শরতের মুগ্ধতায় শুভ্র সাম্রাজ্য

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
স্বকৃত গালিব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কাশফুলের শুভ্র আভা ও দৃষ্টিনন্দন রূপ যে কারও নজর কাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর শরৎ ঋতু মানেই আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা ও কাশের বনে সাদা কাশের অপরূপ মেলা। শরৎ ঋতুর আগমনী বাতার্ নিয়ে প্রকৃতিকে আরও মায়াবী রূপে সাজাতে কাশফুল যেন বিন্দুমাত্র কাপর্ণ্য করে না। তেমনিভাবে বছরের ছয়টি ঋতু ভিন্ন রকমের প্রকৃতিক সৌন্দযের্র পাসরা নিয়ে আগমন ঘটে উঁচু-নিচু টিলার সমন্বয়ে লাল মাটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরতে পরতে। শীতে যেন হার কঁাপানো শীত তেমনিভাবে চৈত্রের দাবদাহেও হয়ে ওঠে সবাই অতিষ্ঠ। বষার্ যেমন প্রকৃতিতে নিয়ে আসে পাহাড়ি বুনো ফুলের সৌন্দযর্ তেমনিভাবে ঋতুরাজ বসন্ত পাহাড়ি সবুজ ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তোলে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায়। বছর ঘুরে শরতের আগমনের বাতার্ পেয়ে লাল মাটির উঁচু-নিচু টিলাগুলো সাজতে থাকে কাশফুলের শুভ্র আভায়। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে হেঁটে শহীদ মিনারের দিকে যেতেই রাস্তার দুই পাশে উঁচু-নিচু টিলাগুলোতে চোখে পড়বে কাশফুলের শুভ্র সম্রাজ্যের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘুরতে আসা আশিক করিম বলছিলেন, নীল আকাশের নিচে উঁচু-নিচু টিলাগুলোতে সাদা কাশফুল যখন বাতাসের দোলায় দুলতে থাকে তখন মনটা যেন আন্দোলিত হয়। মনে হয় যেন শ্বেত বাসনা একঝঁাক তরুণী যেন পাহাড়ে পাহাড়ে নৃত্য করছে। শহীদ মিনারে বসে আকাশ, তারিক, বন্ধন, কেয়া, রুবেল, সাবিতের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণা বাতাসে কাশফুলগুলো ঢলে ঢলে আপনার সাথে কথা বলবে। আপনাকে আহŸান জানাবে তার সৌন্দযর্ উপভোগ করার জন্য। কাশফুলের এ রূপ সহজেই যে কারও চিত্তে দোলা দিতে বাধ্য করবে। তাইতো বিকেল হলেই অদৃশ্য আকষের্ণ প্রতি দিনই ছুটে আসি বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুলের সৌন্দযর্ উপভোগ করার জন্য। কাশফুলের সৌন্দযর্ যেমন সবাই মনকে আকষর্ণ ও আন্দোলিত করে তেমনিভাবে কাশফুলের সৌন্দযর্ খুবই ক্ষণস্থায়ী। ফুল ফোটার পর কয়েক দিনের মধ্যেই তা মলিন হয়ে শুকাতে শুরু করে। আবার সেই সাদা সৌন্দযের্ সাজার জন্য লাল মাটির টিলাগুলো বছর ঘুরে আরেক শরতের অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। মাহবুব এ রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবার এসেছে শরৎকাল। শরৎ মানেই কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশ আর দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। এই বৃষ্টি আবার এই রোদ। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর শ্রাবণের অঝোর ধারার পর প্রকৃতিতে শরতের আগমনে এনে দেয় এক অনন্য সৌন্দযর্্য। তাইতো শরতকে বলা হয় ‘ঋতুর রাণী’। বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে শরতের আগমন মানেই অন্যরকম মুগ্ধতা। শরৎ নিয়ে কবিতা, গান গল্পের শেষ নেই। ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/ ছড়িয়ে গেল ছাড়িয়ে মোহন অঙ্গুলি। শরৎ তোমার শিশির ধোওয়া কুন্তলেÑ/ বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় এভাবেই ধরা পড়েছে শরতের রূপ। আয়তনে বাংলাদেশের সবর্বৃহৎ ২১শ’ একরের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা চিরসবুজের এই ক্যাম্পাসটি বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। তাইতো শরতের ক্যাম্পাসে প্রকৃতিপ্রেমী এসব শিক্ষাথীর্র শুভ্র-সাদা কাশফুলের বাগানে এমন ভিড়। ক্যাম্পাসের ফরেস্ট্রি থেকে হেঁটে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের পথ ঠাÐাছড়ি। ঠাÐাছড়ির এই পুরো অঞ্চলজুড়ে ফুটেছে কাশফুল। দেখে মনে হয় যেন সাদা সাদা মেঘেদের দল বসত গড়েছে এই বিস্তৃণর্ মাঠে। বিকেল হলেই দলবেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর্রা ঘুরতে যান এই কাশফুলের রাজ্যে। শুধু শিক্ষাথীর্রা নয় অনেক শিক্ষকেরও বিকেলে পরিবারসহ ঘুরতে আসা চোখে পড়ে। এমনকি বাইরের লোকজনও ঘুরতে আসেন এই ঠাÐাছড়ি। ‘দূরের পাহাড়গুলো মনে হয় হিমালয়ের পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে যেন শুভ্র কোনো ফসলের চাষ! বিস্তীণর্ অঞ্চলজুড়ে সাদা কাশফুল। সত্যিই চোখ ফেরানোর মতো নয়। মোবাইলের ক্যামেরা যেদিকেই ধরি ক্লিক করতে ইচ্ছে করে।’ ঠাÐাছড়ি থেকে এসে এভাবেই অনুভ‚তি ব্যক্ত করেন বাংলা বিভাগের মাস্টাসের্র শিক্ষাথীর্ মো. সরওয়ার। হিউম্যান রিসোসর্ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১ম বষের্র শিক্ষাথীর্ আরশি ইরতিজা বলেন, শরতের সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হলো প্রকৃতির নিমলর্তা। আকাশের নীল-সাদা মেঘ, কাশের শোভা, সবুজ প্রকৃতি সবকিছু যে কোনো মানুষকে সাময়িকভাবে হলেও রিফ্রেশমেন্ট দিতে পারে। ঠাÐাছড়িতে ছোট ছোট টিলার ওপর সাদা কাশের ছড়াছড়ি দেখে মনে হয় যেন দূর থেকে সাদা জামা পরা অনেক মানুষ দঁাড়িয়ে আছে! সত্যিই দৃশ্যটা অসাধারণ। বাংলা বিভাগের প্রথম বষের্র শিক্ষাথীর্ তাহমিনা আক্তার জানান, শরতের বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের কাশফুলের বাগানে ঘোরাঘুরি করার ছবি দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। তাই বন্ধুদের সাথে কথা বলে আমরাও ঘুরতে গেলাম ঠাÐাছড়ি। সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে। কাশের বাগানে ঘোরাঘুরি করে সুন্দর একটি বিকেল কাটিয়েছি বন্ধুদের সঙ্গে। শরতের রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি খেলায় প্রকৃতিটা সত্যিই এক অনন্য রূপ ধারণ করে। যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে যায়। সারি সারি কাশের ছেঁায়ায় নিমর্ল করে দেয় অন্তর।