প্রিয় ক্যাম্পাসে ফেরার অপেক্ষা

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

আনিসুর রহমান
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবেগ-অনুভূতির নাম ক্যাম্পাস। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা এখানে। এমনকি অন্য দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। একেক জনের বাড়ি একেক জেলা কিংবা অন্য দেশ থেকে এলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে খুব বেশি সময় লাগে না। সবাই হয়ে যায় একটা পরিবারের মতো। ক্যাম্পাসে কাটানো সময়গুলো আমাদের কাছে জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় এবং স্মরণীয়। কিন্তু করোনা এই মধুর সময়গুলো কেড়ে নিয়েছে। করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। গ্রীষ্মে সেই তীব্র রোদের দিনে আমরা (ছাত্রছাত্রী) বাড়িতে চলে এসেছি। আর দেখা হলো না তোমার (ক্যাম্পাস) সঙ্গে। চৈত্রের তীব্র রোদে তুমি হয়তো পিপাসায় কাতর ছিলে। পারিনি তোমাকে এক ফোঁটা জল দিতে। তারপর এলো কালবৈশাখী। কত বেগেই না আছড়ে পড়েছে তোমার ভবনগুলোর উপর। কালবৈশাখী ঝড়ের আঘাত থেকে তোমাকে রক্ষা করতে ক্যাম্পাসজুড়ে থাকা সারি সারি নারিকেল, মেহগনি, দেবদারু এবং বকুলগাছ বুক পেতে দিয়েছে। কিন্তু তোমার সে কষ্টের দিনে আমি সঙ্গী হতে পারিনি। তারপর তোমার সৌন্দর্যের রুক্ষতাকে বিদায় দিতে এলো বর্ষাকাল। বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টিতে ফিরে এলো তোমার রূপের সতেজতা। তোমার আঙিনাজুড়ে থাকা গাছ-পালা, লতা-পাতা ও ঘাসগুলো নতুন করে জীবন পেল। ভবনগুলোর উপর পড়ে থাকা সব ধুলো-ময়লা ভেসে গেল বৃষ্টির স্রোতে। তোমার সেই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার সৌভাগ্য আমার হলো না। পারলাম না শ্রাবণে মুষলধারে বৃষ্টির দিনে তোমার সঙ্গে ভিজতে। বৃষ্টিতে কানায় কানায় পূর্ণ লালকমল, নীলকমল, পদ্মকমল, তরঙ্গতণু ও সালসাবিলের (সবই পুকুর) সৌন্দর্য দেখা হলো না। ঋতুর রানী শরৎও এলো। হলের ছাদে বসে আকাশে থাকা ভাসা ভাসা সাদা মেঘের ভেলা দেখার দৃশ্য আমি ভুলি কেমন করে! তালতলা থেকে বঙ্গবন্ধু হলে আসা মন কাড়া পাকা তালের ঘ্রাণ উপভোগ করতে পারলাম না। হেমন্তে হলদে সাজে তোমাকে দেখা হলো না। দেখা হলো না শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা তোমার শিশির ভেজা আঙিনা। ক্যাম্পাসজুড়ে এখন বিরাজ করছে শূন্যতা। যে ক্যাম্পাস হাজারো ছাত্রছাত্রীদের পরম যত্নে আগলে রাখত। সে নিজেই এখন একাকিত্বের ব্যথায় জর্জরিত। খালি পড়ে আছে ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলো। হয়তো ধুলো-ময়লার স্তূপ পড়েছে। একটার পর একটা উৎসব-আয়োজনে ব্যস্ত থাকা অডিটোরিয়াম এখন নীরবেই দিন কাটায়। হয়তো ঘাস-লতা-পাতা তাকে ঘিরে ধরছে। যে খেলার মাঠের শিডিউল নিয়ে লেগে থাকত বাকবিতন্ডা। খুব সকালে মাঠে গিয়ে স্টাম্প বসিয়ে মাঠ দখলের পাঁয়তারা থাকত। ফুটবল আর ক্রিকেটের টান টান উত্তেজনা থাকত দর্শকদের মনে, মাঠ এখন জনশূন্য। মাঠগুলো এখন গরু-ছাগলের চারণভূমি। যে হলগুলোকে ছাত্রছাত্রীরা মুখরিত করে রাখত। ছুটির দিনে জমিয়ে আড্ডা হতো। রাত হলেই শোনা যেত ব্যর্থ প্রেমিকের গিটারের বেহুলা সুর। সে হল এখন জনশূন্য। সেখানে এখন পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশের বেঞ্চগুলো থাকত প্রেমিক যুগলদের দখলে। কাপলরা সেখানে বসে মন খুলে মনের না বলা কথা বলত। সেখানে এখন কারা বসছে? দীর্ঘদিন জনশূন্য থাকায় ক্যাম্পাস এখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ সাজে সেজেছে। কিন্তু প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা না থাকায় সে হয়তো ভালো নেই। ক্যাম্পাস ছেড়ে দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকায় ছাত্রছাত্রীরাও হতাশা আর অনিশ্চয়তায় ভুগছে। এই হতাশা দীর্ঘায়িত হলে হয়তো এসব শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যা দেখা দেবে। তাই আশায় স্বপ্ন বুনছি। দ্রম্নতই সুস্থ হবে পৃথিবী। আমরা ফিরতে পারব প্রিয় ক্যাম্পাসে।