ডগা সংগ্রহ করা যায় বলে বাণিজ্যিক চাষে পুঁইশাক বেশ লাভজনক। বিজ্ঞানীদের ধারণা পুঁইশাকের উৎপত্তি দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রীলংকা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার মধ্যে। তবে বাংলাদেশ ও ভারতেই পুঁইশাকের চাষ বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে আফ্রিকা ও আমেরিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলেও সীমিত আকারে পুঁইয়ের চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া ও মাটি ও জাত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে পুঁইশাক ভালো জন্মায়। কষ্টসহিষ্ণু গাছ বলে অতিবৃষ্টিতেও এর খুব একটা ক্ষতি না হলেও জলাবদ্ধতায় গাছের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার আংশিক ছায়াতেও জন্মে এবং বেড়ে ওঠে। সুনিষ্কাষিত এবং দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ ধরনের উর্বর মাটি পুঁইয়ের জন্য উপযোগী। তবে বর্ষার আগেই ফসল সংগ্রহ শেষ করতে হলে বেলে দো-আঁশ মাটিতে চাষ করা ভালো। বাংলাদেশে সবুজ ও লাল কান্ডবিশিষ্ট দুই জাতের পুঁইশাক দেখা যায়। আবহাওয়া ও সার-পানি ব্যবস্থাপনার ওপর এ জাতগুলোতে কান্ডের ব্যাস, পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য, পাতার আকার ও আকৃতি, লতানো ও ঝোপালো স্বভাব ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। বীজ বপনকাল সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাস পুঁই চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। আগাম চাষ করতে হলে ফেব্রম্নয়ারি মাসে বীজ বপন করতে হয়। নাবি চাষে মে মাসে চারা বা ডগা কাটিং লাগাতে হয়। বীজ হার ও বীজতলায় চারা তৈরি ৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১ মিটার প্রস্থের ১২টি বেডের জন্য এক কেজি বীজ প্রয়োজন হয়, যা দিয়ে এক হেক্টর জমিতে পুঁই চারা রোপণ করা যায়। ১২-১৫ ঘণ্টা ছিপছিপানো পানিতে ভিজিয়ে রেখে বীজতলায় ১-২ সেন্টিমিটার মাটির গভীরে বীজ বপন করতে হয়। চারার বয়স ৩০-৪০ দিন হলে বা চারার ৩-৫ পাতা হলে ৬০-৮০ সেন্টিমিটার দূরত্বের সারিতে ৫০ সেন্টিমিটার পর পর চারা রোপণ করতে হয়। সরাসরি বেডে বা ক্ষেতে বীজ বপন করে পুঁই চাষ করলে গাছে বৃদ্ধি তুলনামূলক ধীর হয়। সেজন্য বীজতলায় চারা তৈরি করে বেডে বা ক্ষেতে রোপণ করলে গাছ দ্রম্নত বৃদ্ধি পায়। শাখা কলম দিয়েও পুঁই চাষ করা যায়। তবে বীজ থেকে উৎপন্ন চারা রোপণ করাই ভালো। বর্ষাকালে পুঁই গাছের ডগা কেটেও রোপণ করা যায়। জমি তৈরি, সার ও সেচ প্রয়োগ জমি ২-৩টি চাষ দেয়ার পর মই দিয়ে সমান করে ১ মিটার পর পর ২৫-৩০ সেন্টিমিটার নালা রেখে বেড তৈরি করতে হয়। পুঁই চাষে শুকনো পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা ভালো। তবে মাটিতে জৈব পদার্থের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে জৈব সারের সঙ্গে প্রতি শতকে গোবর বা কম্পোস্ট ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৫০০ গ্রাম ও এমওপি সার ৫০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। সম্পূর্ণ গোবর বা কম্পোস্ট, অর্ধেক টিএসপি ও পটাশ সার জমি তৈরির সময় এবং বাকি অর্ধেক টিএসপি ও পটাশ সার চারা রোপণের সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া সার রোপণের ৮-১০ দিন পর অথবা চারায় ১-২টি নতুন পাতা গজালে প্রথমবার এবং এরপর ১০-১২ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হয়।