বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শতবর্ষ পাড়ি দিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

বাঙালি জাতির প্রাণের স্পন্দন বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পাড়ি দিল। বীরের জাতি হিসেবে বাঙালিদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আর এসব ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেটি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এ বিষয়ে শতবর্ষ নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অনুভূতি ও মতামত তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জামিন আহমদ
নতুনধারা
  ০৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনুভ‚তির নাম
মো. মোজাম্মেল হক
শিক্ষার্থী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মনে এলেই হৃদয়ে এক অন্যরকম অনুভ‚তির সৃষ্টি হয় যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ক্যাম্পাসের প্রতিটি ঘাস আর বৃক্ষ আমার সেই অনুভ‚তির সাক্ষী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আবেগ কাজ করেছিল মূলত কলেজে পড়ার সময়টাতেই। তাই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজের জীবনকে ধন্য মনে করছি। যাহোক, প্রিয় শতবর্ষী এই বিদ্যাপীঠ আজ নানান সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে আবাসন সমস্যা সবচেয়ে প্রকট। একদিকে যেমন সমৃদ্ধ লাইব্রেরি নেই তেমনি নেই গবেষণার পর্যাপ্ত বরাদ্দ। ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু নিরাপত্তার পাশাপাশি সুস্থ রাজনীতির চর্চা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এ বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। প্রাণের এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক দুর্বার গতিতে সেই প্রত্যাশাই করি।
বিদ্যমান সংকটগুলোর আশু সমাধান জরুরি
ফারহান ইশরাক
ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের সন্ধিক্ষণে এসে একটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, বাংলাদেশের প্রাচীনতম এই বিদ্যাপীঠটির অর্জন ও প্রাপ্তির সংখ্যা অজস্র। বিশেষ করে বাঙালি জাতিসত্ত¡ার স্বতন্ত্র বিকাশ ও পরিপূর্ণতা লাভের দিনগুলোতে ঐতিহাসিক ভ‚মিকা রেখেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। তাই সময়ের পরিক্রমায় সামর্থ্যরে অতিরিক্ত প্রত্যাশার ভারও তৈরি হয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা শুভানুধ্যায়ী নয়, এখনো দেশের সিংহভাগ মানুষ দারুণ কিছুর আশা করে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে শতবর্ষের এই দীর্ঘ পথচলায় এই বিদ্যাপীঠের সংকটগুলোর সমাধান হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিশেষ করে মানসম্মত গবেষণা বৃদ্ধি, আবাসিক সমস্যার সমাধান, লাইব্রেরি বর্ধিতকরণ, ক্যাম্পাসের যানজট নিরসন, ভর্তি ও অন্যান্য কাজে প্রশাসনিক জটিলতার অবসানসহ প্রভৃতি সমস্যার সমাধান হলে শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রা নতুন মাত্রা লাভ করবে বলে বিশ্বাস করি।
শতবর্ষেও চির উজ্জ্বল যার যৌবন
মো. তাসনিম হাসান আবির
শিক্ষার্থী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, গৌরব সবকিছুর সঙ্গে যে নামটি ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেÑ সেটি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রেরণার নাম, অনুপ্রেরণার নাম, একটি ইতিহাসের নাম, অধিকারের নাম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নাম। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই যার নাম জড়িয়ে আছে নিজ দেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। শুধু তাই নয়Ñ জাতির ক্রান্তিকালে যখন সবাই দিশাহারা হয়ে গেছে, তখন পথ দেখিয়েছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শতবর্ষী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনÑ সব জায়গায় অবদান ছিল এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
সুতরাং শতবর্ষে এসে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। যেমনÑ সুস্থ রাজনীতির চর্চা ,আবাসিক সমস্যার সমাধান, হলগুলোতে খাবারের মানোন্নয়ন, অত্যাধুনিক গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা, টিএসসির ঐতিহ্য বজায় রেখে আধুনিকায়ন ও বহিরাগত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। এছাড়া লেখাপড়ার মান বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগেও চাই স্বচ্ছতা।
বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিষ্ঠান
শেখ মারজান
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির জীবনে যা কিছু বড় বড় অর্জন সবকিছুতেই এই বিশ্ববিদ্যালয় নিবিড়ভাবে জড়িত? বলতে গেলে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান বাঙালি জাতির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পালাবদলের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিষ্ঠানটির সুদীর্ঘ এই পথচলায় যেমন অনেক প্রাপ্তি রয়েছে তেমনি রয়েছে অনেক বিসর্জন। এ দেশের ইতিহাস বিনির্মাণে অবদান রাখলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল কাজ মৌলিক গবেষণায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই বিশ্ববিদ্যালয় এখনো এদিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে? লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অনুপাতে অতি নগণ্য? তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের অধিকাংশ কার্যক্রম এখনো সেই সনাতন পদ্ধতিতেই চলে আসছে যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও ভোগান্তির বিষয়ে পরিণত হয়েছে? এই সমস্যাগুলোর সমাধানই হলো শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মূল প্রত্যাশা।
শতজনমের ভালোবাসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মো. ফেরদৌস আলম
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯২১ সালে এক যুগ সন্ধিক্ষণে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আসন্ন ১ জুলাই দেশের সর্বপ্রাচীন এ বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করবে। বাঙলি জাতি শুধু নয়Ñ এ ভ‚খÐের সব মানুষের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও সংগ্রাম পরিণতি লাভ করার মিছিলে আলোকবর্তিকা হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে গড়ে উঠলেও বাংলাদেশের দ্রæত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট ও ক্রমবর্ধমান পরিসরে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেই ধারা অনেকটাই ব্যাহত করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এই শিক্ষালয়। শতবর্ষের মাইলফলক উদ্যাপনের মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হবেÑ এ প্রত্যাশা শিক্ষক-শিক্ষার্থী নির্বিশেষে সবার। আমি মনে করি, মানসম্মত যুগোপযোগী শিক্ষাই পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ঐতিহ্য সমুন্নত করতে।
গৌরবোজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম।
মো. রকিবুল হাসান
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে আপসহীন হয়ে বারবার তার শৌর্য প্রমাণ করেছে। দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে তা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেখায় পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ না থেকে কীভাবে সকল বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে রুখে দাঁড়াতে হয়, কীভাবে মাথা উঁচু করে কথা বলতে হয়, কীভাবে সত্য আর সুন্দরের পথ দেখতে হয়। ত্যাগ, সংগ্রাম আর সাফল্যে প্রাণের এই বিদ্যাপীঠ তার শততম বছরে উদ্?যাপন করছে। সুস্থ রাজনীতি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, ক্যাম্পাসের আধুনিকায়ন ও সবুজায়ন এবং গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে চরম উৎকর্ষ সাধিত করে অতীতের সেই সাফল্যময় গৌরব ফিরে আসুক, শতবর্ষে সেই প্রত্যাশাই করি।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে