আশা ইউনিভাসিির্ট বাংলাদেশ

সেন্টার ফর সোশিও ইকোনমিক রিসাচর্

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সমাবতের্ন আশা ইউনিভাসিির্টর শিক্ষাথীর্রা
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সেন্টার ফর সোশিও ইকোনমিক রিসাচর্ (সিএসইএস)’। এই আথর্-সামাজিক গবেষণাকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অধ্যাপক মো. মঈনউদ্দিন খান। তিনি তখন আশা ইউনিভাসিির্ট বাংলাদেশ এর উপাচাযর্ ছিলেন। গবেষণাকেন্দ্রটির প্রকাশনা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানান, গত ১০ বছর ধরে এই সেন্টার থেকে আমরা একটি ইংরেজি জানার্ল প্রকাশ করছি। এটির নাম হলোÑ ‘আশা ইউনিভাসিির্ট রিভিউ’। প্রতি ছয় মাস পর পর এই জানার্লটি প্রকাশিত হচ্ছে। জানার্লটির বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই জানাের্লর বিষয়বস্তু হলো আথির্ক ও সামাজিক জীবন। বিশেষত দরিদ্র বা পিছিয়ে পড়া মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য মাইক্রো ক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে সেসব বিষয়ে ভালো মানের অনেক গবেষণা আমরা প্রকাশ করেছি।’ তিনি এই জানাের্লর প্রথম থেকে ১৮তম সংখ্যা পযর্ন্ত প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বভার পালন করেছেন। গবেষণা জানাের্লর বতর্মান প্রধান সম্পাদক ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু দাউদ হাসান বলেন, ‘আমাদের জানাের্ল প্রকাশিত প্রবন্ধগুলোর মান যাচাইয়ের জন্য ১১ সদস্যের একটি সম্পাদনা পষর্দ আছে। এই পষর্দ যে কোনো গবেষণাপত্র মৌলিক, নকল বা কোনো অংশ কপি করা কিনা সেটি যাচাই করে। এরপর তাদের পরামশের্ রচনাটিতে লেখক প্রয়োজনীয় তথ্য সংযোজন-বিয়োজন ও সংশোধন করেন। চ‚ড়ান্তভাবে প্রকাশের আগে সেটির রিভিউ করা হয়। সবশেষে সেটি প্রকাশিত হয়।’ ছাত্রছাত্রী ও মানুষের সাহায্যে ব্যস্ত ১২টি ক্লাব এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিতকর্, সংস্কৃতিচচার্, খেলাধুলা, আতর্মানবতার সেবা ইত্যাদির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আছে মোট ১২টি ক্লাব। সেগুলো হলোÑ ‘বিজনেস ক্লাব’, ‘ক্যারিয়ার অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব’, ‘ইংলিশ ক্লাব’, ‘ফটোগ্রাফি অ্যান্ড মুভি ক্লাব’, ‘সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব’, ‘গেমস অ্যান্ড স্পোটর্স ক্লাব’, ‘কালচারাল ক্লাব’, ‘ল ক্লাব’, ‘মুটিং ক্লাব’, ‘সোশিওলজি ক্লাব’ ও ‘ফামার্ ক্লাব’। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাবই কম বেশি পুরনো। ক্লাবগুলোর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা যেমন নিজেদের নানাভাবে সমৃদ্ধ করেন, তেমনি সামাজিক কাজও করেন। প্রতিটি ক্লাবের সদস্যরা নানা সময়ে ম্যাগাজিন, পোস্টার ও দেয়ালিকা প্রকাশ করেন। যেমন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের শিক্ষাথীর্রা বিজনেস ক্লাবের মাধ্যমে ‘ঐক্যতান’, আশা ইউনিভাসিির্ট ইংলিশ ক্লাবের সভাপতি তানভিয়া কাইয়ূম বলেন, এই ক্লাব ইংরেজি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ‘সিম্ফোনি’ ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। আশা ইউনিভাসিির্টতে কম খরচে উচ্চশিক্ষা এখানে প্রতিটি বিভাগের লেখাপড়ার খরচই সামথের্্যর মধ্যে আছে। যেমন ইংরেজি বিভাগের চার বছরের অনাসর্ কোসের্র জন্য সেমিস্টার ও টিউশন ফিসহ মোট ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা খরচ হয়। আইনের এলএলবি পড়তে ৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা খরচ হয়, বিবিএ করতে চার লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা, বিএসএস ইন অ্যাপ্লাইড সোশিওলজি করতে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫০ টাকা আর ফামাির্সতে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৪১০ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের পোষ্যদের জন্য টিউশন ফি শতভাগ মওকুফ করা হয়। একই পরিবারের ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী ও আশ এবং অন্যান্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ২০ ভাগ ছাড় আছে। নারীদের জন্য ১০ ভাগ, প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩০ ভাগ এবং আদিবাসীদের জন্য ৩০ ভাগ ছাড় আছে। করপোরেট ‘টিউশন ফি ওয়েভার’ নামে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা আছে পেশাজীবীদের জন্য। লাইব্রেরি বইয়ের ভুবন আশাইউবি লাইব্রেরিটি বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত। লাইব্রেরিটি সম্পূণর্ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আশাইউবি লাইব্রেরি বেশ সমৃদ্ধ ও সকল প্রকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বলে জানালেন লাইব্রেরিয়ান একে মনসুর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনটি লাইব্রেরি আছে। সেগুলোতে ১৪ হাজার ২৪৫টি মুদ্রিত বই এবং প্রায় ৬ হাজার ৪০০ ই-বুক আছে’। এর বাইরেও এ লাইব্রেরিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তথ্য ও খবর জানার জন্য দেশের প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো সংরক্ষণ করা হয়। গ্রন্থনা : মোহাম্মদ নূর নবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘষর্ অধ্যয়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ডালেম চন্দ্র বমর্ণ দ্বিতীয়বারের মতো আশা ইউনিভাসিির্ট বাংলাদেশের (আশা ইউবি) উপাচাযের্র দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা কথা আমাদের কাছে তুলে ধরেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী? বাংলাদেশে প্রতি শিক্ষাবষের্ গড়ে পঁাচ লাখ ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পাস করে। তবে তাদের মধ্যে মাত্র লাখখানেক শিক্ষাথীর্ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়ালেখার জন্য সুযোগ পায়। বাকি সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী কোথায় পড়বে? তাদের জন্য স্বল্পখরচে, মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্যই আশাইউবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দীঘির্দনের অভিজ্ঞতাকে কীভাবে আশা ইউনিভাসিির্টর উন্নয়নে ব্যবহার করবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বহু বছর অধ্যাপনা করেছি, পাশাপাশি নানা ধরনের প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আশা ইউনিভাসিির্ট বাংলাদেশের (আশাইউবি) শিক্ষাদান পদ্ধতিকে ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সেমিস্টারভিত্তিক লেখাপড়া যেন আরও ভালো হয় এবং ছাত্র-শিক্ষক উভয়েই যেন দেশ-বিদেশের জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য সেমিনারে অংশ নিতে পারে, সেজন্য আরও অনেক সেমিনার আয়োজন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। শিক্ষকদের মান কীভাবে নিধার্রণ করেন? ইউজিসির শতর্ অনুসারে আমরা প্রয়োজনীয় যোগ্যতা বিবেচনা করে এবং নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকি। এর আগে আমরা বহুল প্রচারিত দৈনিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকি। তাছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেসব শিক্ষক নিয়োগ লাভ করেন, তাদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে করে তারা শিক্ষক হিসেবে আরও দক্ষ হয়ে ওঠেন। ছাত্রছাত্রীদের গুণগতমান কীভাবে অজির্ত হয়? এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের শিখন মূল্যায়নের কনটিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্টের ওপর জোর দেয়া হয়। কনটিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্টের অংশ হিসেবে ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন গ্রæপ ডিসকাশন অন্তভুর্ক্ত। সেগুলোর গড় নাম্বার আবার তাদের মিডটামর্ ও সেমিস্টার ফাইনালের নম্বরের সঙ্গে যোগ হয়। একাধিক ইনকোসর্, মিডটামর্ ও সেমিস্টার ফাইনালের কড়া সিডিউল ও লেখাপড়ার চাপে তাদের অবশ্যই পড়ালেখা করতে হয়। ফলে গুণগতভাবে যোগ্য হয়ে ওঠে তারা। আপনাদের শিক্ষাদান পদ্ধতি? আমাদের শিক্ষাদান পদ্ধতি পুরোপুরি আধুনিক। প্রতিটি ক্লাসেই এই, মাল্টিমিডিয়া আছে। প্রতিটি গবেষণাগার অত্যাধুনিক। আর লাইব্রেরিও খুব উন্নত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গবেষকদের গবেষণাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জানার্লসহ নানা জানাের্ল প্রকাশিত হয়। লেখাপড়ার বাইরে সহশিক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১২টি ক্লাব আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই আমরা তাদের ইন্টানির্শপের ব্যবস্থা করে দিই। ফলে তারা চাকরির বাজারের জন্যও যোগ্য হয়ে ওঠেন। গবেষণাকে কতটুকু গুরুত¦ দিচ্ছেন? অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো আমরাও গবেষণার জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো বরাদ্দ পাই না। ফলে গবেষণাখাতে অন্যদের মতো আমাদেরও অথর্ সংকট আছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মানকে উন্নত করার জন্য আমরা সবোর্চ্চভাবে সহায়তা করি। চেষ্টা করি। আমাদের আলাদা আথর্-সামাজিক গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষকগণ পিএইচডির জন্য শিক্ষাছুটি পান। আমরা ছাত্র-শিক্ষকদের গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষায় সবোর্চ্চ সহযোগিতা করি। আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? আশাইউবিকে আমরা পরিকল্পিতভাবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষকই পূণর্কালীন। পাশাপাশি দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খÐকালীন শিক্ষক হিসেবে নানা বিভাগে শিক্ষাদান করছে। উপাচাযর্ হিসেবে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে আরও সন্তোষজনক পযাের্য় নিয়ে যেতে চাই। সেটিকে উত্তরোত্তর বাড়ানোই এই মুহূতের্ আমার প্রধান লক্ষ্য। এটিই একজন উপাচাযের্র প্রধান চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে পযার্প্ত শিক্ষক রয়েছেন, তাদের মানও খুব ভালো। তারা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা ফলাফলের অধিকারী। সরকার সব বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে নিদের্শনা দিয়েছে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এটি গুরুত্বপূণর্ সরকারি সিদ্ধান্ত। কিন্তু যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া বিরাট চ্যালেঞ্জও বটে। ফলে এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতি সরকারের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা উচিত। কেননা একটি স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ন্যূনতম এক একর জমির প্রয়োজন। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে ভালো লোকেশনে এই জমির অনেক দাম। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য আরও বিরাট অংকের টাকা লাগে। লেখাপড়ার নানা সুবিধা সৃষ্টিতে এই খরচ অনেক বেশি পড়ে। সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কেই কোনো ভতুির্ক দেয় না। তারা নিজের আয়ে চলে। আবার সেই আয়ের ওপর ভ্যাট কেটে নেয়।