বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
গণ বিশ্ববিদ্যালয়

মাঠে নেই সেই আগের ছন্দ

মো. আশিকুর রহমান
  ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

স্মৃতির ভেলায় রেড সিগনাল হয়ে থাকবে করোনাভাইরাস। ২০২০ সালটা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতেই পারে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নামক ভয়াল দানবের কড়াল গ্রাসে দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ ক্রীড়াঙ্গনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার নাম এলাকায় অবস্থিত ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বলদীপ্ত নাম গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। যেটি সারা বাংলাদেশব্যাপী আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবারের চ্যাম্পিয়নসহ নারীদের ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবলেও চ্যাম্পিয়নের শিরোপা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। গবির যেই মাঠে সর্বদা ছিল খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ, সেই মাঠটি আজ করোনাভাইরাসের কারণে খেলোয়াড় শূন্য। এ মাঠে এখন আর বল গড়ায় না, ঘাসগুলোও অনেক লম্বা লম্বা হওয়ায় চারদিকে যেন এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। এমনিতে বছরজুড়েই বিশ্ববিদ্যালয় মাঠটি থাকতো উৎসবমূখর। কিন্তু আজ গবির খেলার মাঠে নেই সেই আগের ছন্দ। নিস্তব্ধ মাঠটি যেন ফিরে পেতে চাচ্ছে তার পুরানো রূপ।

কথা হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় মো. জাকির হোসেন রনির সঙ্গে। আইন বিভাগের এ শিক্ষার্থী বলেন, 'খেলাধুলায় মত্ত হয়েছিল ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষার্থীরা। সবকিছু মিলিয়ে দিনগুলো ছিল আনন্দঘন, উৎসবমূখর। আর আজ আমরা খেলোয়াড়রা সবাই নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছি। এখন আর মাঠে যাওয়া হচ্ছে না। সবাই পথচেয়ে বসে আছি কবে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে! কবে ক্যাম্পাস আবার শিক্ষার্থীদের কোলাহলে ভরে উঠবে! কবে আবার মাঠ খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ হবে! আবার দুটি দলে বিভক্ত হয়ে টানা ৯০ মিনিট বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করব! আবার কবে খেলার মাঠটি ফিরবে তার পুরানো রূপে? আলস্নাহ যেন আবার সবকিছু আগের মতো করে দেয়, সবকিছু আবার চলুক তার আপন গতিতে। খেলার মাঠ আবার ফিরে পাক তার পুরানো রূপ, মাঠে চলুক সেই ছন্দময়, গতিময় ফুটবল।'

সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় খেলোয়াড়দের গবির সুবিশাল মাঠ মিস করার মাত্রা যেন অনেকগুণ বেশি। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিস করে না এমনটা কিন্তু নয়। গবিতে খুব কম শিক্ষার্থীই রয়েছেন যারা এ মাঠের প্রেমে পড়েনি!

কথা হয় গবি ক্যাম্পাসের অন্যতম অলরাউন্ডার মেয়ে খেলোয়াড় ছন্দা রানী সরকারের সঙ্গে। সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের এ শিক্ষার্থী বলেন, আমার প্রাণপ্রিয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ। সেখানে গেলে মন ভালো হয়ে যায়, খেলার ইচ্ছে জাগে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ সত্যি অনেক অসাধারণ। আমার চোখে দেখা অনুযায়ী সেরা মাঠ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ। অনেক সুন্দর খেলার জায়গা, এত বড় পরিপূর্ণ মাঠ আর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই আমার দেখা মতে। এ বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ যে দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে খেলার জন্য ব্যাকুল হয় পড়বে।'

ছন্দা তার মনের ছন্দে ব্যক্ত করেন আরও কিছু কথা। তার ভাষায়, 'এ মহামারি করোনাভাইরাস এর জন্য আমরা আজ আমাদের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। মাঠকে অনেক মিস করি আবার খেলতে যাব কবে সেই আশায় দিন কাটছে। মাঝেমধ্যে খুব ইচ্ছা হয় যে মাঠে দৌড়ে চলে যাই। কিন্তু এ মহামারির জন্য ঘরবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।'

কথা হয় বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী ও গবি ফুটবল টিমের অন্যতম আরও একজন ফুটবলার মো. আশরাফুল ইসলাম রাতুলের সঙ্গে। তিনি জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গত চারটি বছর আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না আর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশের হয়ে পর পর চার বছর খেলার এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। সবাইকে খুব মিস করছি বিশেষ করে আমার সেই প্রিয় খেলার মাঠটিকে। আর ২০২০ সালের শুরুটা খুব ভালোই ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে পাঠানো হয় রেফারি কোর্স করার জন্য। তার পর থেকে সবই যেন ছন্নছাড়া। আজ শুধু মিস করার খাতায় রয়ে গেছে আমার প্রিয় সেই মাঠ, খেলার আমেজ আর হাজারো স্মৃতি। মন ছুটে যেতে চায় সেই মাঠে।'

করোনার কারণে খেলোয়াড়সহ সব শিক্ষার্থীই আজ দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের বাইরে। করোনা অতি দ্রম্নত কাটিয়ে গবি ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠটি ফিরে পাবে তার নতুন প্রাণ এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে