কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

গানে-গল্পে সিলেট ভ্রমণ

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সিয়াম চৌধুরী
রাত প্রায় বারোটা। কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনের জীণর্ প্লাটফমের্ একদল চঞ্চল মানুষের আনাগোনা। হুটহাট এদিকে-সেদিকে বেপরোয়াভাবে তৈরি হচ্ছে ছোটখাটো আড্ডা। কারও হাতে চায়ের কাপ, কেউ খাচ্ছেন সহকমীর্র যতœ করে রান্না করা খিচুড়ি, কেউ দলের কনিষ্ঠ সদস্য অপ্রতিমকে নিয়ে খুনসুটিতে ব্যস্ত। উদ্দেশ্য সবার একটাইÑ একটু পর পেঁা-ঝিকঝিক করতে করতে যে ট্রেনটা প্লাটফমের্ এসে থামবে সেটার নিধাির্রত বগিতে চেপে বসা। আর ট্রেনের গন্তব্য সিলেট! গত ১৪ আগস্ট হাসি, আড্ডা, আর অফুরান গল্পের ভেলায় চড়ে থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণপ্রেমী সদস্যরা ছুটে গিয়েছিলেন সিলেটে, যেখানে অপরূপ সৌন্দযর্সম্ভোগের দুই নিদশর্ন বিছানাকান্দি পাথর কোয়েরি ও রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে সদলবলে হয়েছে জলকেলি। গান আর খুনসুটির মিশেলে গভীর রাতে নদী আর বনের কোলঘেঁষে ছুটে যাওয়া ট্রেনের বগি হয়ে উঠেছিল আস্ত একটা রঙ্গমঞ্চ। আর নাট্যকমীের্দর প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে সেটিই তো স্বাভাবিক! সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বৃষ্টির ফেঁাটায় আমন্ত্রণ জানালো নতুন ভোরে। তাতে ভ্যাপসা গরম থেকে রেহাই পাওয়া থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরা যেন গলা ছেড়ে বললেনÑ শুভ সকাল চায়ের রাজ্য! অবশ্য চায়ের জন্য সিলেট বিখ্যাত হলেও এই ভ্রমণে দশর্নডালি সাজিয়ে বসেছিল রাশি রাশি জল। লেগুনায় অঁাটসঁাট হয়ে চেপে বসে থিয়েটার কুবির সদস্যরা অজান্তেই যেন জানিয়ে দিলেন নিজেদের গভীর আন্তঃসম্পকর্টুকু। ভোজনরসিকদের প্রিয় জায়গা পঁাচ ভাই রেস্তোরঁায় পেটপুড়ে খেয়েদেয়ে গন্তব্য যখন বিছানাকান্দি, ফেঁাটায় ফেঁাটায় বৃষ্টি যেন তখনই এনে দিয়েছিল বহুল আকাক্সিক্ষত জল-বিলাসের সুযোগ। বিভিন্ন আকারের পাথর, একে অপরকে জড়িয়ে আছে সুদৃঢ় বন্ধনে। তার ফঁাক গলে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ নদীর জল। হুট করে জেগে ওঠা সূযের্র কিরণ শরীর দিয়ে ফেঁাটায় ফেঁাটায় ঘাম ঝরানোর আগেই সবাই ঝঁাপিয়ে পড়লেন অবাধ সেই স্রোতে। একাধারে রৌদ্র এবং নদ স্নান সেরে নৌকায় চড়ে দেখা হলো পাহাড়, মেঘ, বন আর মাটির মানুষের জীবনচিত্র। মধ্যাহ্নভোজনের পর বদলে গেল গন্তব্য, তবে যথারীতি অটুট জলের খেলা। চার চাকার ছোট গাড়িগুলো এবার ছুটল রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের উদ্দেশে। ভাঙা রাস্তা আর ক্লান্তির অভিযোগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল পানির মধ্যে নৃত্যরত হিজলগাছ দেখে। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় তখন চলছে নিঃশব্দে জলার বন দশর্ন। স্বচ্ছ এবং ঠাÐা পানির লোভ সামলাতে না পেরে কেউ কেউ হাত বাড়ালেন নৌকার সীমানার বাইরে। তেমনি কোনো মাঝির রসিকতাÑ সাপ আছে কিন্তু! সাপের দেখা পাওয়া না গেলেও অবশ্য এই নৌকা ভ্রমণ ছিল দুঃসাহসিক অভিযানের রোমাঞ্চে ভরপুর। এবড়োখেবড়োভাবে ছড়িয়ে থাকা ডালপালার ফঁাকফোকরে আগুয়ান একেকটি সাবধানী ডিঙি নৌকো। হুট করে কারও ক্যামেরার লেন্স চালু হলেই তানজিম, মাহবুবা, ফাহাদ, আনিকা, ইশতিয়াক কিংবা সুইটিরা ছবির জন্য পোজ দিচ্ছিলেন। পরক্ষণেই আবার কারও সতকর্বাতার্Ñ ছবি তুলতে গিয়ে যেন নৌকা না উল্টোয়! ওয়াচ টাওয়ারের পাশে নৌকায় পসরা সাজানো অস্থায়ী টং দোকানে চা-নাস্তা সারলেন সবাই, এবার পৃষ্ঠপোষক থিয়েটার কুবির উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাহিদা বেগম। স্মৃতিময় সিলেট ভ্রমণ এখনো যেন লেগে রয়েছে তার প্রতিটি নেফ্রনে। বললেন, ‘দলছুটের আনন্দ অনেক। একঝঁাক তারুণ্যের চঞ্চল আমন্ত্রণ মোটেও উপেক্ষা করার মতো নয়। এমনিতেই বন-বাদাড়ে ঘোরার লোভ আমার অনেক। আর তা যদি হয় প্রাণের সংগঠন থিয়েটারের সাথে, তাহলে তো কথাই নেই! তো বেড়িয়ে পড়লাম। ভ্রমণের আবেগ, উৎসুক সংসগের্র সুখ, প্রাণের উচ্ছ¡াসে কাটিয়ে দিলাম কিছুটা সময়। যদিও সিলেটের বিছানাকান্দি বা রাতারগুল পূবর্ উপভোগকৃত ট্যুর, তবু বছর বছর সময়-অসময় এই তরুণসংস্পশের্ আরও এমন চমৎকার ভ্রমণের আনন্দে মেতে উঠতে চাই বার বার।’ মঞ্চনাটক এবং অভিনয় নিয়েই যাদের জীবন, সেই দলের প্রধান, থিয়েটার কুবির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘স্বদেশি স্পন্দনে তারুণ্যের জয়গানেÑ এই ¯েøাগানকে পুঁজি করে আমাদের পথচলা শুরু। সেই তারুণ্যে নব উচ্ছ¡াসের মালায় আরও একটি পুঁতি গেঁথে রাখার জন্যই মূলত আমাদের এই আনন্দভ্রমণ। পাহাড়, নদী, নৌকা, ঝরনা, প্রকৃতির একদম কাছ থেকে জীবনকে উপভোগ, একদল নাট্যকমীর্র বিচিত্র প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা ক্রিয়াকলাপ; সব মিলিয়ে জীবনের অন্যতম সেরা একটি অভিজ্ঞতা। তবে সাবেক-বতর্মান থিয়েটারকমীর্, আমদের উপদেষ্টামÐলীর বেশ কয়েকজনÑ যারা ভ্রমণে শরিক হতে পারেননি, তাদের মনের গভীর থেকে মিস করেছি। আশা করি থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নাট্যকমের্র পাশাপাশি এই ধরনের এডভেঞ্চার সবসময় চালু রাখবে।’