রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠের বিষয় যখন নৃবিজ্ঞান

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আসিফ হাসান রাজু
শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষাথীর্রা
ক্যাম্পাস লাইফে ক্লাস-পরীক্ষা, ক্লাস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, গ্রæপ স্টাডি, দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়া এমন নানা কাজের মধ্য দিয়ে দিন কেটে যায়। আড্ডায় স্থান পায় নানা ধরনের সমসাময়িক আলোচনা। বুধবার বিকাল ৫টার দিকে। সূযর্ যখন ডুবতে শুরু করেছে। ঠিক সেই সময়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনিমির্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে আড্ডায় মেতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষাথীর্। আড্ডার ফঁাকে তাদের মাঝে কথা হচ্ছে নৃবিজ্ঞানের ভাবনা নিয়ে। নৃবিজ্ঞান সাধারণত মানুষের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে অধ্যায়ন করে থাকে। যে মানুষ সম্পকের্ গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিস বলে গেছেন, ‘জগতের বুকে বিস্ময়কর বস্তু আছে অনেক, কিন্তু তার মধ্যে মানুষই পরম বিস্ময়কর।’ সেই রহস্য ঘেরা জগত মাঝে পরম বিস্ময়কর প্রাণী, মানুষকে নিয়ে আলোচনা করে নৃবিজ্ঞান। বিশেষ করে মানুষের সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। নৃবিজ্ঞানের ভাবনাকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরে বিভাগের তৃতীয় বষের্র শিক্ষাথীর্ নূর মুশির্দা রাসূল বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে সম্পকর্যুক্ত বিষয় নিয়ে নৃবিজ্ঞান অধ্যয়ন করে। সকল কালের, সকল মানুষ নিয়ে এ বিষয়ের অধ্যয়নের অন্তভুর্ক্ত’। বিভাগের আরেক শিক্ষাথীর্ তানিয়া সুলতানা টফি বলেন, ‘নৃবিজ্ঞানের গবেষণা মানুষকে সামগ্রিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে। একটি জাতি কেন অন্য একটি জাতি থেকে আলাদা? কেন তারা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ধারণ করে? দৈহিক দিক থেকেই বা কেন আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে? তা বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে নৃবিজ্ঞান’। কতশত রহস্যময় এ জগতে রহস্যের অন্ত নেয়। আমি কে? আমার আবিভার্ব বা কোথা থেকে? কি আমার পরিচয়? এমন নানা প্রশ্ন আমাদের মনের মাঝে প্রতিনিয়ত নাড়া দিয়ে থাকে আর এই ভাবনা থেকেই জন্ম হয় নৃবিজ্ঞানের। যার আলোচনার বিষয় মানব সম্পকির্ত সামগ্রিক বিষয় নিয়ে। মানুষ তার জীবন ধারণের জন্য প্রকৃতিকে রূপান্তর ঘটিয়ে অভিযোজন প্রক্রিয়াকে সহজতর করেছে। যা অন্য প্রাণী থেকে মানুষকে করেছে পৃথক। সৃষ্টির আদি থেকে বতর্মান সময় পযর্ন্ত মানুষ নিজের প্রয়োজনে অবিরাম প্রকৃতিকে নিজের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়েছে। নৃবিজ্ঞানের ভাবনায় এই আদি অবস্থা থেকে শুরু করে সমসাময়িক মানুষের সঙ্গে সম্পকির্ত সব বিষয় সামগ্রিকভাবে আলোচনা করে থাকে। বলতে গেলে রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে মানুষের রান্নাঘর পযর্ন্ত এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যা কি-না নৃবিজ্ঞানের ভাবনার বাহিরে রয়েছে। নৃবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পকের্ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন খান আরিফিন বলেছেন, অতীত বতর্মানের নিরিখে মানুষের আবিভার্ব, বিকাশ এবং পৃথিবীর বুকে তার প্রতিষ্ঠার বিভিন্নমুখী বিচার বিশ্লেষণই নৃবিজ্ঞানের প্রধান বিষয়বস্তু। বিশ্বের সবর্ত্র ছড়িয়ে থাকা মানব ও তাদের সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করা নৃবিজ্ঞানের কাজ। বিভিন্ন সমাজের মানুষের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নৃবিজ্ঞানের ভাবনায় অন্যতম বিষয়। বতর্মান দেশের ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে বিষয়টিতে। ১৯৮৫ সালে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয় বিষয়টি। পরে ক্রমান্বয়ে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা, জগন্নাথ এবং সবের্শষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয় বিভাগটি। এ ছাড়া বিদেশের নাম করা নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি আজ প্রথম সারিতে রয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এ বিষয়ের আছে বহুমুখী পেশা। পেশাগুলো বেশ উপভোগ্য। এই বিষয়ের কমের্ক্ষত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, গবেষণা সংস্থা, নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশ সিভিল সাভির্স, শিক্ষাক্ষেত্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, এনজিও, প্রতœতত্ত¡, জাদুঘর, প্রজেক্ট ডিজাইন, আন্তজাির্তক সম্পকর্, গণমাধ্যম, সামাজিক সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থা, গামের্ন্টস শিল্প, স্বাস্থ্য, ফরেন্সিক বিভাগ, ইত্যাদি বিষয়ে পেশার সুযোগ রয়েছে।