ঐতিহাসিক দিনে বৈদ্যনাথের পানে

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মাহবুব রায়হান
ঐতিহাসিক বৈদ্যনাথতলায় শিক্ষাথীর্রা
দিনটি ছিল ঐতিহাসিক মোহাররম মাসের প্রথম দিবস। এ দিন ক্যাম্পাস ছুটি থাকায় নিশ্চিন্তে-নিভিের্গ্ন কয়েকজন বন্ধু এক হয়ে ছুটে গিয়েছিলাম ঐতিহাসিক বৈদ্যনাথতলায় (বতর্মান মুজিবনগর)। দূর পথের ভ্রমণ না হলেও সমস্ত দিনটা আনন্দ-ফুতির্, গান-বাজনা, আর হাসি-তামাসায় অতিবাহিত করেছিলাম। যেখানে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের রাজধানী ঘোষিত হয়েছিল, সেই মুজিবনগরের অতি সান্নিধ্যে থেকে দেখেছিলাম তার ঐতিহাসিক নানা নিদশর্ন। আমরা দেখেছি মুক্তিয্দ্ধু ও তার-পরবতীর্ সময়কালীন ঐতিহাসিক সব ভাস্কযর্, স্মৃতি স্থাপনা, দৃশ্যপট ও দেয়াল চিত্র। যা আমাদের বতর্মান সময়ের তরুণ প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেয় এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কল্পকথা। সকাল ৭টা। ক্যাম্পাসের বন্ধুরা মেইন গেটে জড়ো হলাম সবাই একে একে। এদিকে ঝিনাইদহের বন্ধুরাও রওনা দিয়েছে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ আর আমরা ক্যাম্পাসের বন্ধুরা সবাই কুষ্টিয়ার হাসপাতাল মোড় থেকে সকালের নাস্তা শেষ করে উঠে পড়লাম মাইক্রোবাসে। তেরো জনের সিটে বসতে হলো ঠাসঠাসি করে পনেরো জন ভ্রমণপিপাসুকে। সকালের মৃদুমন্দ বাতাসে গাড়ি ছুটে চলেছে অবিরাম গতিতে। চুয়াডাঙ্গায় পেঁৗছানোর পর পতিমধ্যে মহাসড়কের দু’ধারে দেখতে পেলাম বিশালাকায় বিস্তৃত কাশফুলের সমারোহ। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল বিশাল মাঠে কে যেন সাদা বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দযের্র লীলাখেলা কতটা যে মধুর, এ দৃশ্য না দেখলে কেউ সেটা বুঝবে না। দুপুর একটা নাগাত আমরা পেঁৗছলাম কাঙ্খিত সেই গন্তব্যে। মুজিবনগর গেটের হিসার মিটিয়ে ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই শুরু হলো ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দের ছড়াছড়ি। সিদ্ধান্ত হলো আমরা হেঁটেই নগরটি পরিদশর্ন করব। প্রথমেই আমরা ঐতিহাসিক আম্রকানন দশর্ন করলাম যেখানে দঁাড়িয়ে অস্থায়ী সরকারের শপথবাক্য পাঠ করা হয়েছিল। স্মৃতিসৌধে কিছু সময় অতিবাহিত করে আমরা এবার মুজিবনগরের সীমান্তে শূন্য লাইনে চলে গেলাম। যেখান থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গরাজ্যের দশর্ন পেলাম। এরপর আমরা সবচেয়ে আকষর্ণীয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও বিশালাকায় বিস্তৃত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স পরিদশর্ন করলাম। যার পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন সব স্মৃতি স্থাপনা ও ভাস্কযর্সমূহ। দুপুর আড়াইটার দিকে আমরা রওনা দিলাম মুজিবনগর থেকে কিছু দূরে আট শহীদের কবর পরিদশের্ন। আমরা সেখানেও দেখতে পেলাম আট শহীদ স্মৃতি কমপ্লেক্স। এবার আমাদের যাত্রা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বন্ধু সাজনের বাড়ি পথে। এদিকে মেহেরপুর শহরে বিভাগের বড় ভাই রাকিবুল ইসলামের শত অনুরোধে যাত্রা রোধ করে খেলাম মেহেরপুরের ১৫০ বছরের পুরনো বাসুদেবের সাবিত্রি আর রসকদম্ব। রসকদম্ব খেয়ে যেন প্রাণটা জুড়িয়ে গিয়েছিল সেদিন। এবার আমরা ছুটে চলেছি মাঠভরা কঁাচা আমন ধানের মধ্য দিয়ে অঁাকাবঁাকা মেঠোপথে। কঁাচা ধানের ম-ম গন্ধে প্রাণটা যেন এবারও জুড়িয়ে গেল। অবশেষে বিকাল ৪টা নাগাদ আমরা বন্ধু সাজনের বাড়ি পেঁৗছলাম। সেখানে দুপুরের খাবার গ্রহণ শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় আমরা ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। মেহেরপুরের মুজিবনগর যেমন ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে, যার ইতিহাস যেমন স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই স্বাধীন বাংলার প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের মনে। তেমনই কোনো ঐতিহাসিক দিনে আমাদের এ ঐতিহাসিক মুজিবনগর ভ্রমণের কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন মনের স্মৃতিপটে।