শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতিটুকু তোলা থাক

শ্যামলী তানজিন অনু
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

পহেলা ফেব্রম্নয়ারি ২০২১। এই এক হওয়া হঠাৎই। করোনায় সব স্থবির হলেও আমরা শুরু করেছিলাম জীবনের তাগিদে বিসিএস/চাকরির পড়াশোনা। বেশ কয়েকজন পড়তাম একসঙ্গে। শিক্ষক ছিলেন নাইমুর ভাই। মানুষটা এত অমায়িক আর ভালো মনের আজ নতুন করে জানতে পারলাম। আমি বেশিদিন জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাইনি। নাইমুর ভাইয়ের ৩৮তম বিসিএসের গেজেটেড হওয়ায় আমাদের পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। খবর শুনে সবাই খুশি হলেও, পড়াবেন না শুনে ততটাই হতাশ।

২৯ জানুয়ারি হুট করেই জানানো হলো পহেলা ফেব্রম্নয়ারি একটা ঘরোয়া চড়ুইভাতি হবে। যেই বলা সেই কাজ। সকাল ১১টায় বের হয়ে পড়লাম সবাই। গন্তব্য জায়েদ ভাইয়ার বাড়ি। আমি আর বন্যা বেশ পথ গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সুবর্ণা আপুর জন্য। কারণ আমরা কেউ-ই জায়েদ ভাইয়ার বাড়ি চিনি না। সুবর্ণা আপু আসলে আমরা তিনজন ইজি বাইকে উঠলাম কারণ আমরা ভাবছিলাম একটু দূরে হয়তো বাড়িটা। কিন্তু অবাক করা বিষয় ৫ মিনিটও লাগেনি আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে। বাড়ি পৌঁছানোর পর আন্টির (জায়েদ ভাইয়ার আম্মু) সঙ্গে কথা বলে আমরা বসলাম একটা রুমে। একটুপর জলি আপু এসে আমাদের নাশতা দিলেন (চা, বিস্কুট, চানাচুর আর পাকোড়া) চায়ের স্বাদের কথা আর না বলি। তবে আন্টির হাতের পাকোড়াটা অসাধারণ ছিল।

নাশতা প্রায় শেষের দিকে এলো রিনি। প্রচুর বকবক করা একটা মেয়ে। হাসতে ও হাসাতে পটু। ও হঁ্যা বলে রাখা ভালো আমরা যাওয়ার আগেই আন্টি সব মসলাদি গুছিয়ে রেখেছিলেন। এতে আমাদের একটু কষ্ট কম হয়েছিল বলা যায়।

ছাদে গেলাম সবকিছু নিয়ে, এত গোছালো ছাদটা! একটা সুন্দর দোল খাওয়া দোলনাও আছে, আছে কিছু প্রজাতির ফুলের গাছ। সব মিলিয়ে যেমন পরিবেশ চেয়েছিলাম ঠিক তেমন।

প্রথমেই জলি আপু গরুর মাংসটা একটু কেটে সবকিছু দিয়ে প্রস্তুত করে চুলায় বসিয়ে দিলেন।

সময়ের স্বল্পতার জন্য বন্যা আর সুবর্ণা আপুকে পাঠানো হলো নিচে আন্টির রান্নাঘরে পোলাও রান্নার জন্য। গরুর গোশত চুলায় দেওয়া আছে, রিনি বন্যার ফোনে পছন্দমতো গান বাজাচ্ছে। গান বাজানোর উপকরণ (টু পয়েন্ট ওয়ান অডিও স্পিকার) দিয়েছিল বাপ্পা ভাই। এই মানুষটা বেশ হেল্পফুল। সবকিছু গুছিয়ে হাতের কাছে দেওয়া থেকে শুরু করে চুলা ধরিয়ে দেওয়ার কাজটাও উনিই করেছিলেন। গরুর গোশত রান্না যখন প্রায় শেষ দিকে তখন ছাদে উঠে এলেন নাইমুর ভাই। গোশতের স্বাদ পরীক্ষা করতে বেশ বেছে বেছে একটা গোশত নিলেন। খেয়ে বললেন বেশ হয়েছে তো!

অতঃপর নাইমুর ভাই চুলার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন আমার কয়টা ছবি তুলে দাও, যেন সবাইকে বলতে পারি রান্না আমি করেছি। বেশ হাসলাম আমি রিনি আর জলি আপু। গরুর গোশত রান্না শেষ হলে রোস্ট রান্নার পালা, ততক্ষণে আন্টির রান্নাঘরে বন্যা আর সুবর্ণা আপু পোলাও রান্না শেষ করে ফেলছে। গল্প শুনতাম রিনি খুব ভালো রোস্ট করতে পারে। তাই সেই মোতাবেক তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হলো। সঙ্গে বেশখানিক সাহায্য করলেন জলি আপু। ওদিক নাইমুর ভাই শুধু ছবি তোলায় ব্যস্ত। রোস্ট রান্নাটা রিনির পছন্দমতো হলেও সব উপকরণ জোগাড় ছিল না।

তবু যেমন চেয়েছিলাম আমরা তেমনই পেয়েছি। রান্না সব শেষ হলে সালাদ করার পালা, বন্যা আবার কাটাকাটি ভালো পারে এজন্য ওকেই বলা হলো। ইতিমধ্যেই আরও তিনজন উপস্থিত হয়েছিলেন, তাদের এই বিলম্বের কারণ ক্যাম্পাসে তাদের পরীক্ষা চলে। জাহিদ ভাই, সাদিয়া আপু আর মাইনুল ভাই। সবার চোখেই ক্লান্তির ছাপ। মনে হচ্ছে এখনই খেতে পারলে বাঁচে।

সবকিছু গুছিয়ে আমরা ছাদে পাটি বিছিয়ে বসে গেলাম খেতে, সবার মুখে একই কথা 'অসাধারণ হয়েছে সব রান্না'। কে কেমন খেতে পারে এ নিয়ে একটু হাসাহাসিও হলো। নাইমুর ভাইয়ের জন্মদিন ছিল জানুয়ারির ১৬ তারিখ কিন্তু সেই উদযাপনটা আমরা এইদিন করলাম। কেক কাটা হলো। সবাই কেক খেলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা। পরিবেশটা যেন আরও সুন্দর হতে লাগল। গান, আড্ডা, হাসাহাসি হলো অনেক।

শেষমেশ আমি আর বন্যা চলে এলাম। আমাদের বাড়ি একটু দূরে এজন্য। আরও কিছু ভালো মুহূর্ত, মনে রাখার মতো মুহূর্ত আমরা দুজন মিস করেছি। তবু মনে রাখব আজীবন, মনে রাখতে হবে। এই অল্পদিনে সবাই এত আপন হয়ে যাওয়ার স্মৃতিগুলো। ভালো মানুষ দূরে থাকলেও ভালো থাকুক।

শ্যামলী তানজিন অনু

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

ঝযধসড়ষুশযধঃঁহ৩৩৩@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে