ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পানি লাগবে পানি?

৮ বছরের শিশুটি মাথায় করে ১২ কেজি ওজনের পানির কেস নিয়ে ‘পানি লাগবে পানি?’ বলে ডাকতে ডাকতে যাচ্ছে। হেঁটে যেতে পা কঁাপছে,  তবুও সে এগিয়ে যাচ্ছে। খালি গায়ে শুধু নীল রঙের হাফপ্যান্ট। দু-চোখ শুধু এদিক-ওদিক তাকিয়ে তৃষ্ণাতর্ খুঁজে যাচ্ছে। কখন তাকে কেউ ডাকবে, কখন কেউ একটি পানির বোতল কিনবে

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

মো. ইউসুফ জামিল
‘অনুষ্ঠান হইলে পানি বিক্রি করি অনুষ্ঠান না হইলে চকোলেট বেচি। ভিক্ষা করতে শরম লাগে তাই ভিক্ষা করি না শুধু চকোলেট বেচি। এহন প্রতিদিন একশ, দুইশ, তিনশ কামাই হয়। তা জমাইয়া আমি ঘর বাড়া দেই’ কথাগুলো বলছিল ৮ বছরের ছোট একটি শিশু। দুপুর তখন ১২.৫০। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ৫১তম সমাবর্তন। অভিভাবকসহ  গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে আসা সবার সমাবতর্নস্থলে প্রবেশের বিধি-নিষেধ থাকাই অনেকেই কাজর্ন হলে মাঠে বসে আড্ডা দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। হঠাৎ করেই দুটি চোখ এবং কান একটি জায়গায় থেমে গেল। ৮ বছরের শিশুটি মাথায় করে ১২ কেজি ওজনে পানির কেস নিয়ে ‘পানি লাগবে পানি?’ বলে ডাকতে ডাকতে যাচ্ছে। হেঁটে যেতে পা কঁাপছে,  তবুও সে এগিয়ে যাচ্ছে। খালি গায়ে শুধু নীল রঙের হাফপ্যান্ট। দু-চোখ শুধু এদিক-ওদিক তাকিয়ে তৃষ্ণাতর্ খুঁজে যাচ্ছে। কখন তাকে কেউ ডাকবে, কখন কেউ একটি পানির বোতল কিনবে। কাজর্ল হলের একটি একটি জায়গায় পানি রেখে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছে এমন সময় কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করতে ক্লান্ত বদনে উত্তরে আসল ‘পল্লব’। পুরো নাম জুনায়েদ আহমেদ পল্লব। দোয়েল চত্ব¡রের তিন রাস্তার মোড়ের পাশে থাকে। ছেলেটির মা হোসনে আরা শাহবাগেই ঘুরে ঘুরে ভাংগারি টোকাই। বাবার দিন মজুর শাহীন। প্রায় দুবছর হলো পল্লবদের এতিম করে দিয়ে নতুন করে সংসার বেঁধেছে দিন মজুর শাহীন। খেঁাজখবর নেয় না পল্লবদের । এক ভাই বোনের মধ্যে পল্লবদের ছোট। বড়-বোন আদাবরে অবস্থিত একটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছে। প্রতিদিন সকালে পানতা ভাত, দুপুরে কপালে যা জুটে আর রাতে প্রায় দিনই না খেয়ে কাটিয়ে দেয় মা-ছেলে। পড়াশুনা করো কিনা জিজ্ঞেস করতে হাফ ছেড়ে বলে উঠল ‘পড়াশুনা করি তো। হাইকোটের বটগাছ তলায় পড়ি। ভাইয়েরা পড়াই। ভাইয়েরা কইছে রাতেই ৮টার ইস্কুলে যে রেগুলার আইবো প্রতিদিন। তারে ক্লেলাশ ওয়ানে ভির্ত কইরা দিব। খাতায় যার নাম আছে তারেই ভতির্ করে দিব। আমার খাতায় নাম আছে’। বড় হয়ে অনেক রকমের চাকরি করার ইচ্ছা তার। চাকরি করে তার মাকে টাকা দিয়ে বড় লোক করেই সে ছাড়বে বলে জানাই। শুধু পল্লব নয়, হাসিনা. কাজল. মনিরদের মতো শাহবাগে আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত আরও অনেক ছিন্নমূল শিশুর জীবনের গল্পটা অনেকটা একি সুতোয় গঁাথা। দিন যান দিন আসে তবুও পল্লবদের মতো শিশুদের ভাগ্য একই জায়গায় স্থির হয়ে থাকে আজীবন।