সূর্যমুখীর উফশী জাত হাইসান-৩৩ চাষ হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো প্রকার ক্ষতি না হয় তাহলে প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। এক মণ বীজ থেকে ১৮ কেজি তেল পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি তেল বাজারে ২৮০ টাকা দামে বিক্রি করা যায়। সূর্যমুখীর তেল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর কোনো অংশই ফেলা যায় না। এছাড়া সূর্যমুখীচাষের পরও কৃষক যথাসময়ে আউশ ধানের চাষ করতে পারবেন...

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২০, ০০:০০

শফিকুল ইসলাম শফিক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন কৃষকরা। জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার জানান, জেলার নয়টি উপজেলায় প্রায় ৪০ হেক্টর বা ৩শ বিঘা জমিতে ভোজ্যতেল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে ৮০ বিঘা, আশুগঞ্জে ২০ বিঘা, সরাইলে ২০ বিঘা, কসবায় ২০ বিঘা, নাসিরনগরে ৪০ বিঘা, নবীনগরে ৪০ বিঘা, বাঞ্ছারামপুরে ৩০ বিঘা, আখউড়ায় ২০ বিঘা ও বিজয়নগরে ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর তিনশ জনেরও বেশি কৃষক সুবিধাভোগী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। তিনি জানান, 'সূর্যমুখীচাষের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো প্রকার ক্ষতি না হয় তাহলে প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। এক মণ বীজ থেকে ১৮ কেজি তেল পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি তেল বাজারে ২৮০ টাকা দামে বিক্রি করা যায়। সূর্যমুখীর তেল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর কোনো অংশই ফেলা যায় না। এ ছাড়া সূর্যমুখীচাষের পরও কৃষক যথাসময়ে আউশ ধানের চাষ করতে পারবেন। এসব তেল প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জের বিভিন্ন সূর্যমুখী প্রদর্শনী পস্নটে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টি নন্দন বাগান। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতি প্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠেবেন বলে কৃষি অধিদপ্তর মনে করছে। কৃষকরা জানান, গত পৌষ মাসের প্রথম দিকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন তারা। একটি পরিণত সূর্যমুখী ফুলের গাছ ৯০ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। পরিণত হয়ে ইতোমধ্যেই সূর্যমুখী গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। তারা আরো জানান, ফেনীর সোনাগাজীতে সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল তৈরির কারখানা আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আমাদের উৎপাদিত সূর্যমুখী ফুলের বীজ তারা কিনবে। কৃষকদের কাছ থেকেই কোম্পানি সরাসরি বীজ কিনবে। কৃষি অফিস মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। আশুগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি বছরে ওই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। মোট ২০ বিঘা জমিতে কৃষকরা হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার এবং আন্তঃপরিচর্যার জন্য উপকরণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের বায়েক গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের চাষি সারোয়ার আলম জানান, আগে তিনি তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রথমবারের মতো তিনি এবং তার ভাই ৬৬ শতাংশ জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশা করি, সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে।