প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র লীলাভ‚মি জাফলং

‘সংগ্রামপুঞ্জিতে’ একদিন

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আসিফ হাসান রাজু
ছন্দরাজ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর ‘ঝণার্র গান’ কবিতার মাধ্যমে ঝণার্র রূপ ও চলার গতি সম্পকের্ জানার সোভাগ্য হয়েছিল। ঝণার্র চঞ্চল পা পুলকিত ও গতিময়। ঝণার্ স্তব্ধ পাথরের বুকে এঁকে দেয় আনন্দের পদচিহ্ন। পাহাড় থেকে চঞ্চল ও আনন্দময় পদধ্বনিতে নেমে আসে সাদা জলরাশির ধারাময় ঝণার্। চমৎকার এর ধ্বনিমাধুযর্ ও বণৈর্বভব। এই জলধারার যে সৌন্দযর্ ও অমিয় স্বাদ তা তুলনারহিত। গিরি থেকে পতিত এই অম্বুরাশি পাথরের বুকে আঘাত হেনে চতুির্দকে ছড়িয়ে পড়ে যে অপূবর্ সৌন্দযের্র সৃষ্টি করে তা সত্যি মনোমুগ্ধকর। সেই সৌন্দযের্ক উপভোগ করতে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাত কলমসৈনিক মিলে ছুটে গিয়েছিলাম প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র লীলাভূমি সিলেটের জাফলং আর মায়াবী ঝণার্ ‘সংগ্রামপুঞ্জিতে’। আমাদের সিলেট ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়েছিল ট্রেনের মাধ্যমে। রাজশাহী থেকে যাত্রা শুরু করে ঢাকা হয়ে আমরা সিলেটে পেঁৗছাই। যাবার পথে ট্রেনের ওপর পুরোটা সময় ছিল আমাদের আনন্দ আর উল্লাসে কাটানো। বেসুরে গান, গল্প এবং হাসি-তামাশা আর সাথে ট্রেনের ঝঁকঝঁক শব্দ, হাওরের মাঝ দিয়ে ছুটে চলা ট্রেন আর হাওর পেরিয়ে ট্রেন লাইনের দু’পাশে সবুজ চায়ের বাগান সঙ্গে উঁচু উঁচু টিলা আমাদের ভ্রমণ আনন্দকে আরও বেশি মাত্রা যোগ করেছিল। প্রথমত, আমাদের যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল সারাদেশ থেকে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের আয়োজনে ক্যাম্পাস জানাির্লজম ফেস্ট-২০১৮ তে যোগ দেয়া। দু’দিনব্যাপী এ মিলনমেলা শেষ করে আমরা বেরিয়ে পড়ি সৌন্দযের্র লীলাভূমি সিলেটের উল্লেখযোগ্য পযর্টন কেন্দ্র জাফলংয়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। সেই ছোটবেলা থেকে বোনা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে শুরু হয় আমাদের ছুটে চলা। সিলেট শহর থেকে একটা লেগুনা গাড়ি ভাড়া করে আমরা ছুটে চললাম জাফলংয়ের পথে। জাফলংয়ের পথে চলতে চলতে চোখে পড়ে আকাশছেঁায়া উঁচু উঁচু পাহাড়। দূর থেকে দেখলে এই পাহাড়গুলো মনে হয় আকাশ আর পাহাড় আকাশ মিশে গেছে। তার ওপর দিয়ে ভেসে চলেছে সাদা মেঘরাশি। রাস্তার পাশে চায়ের বাগান সঙ্গে অনেকটা পথজুড়েই সারি সারি পাহাড় আর মেঘের খেলার এ দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পাহাড়ের গঁা বেয়ে একটু পরপরই ঝরনার মতো বেয়ে পড়া সাদা রঙের জলের ধারা বেয়ে পড়ছে আর সেই জলের ধারা পাহাড়ের পাদদেশে অবিরাম ছুটে চলেছে। এ দৃশ্যপট মনে করিয়ে দেয় জীবনান্দের রূপসী বাংলার কথা। এ দৃশ্য অবলকন করতে করতে আমরা সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জে যাবার পর পেঁৗছে গেলাম বাংলাদেশ সীমানার শেষ প্রান্তে ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, প্রকৃতিকন্যা হিসেবে খ্যাত সিলেটের জাফলংয়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র অপরূপ লীলাভ‚মি এই জাফলং। এর অদূরেই ছিল ধলাই নদীর উজানে অবস্থিত পৃথিবীর সবাির্ধক বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জি। ওপারে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়, এপারে নদী। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলছে ঝরনা, আর নদীর বুকে স্তরে স্তরে সাজানো নানা রঙের নুড়ি পাথর। এখানেই শেষ নয় সমতল চা-বাগান, খাসিয়া পল্লী, পানের বরজ-কী নেই জাফলংয়ে! সিলেটের জাফলংকে সেজন্য হয়ত বলা হয়ে থাকে প্রাকৃতিক সৌন্দযের্্যর লীলাভ‚মি। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে ভারতের সীমান্তঘেঁষা দেশের উত্তর-পূবার্ঞ্চলের এই জনপদকে। জানা যায় আশির দশকের দিকে ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে নৌপথে জাফলং যেত। কিন্তু আমাদের জাফলং যাত্রা ছিল জাফলংয়ের নয়নাভিরাম সৌন্দযের্্যর যে কথা শুনে এসেছি সেই পিপাসা মেটাতে। এখানে পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্ত‚প জাফলংকে করেছে আরও আকষর্ণীয়। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড়ি টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রোপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ে গহীন অরণ্য প্রতি মুহ‚তর্ মনে করিয়ে দিচ্ছিল ছোটবেলায় বইয়ের পাতায় পড়া সেই অদেখা প্রাকৃতিক লীলাভূমি বণর্নার কথা। স্রষ্টা কি অপরূপ মায়ায় না সৃজন করেছে এ ভূমিকে? শুধু পাহাড়, ঝণার্ আর নদীতে সীমাবদ্ধ নয় জাফলংয়ের সৌন্দযর্। জাফলংয়ের সৌন্দযের্র আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সেখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। নদী পার হলেই খাসিয়াপুঞ্জি। এখানে গেলে দেখা মিলবে সমতল থেকে ৩-৪ ফুট উঁচুতে বিশেষভাবে তৈরি খাসিয়াদের ঘর। তাদের পান পাতা সংগ্রহ ও খঁাচাভতির্ করার অভিনব দৃশ্য যে কারো নজরকাড়ে। এ দৃশ্য অবলোকন শেষে নয়নাভরিাম পাহাড় বেয়ে পড়া মায়াবী ঝণার্ ‘সংগ্রামপুঞ্জিতে’ নিজেদের কে ভিজিয়ে অতৃপ্ত মনকে সুপ্ত করে আমাদের সিলেট ভ্রমণের সাথর্কতা খুঁজে পায়।