হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ভালোবাসার আরেক নাম টাবোর্ ক্রেটার

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

তারিকুল ইসলাম
টাবোর্ ক্রেটার হাবিপ্রবির সব শিক্ষাথীর্র কাছে একটি ভালোবাসার নাম
ক্যাম্পাসের আড্ডায়, হলের ব্যালকোনিতে, ক্যান্টিনে, প্রশাসনিক ভবনের সিঁড়িতে কিংবা ছোটখাটো অনুষ্ঠানগুলোতে গান করা ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ব্যান্ড দলগুলো। পরে মুখে মুখে ছড়িয়ে যায় তাদের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের গÐি পেরিয়ে কোনো কোনো ব্যান্ডের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। শিক্ষাথীর্রা তখনো গবর্ করে বলেন ‘এটা আমাদের ক্যাম্পাসের ব্যান্ড। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) এমনি একটা ব্যান্ড দলের গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন। টাবোর্ ক্রেটার হাবিপ্রবির সব শিক্ষাথীর্র কাছে একটি ভালোবাসার নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রক সংগীত এর এক অন্যরকম ধারক-বাহক। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীের্দর গড়া একটি ব্যান্ড দল নাম ‘টাবোর্ ক্রেটার’। ব্যান্ড দলটি এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গের রক গানপ্রেমীদের মনের খোরাক জোগানোর অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। চলে আসি প্রতিষ্ঠালগ্নের কিছু গল্প নিয়ে শুরুর দিকের গল্পটা খুব সুখের ছিল না। সেই গল্পটা বলেছেন ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিংকু। ২০১২ সাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির্ হয়ে রক গানপাগল একটি ছেলে একটি ব্যান্ড দল গঠন করার জন্য সঙ্গী খঁুজে বেড়াচ্ছেন। এমন সময় কাছের এক বন্ধু হামিমের খেঁাজ পাওয়া গেল যে গিটার বাজিয়ে গান করতে পারে। শুরু হলো তার সঙ্গে আড্ডা ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে বসে গিটার নিয়ে গান গাওয়া, বন্ধুদের জন্মদিনে গিটার প্লে করে গান গেয়ে আনন্দ দেয়া। এভাবেই শুরু ছিল। না ছিল কোনো বাদ্যযন্ত্র, না ছিল প্রশিক্ষক। ছিল শুধু বুকভরা আশা। সেই আশা থেকেই আজকের এই ব্যান্ড টাবোর্ ক্রেটার। তার ভাষ্য মতে, যেহেতু আমরা বিগেনার ছিলাম, তাই দুজনের চিন্তা করলাম মিউজিক্যাল একটা গ্রæপ খুঁজি যেখানে কিছু শিখা যাবে; কিন্তু এমন কোনো কিছুই পাচ্ছিলাম না। গোটা দিনাজপুর ঘুরে কোথাও একটা স্পেস পেলাম না, যেখানে আমরা রক সংগীত শিখতে পারি। যদিও কিছু মিউজিক্যাল কিছু একাডেমি পেয়েছি, যা বেসিক মিউজিক শেখায় যেমন হারমোনিয়াম, তবলা। কিন্তু আমাদের দরকার ছিল রক মিউজিক শেখা। সময়টা এত খাপার ছিল যে, এক সময় সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু দেব-দূতের মতো আমাদের হেল্প করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বড় ভাই, যাদের ছোট একটা ব্যান্ড দল ছিল যার নাম ছিল দ্য ফ্লেম, যা পরিচালনা করতেন শিপ্লু ও রনি নামে দুজন বড় ভাই। দা ফ্লেম এর সঙ্গে আমাদের দেখা পরিচয় এবং তাদের দলে আমাদের প্র্যাক্টিস করার সুযোগ করে দেয়। তার বিনিময়ে আমাদের কিছু অথের্ বিনিময়ে আমরা সকাল-বিকাল প্র্যাক্টিস করতাম। এভাবেই চলছিল। এর কয়দিন পর পরিচয় উইলিয়ামের সাথে পরিচয় হয় সে লিড গিটার বাজায়। তারপর থেকে উইলিয়াম যোগ হয় প্র্যাক্টিসে। এর কিছুদিন পর যোগ হয় রিয়াদ যদিও সে কোনো কিছু পারত না বাট আগ্রহ ছিল অনেক। এর পর পর যোগ হয় বিজে নেপাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আশা ১২তম ব্যাচের বন্ধু। প্রথম দিকে আমরা ফক রক বেশি জোর দিতাম। এর মধ্যে আমরা একটা প্রোগ্রাম করলাম যা সেঁজুতি সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় একটি গান করে যা লিংকিং পাকর্ এর দা ইন্ড। সেই দিন প্রথম ক্যাম্পাস জানতে পারে ক্যাম্পাসে আরও একটা ব্যান্ড দল আছে যার নাম টাবোর্ কেটার। চার পঁাচ মাস পর দ্য ফেল্ম-এর সদস্যরা চলে গেলেন তখন আমাদের আশায় ভাটা পড়ে। তখন চিন্তা হলো একটা ড্রাম কেনা। যেই কথা সেই কাজ চলে গেলাম ঢাকায়, যাওয়ার সময় কাÐ ঘটেছিল, যেহেতু টাকা কম তাই বিনা টিকিটে জানির্ ছিল, আমাদের কে পুলিশ হ্যান্ডকাপ পরিয়েছিল। যাই হোক সেখান থেকে কোনো রকম বেঁচে আমরা চলে গেলাম দোকানে, গিয়ে বাজেটের বাহিরে ড্রাম পছন্দ হলো, সবার কাছ থেকে জোড় করে টাকা নিয়ে এমন কি বিজের কাছ থেকে মাসের খরচের জন্য আনা টাকা নিয়ে নিজে কিছু যোগ করে ড্রামটি কিনে ফেললাম। শুরু হলো নতুন ভাবে। আলাদাভাবে রুম নিয়ে শুরু হলো প্র্যাক্টিস। ’১২ সালে শুরু করে নিজেদের ভালোভাবে প্রস্তুত করে শ্রোতাদের সামনে লাইভে আসতে আসতে আমাদের প্রায় ৬ মাস সময় লাগে। ১২ সালে জুলাই থেকে থেকে আমরা নিয়মিত স্টেজ পারফমর্ করা শুরু করি। সেই সালে আমরা ক্যাম্পাসে অনেক প্রোগ্রাম করি। সেই সময় টাবোর্ কেটার ক্যাম্পাস তথা আশপাশের অঞ্চলে রকপ্রেমীদের কাছে খুব নাম করে। ক্যাম্পাসে যে কোনো প্রোগ্রাম হলেই ডাক পরে ডাক পরে টাবোর্ ক্রেটারের। ধীরে ধীরে সবার ভালোবাসা ও আশীবাের্দ আমরা উত্তরাঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ২০১৩ প্রথম দিকে তেমন কোন শো হয়নি। সেই বছরের মাঝামাঝি সময়ে রতন নামে একজন জয়েন করে। এর কিছু দিনের মধ্যে ক্যাম্পাসে বাহির থেকে রংপুরের ছেলে রুমন জয়েন করে সে ভালো গিটারিস্ট ছিল। ’১৩ সালের শেষ দিকে বেশ ভালো কিছু শো করি। ২০১৪ সালে প্রথমে অনেক বড় একটা প্রোগ্রাম করি এর ১৫ দিন পর ব্যান্ড সদস্য রুমন আত্মহত্যা করে। সেই সময়টা আমাদের ব্যান্ডের ওপর অনেক ঝড় গিয়েছে। তাকে হারিয়ে আমরা থমকে গিয়েছিলাম। প্রায় চার মাস আমরা কোনো প্রোগ্রাম করিনি। সে সময় প্রবলেম হলো আমাদের ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হামিম এক অপ্রতিকর পরিস্থিতিতে জড়ায়। পরে ব্যান্ডের সকল সদস্যের সিদ্ধান্তে তাকে বাদ দেই। এই ধাক্কাগুলো সামলে নেয়া আমাদের জন্য খুব কষ্টকর ছিল, তারপর ও আমরা এগিয়ে চলেছি। ২০১৪ সালে অনেক দুঃখের মধ্য সুখের কথা ছিল আমরা ক্যাম্পাস থেকে প্র্যাক্টিস রুম পাই। এর মধ্যে উইলি, রতন, বিজে, রিংকু মিলে প্রোগ্রাম করতে থাকি। ২০১৫ সালে নাসিম আহমেদ মনি গিটারিস্ট হিসেবে জয়েন করে। এর মধ্য কিছু বড় প্রোগ্রাম করি। জিপি হ্যাং আউটের মতো প্রোগ্রাম করি। যাই হোক অনেক প্রবলেম কাটিয়ে যখন ২০১৬ সালে জুনিয়ররা আসার পর ব্যান্ডটির প্রাণ ফিরে পায়। এর মধ্য ব্যান্ডে শাহরিয়ার, রক্তিম, ভাগ্য-এর মতো অনেক মেধাবী এখানে জয়েন করে। এ ছাড়াও যারা সব সময় টাবোর্ কেটার সঙ্গে ছিল সদস্য হিসবে জাহিদ, মুকুট, সৌরভ, লিখন, রুমান, রাকিব ইশান, সুব্রত, মেহেদি, ফাহাদ, জিকো। দেখতে দেখতে ৬ বছর পার করেছে ব্যান্ড দল টাবোর্ ক্রেটার। নতুনরা আশার পর মানে শাহরিয়ার, রক্তিম, আসিক ও ভাগ্য এদের নিয়ে দিনাজপুরে অনেক বড় রক ফেস্ট এ পারফমর্ করি। বতর্মানে আমরা লাইনাপে আছি আমি রিংকু, রতন, শাহরিয়ার, আসিক, মনি ও ভাগ্য। ব্যান্ড লিডার এবং লিড গিটারিস্ট শাহরিয়ার আহমেদ, প্রেসিডেন্ট এবং ভোকাল হিসেবে আছে নাইমুর রহমান রতন। সাধারণ সম্পাদক ও ব্যান্ডের বেজ গিটারিস্ট ভাগ্য বন্ধু রায়, আশিকুর রহমান ভোকাল এবং কীবোডর্ প্লেয়ার, লিড গিটারিস্ট মনি, রক্তিম রিফ গিটারিস্ট ব্যান্ড ম্যানাজার সাঈদ হাসান, ইভেন্ট ম্যানাজার লিখন, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ, ব্যান্ড রিপ্রেজেন্টেটিভ ধ্রæব, গান গাইতে কে না ভালোবাসে, সেই ভালোবাসা থেকে সুরকে কণ্ঠে ধারণ করে এরা গাইছেন বন্ধুদের আড্ডায়, ক্যাম্পাস চত্বরে কিংবা নিজ ভুবনের আলো-অঁাধারিতে। একটু সুযোগ পেলে হয়তো তারাও একদিন হয়ে উঠবেন আটের্সল, ওয়ারফেজ শিরোনামহীনের মতো আমাদের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল।