মোঘল সম্রাট আকবর কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায় সহজ করতে চেয়েছিলেন। হিজরি এবং সৌরবর্ষের সমন্বয়ে তার নির্দেশনায় ফতেউলস্ন্যাহ সিরাজী প্রস্তুত করেছিলেন তারিখ ই ইলাহী। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত চলতো খাজনা আদায় আর পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু নববর্ষ। কালের পরিক্রমায় যা আজ হয়ে বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির অন্যতম অংশ। ভেবে দেখা জরুরি, যাদের জন্য এই উৎসবের শুরু সেই প্রান্তিক কৃষকরা কেমন জীবনযাপন করছেন। তাদের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোর প্রতি জাতীয়জীবনে কতটুকু শ্রদ্ধা প্রদর্শন হয়।
শুধু পান্তা-ইলিশ আর মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যেই নববর্ষকে সীমাবদ্ধ না করে ভাবনা শুরু হোক কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে। ইলিশের স্বাদ পৌঁছে যাক সব নাগরিকের ঘরে। পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের বুর্জোয়াকরণ রুখে তাতে প্রান্তজনের অংশগ্রহণ বাড়ানো কালের অন্যতম চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চাহিদা পূরণ ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে হলে প্রয়োজন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ গড়া। এগুলোর বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে দুর্নীতি, কুসংস্কার এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। নববর্ষ মানে রবীন্দ্রনাথ আমাদের শিখিয়েছেন, পুরনো দিনের গস্নানি ঝেড়ে ফেলে নতুন শুভর পথে চলা- সর্বজনের মধ্যে গড়ে তোলা হৃদ্যতার নব সেতুবন্ধন। সে জন্য প্রয়োজন সবার সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, প্রত্যেকের সংস্কৃতি বিকাশচর্চায় সহযোগিতা করা। তাই প্রত্যাশা করি, করোনা মহামারির এই কঠিন সময়েও নববর্ষ আমাদের আত্মিক বোধ জাগিয়ে তুলে নববর্ষ হবে সর্বজনের সংস্কৃতি বিকাশ এবং শোষণ-বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনিমার্ণের হাতিয়ার।
মেহেদী মামুন, ইংরেজি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
পুরো একটি বছর ঘরে কাটানোর পর নতুন বছরকে নিয়ে আমাদের উৎসাহের কমতি নেই। হয়তো আমরা আশা করছি নতুন বছরে এই কোভিড থেকে অন্তত মুক্তি পাওয়া যাবে। স্বপ্ন দেখতে দোষ কী? কিন্তু গত এক বছরে দেশে যে পরিমাণে সাম্প্রাদায়িক মনোভাব আর নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এতে ভয় হয় আমাদের দেশটা কি বদলে যাবে? যে দেশের স্বপ্ন নিয়ে এক সময়ে পথচলা শুরু করেছিল আমাদের অগ্রজরা, সেই স্বপ্নের দেশটা কি হারিয়ে যাবে? ইদানীং আশার চেয়ে ভয়ই বেশি হয়। তবুও প্রত্যাশা করি, নতুন বছরে আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য। এ নববর্ষে আমার সবচেয়ে প্রত্যাশা থাকবে, সাম্প্রতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকে বেরিয়ে আসে সব বাংলাদেশি একসঙ্গে হয়ে যাক। আমাদের দেশটা শিশু ও নারীদের জন্য নিরাপদ হোক, সংখ্যালঘুদের বাড়ি না পুড়ুক। নববর্ষে পুরনো সব জঞ্জাল সারানোর দায়িত্ব নিতে হবে তরুণ প্রজন্মকেই। আমরা সচেতন হলে গোটা দেশ সচেতন হবে। চলুন আমরা চুপ করে বসে না থাকি, আমরাই পদক্ষেপ নিই নতুন বছরকে দেশকে নতুন করে সাজানোর। নতুন সকাল আসুক, আমাদের হাত ধরে।
নিশাত তাসনিম, স্থাপত্য বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলা ১৪২৭ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বাংলা ১৪২৮ সালকে বরণ করতে প্রস্তুত গোটা বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই নতুন বছরে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা হবে করোনাভাইরাসমুক্ত বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্ব। বাংলাদেশের মানুষ তথা বিশ্বের বাঙালিরা করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির আশা নিয়ে ১৪২৮ সালকে বরণ করে নেবে।
আমাদের মধ্যকার বাঙালিয়ানা চেতনা যেন পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন কেন্দ্রিক না হয়ে বছরের বাকি দিনগুলোতেও নিজেদের ঐতিহ্যকে লালন করতে হবে। আমাদের রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আমরা যদি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চা না করি তবে এক সময়ে এগুলো কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে। সুতরাং দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে আমাদের ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
আজমীর হোসাইন, অর্থনীতি বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।