কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের জন্য অন্যতম উৎসব। এই ঈদে ধর্মীয় নিয়ম মেনে আলস্নাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানির গোশতের বড় একটি অংশ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়। পশু জবাইয়ের পর একদিকে যেমন বর্জ্য অপসারণ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয় অন্যদিকে চামড়ার ন্যায্য দাম নিয়েও পোহাতে হয় বিড়ম্বনা। এ নিয়ে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জামিন আহমদ।

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার রাকিবুল হাসান শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল- আজহা বা কোরবানির ঈদ অন্যতম। এ ধর্মীয় উৎসবে আলস্নাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করার রীতির প্রচলন রয়েছে। কোরবানির সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সম্পর্কিত। কিন্তু প্রতি বছর আমাদের দেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এ নিয়ে হযবরল অবস্থা দেখা যায়। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুনির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করতে হবে পাশাপাশি পশুর রক্ত ও অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ নিতে হবে এবং আমাদেরও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ কিংবা জনস্বাস্থ্যের উপর যেন বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেই সার্থকতা মো. তাসনিম হাসান আবির শিক্ষার্থী, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছর ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা মহান আলস্নাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানির মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল-আজহা উদ্‌যাপন করে। কিন্তু প্রতি বছরই আমরা লক্ষ্য করি এই লাখ লাখ পশু কোরবানির পর প্রচুর বর্জ্য জমা হয় এবং সেগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে জনগণের দুর্ভোগ হয়। তাই কর্তৃপক্ষকে দ্রম্নততার সঙ্গে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই বর্জ্য অপসারণ করার পাশাপাশি জনগণকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। আমাদের উচিত যত্রতত্র পশু কোরবানি না করে নির্দিষ্ট স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানি করা। আর পশুর চামড়াও সঠিক সংরক্ষণ করতে হবে সেই সঙ্গে সরকারকে চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ প্রতি বছরই আমরা দেখি, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের অপকর্মের জন্য ক্রেতারা এবং ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা চামড়ার সঠিক মূল্য পায় না। তাই কোরবানির এই ত্যাগের মাহাত্মকে সমুন্নত রাখতে পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং ন্যায্য মূল্যে চামড়া বিক্রি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগে হোক বর্জ্য পরিষ্কার সাইফুল ইসলাম হাফিজ শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের জন্য অন্যতম উৎসব। এই ঈদে ধর্মীয় নিয়ম মেনে আলস্নাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা হয়। পশুর গোশত খাবারের জন্য নিয়ে গেলেও আমরা এর বর্জ্যের স্থান পরিষ্কার হয়েছে কিনা অনেকেই তার খেয়াল রাখি না। কিন্তু বর্জ্য পরিষ্কার করা একজন সুনাগরিকের যেমন দায়িত্ব তেমন একজন মুমিনেরও কর্তব্য। বর্জ্যের স্তূপ থেকে ছড়াতে পারে দুর্গন্ধ, রোগ-জীবাণু ইত্যাদি। তাই সেটা দ্রম্নতই পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। সিটি করপোরেশন বা কর্তৃপক্ষের জন্য রেখে না দিয়ে নিজেরা সম্মিলিতভাবে পরিষ্কার করলে- মানুষ ও পরিবেশের জন্য উত্তম কাজ হবে। বর্জ্য পরিষ্কারে কর্তৃপক্ষকে অধিক জনবল নিয়োগ দিয়ে পরিবেশ ও মানুষকে রোগ-জীবাণু থেকে রক্ষা করতে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত জরুরি মো. আশরাফুল ইসলাম শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আলস্নাহর প্রতি আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ হাজার বছর ধরে কোরবানি পালিত হয়ে আসছে। আর কয়েকদিন পরেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো পশু কোরবানি। প্রতি বছরই পশুর বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও অসচেতনতার কারণে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। যেখানে-সেখানে পশুর বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকে। কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্টের একটি অংশ যদি খোলা জায়গায় কিংবা চ্ছ্রনে ফেলা হয় তাহলে তা থেকে দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। তাছাড়া, চামড়ার কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে অনেকেই চামড়া যেখানে-সেখানে ফেলে দেন। এতেও চামড়া পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং পরিবেশ দূষিত হয়। কোরবানির পর পশুর রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, মল ও তরল পদার্থ কোনো অবস্থাতেই যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। এগুলো নির্ধারিত জায়গায় ফেলতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রতি সুদৃষ্টি চাই অনিল মো. মোমিন অর্থনীতি বিভাগ শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। পবিত্র কোরবানি শেষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে কোরবানির বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ ছড়ায় ও মশা-মাছির চারণক্ষেত্রে পরিণত হয় যা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি নাগরিক জীবনে চরম ভোগান্তি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। তাই পশু জবাইয়ের পর গোবর ও উচ্ছিষ্ট খোলা জায়গায় না ফেলে নির্ধারিত স্থান যেমন ডাস্টবিন বা কন্টেইনারে ফেলা উচিত। কোরবানির পর সে স্থানের রক্ত জীবাণুনাশক পানি দিয়ে ধুয়ে বিস্নচিং ছিটিয়ে দিতে হবে যাতে করে দুর্গন্ধ বা রোগ-জীবাণু সৃষ্টি হতে না পারে। একইভাবে চামড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিধায় তা দ্রম্নত সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি বছরই দেখা যায় মূল্যবান এই বস্তুটির যথার্থ দাম না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রেখে প্রতিবাদ ও সংরক্ষণে তাদের সামর্থ্যহীনতার কথা জানান। এটি খুবই অমানবিক একটি বিষয়। তাই এসব ব্যবসায়ীদের প্রতি চামড়া সংশ্লিষ্ট মহলের সদয় দৃষ্টি প্রয়োজন।