বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

'দীর্ঘ লকডাউনজুড়ে সশরীরে ক্লাস নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম'

নতুনধারা
  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

মো. আলমগীর হোসেন

প্রভাষক

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়

চিরাচরিত কথায় আছে, শিক্ষক এমন একজন মানুষ যিনি অন্য সব পেশার মানুষ সৃষ্টি করেন। আর শিক্ষার্থীরা হলো সেই শিক্ষকদের প্রাণবায়ু। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেলবন্ধন হয় শিক্ষাঙ্গনের মাধ্যমে। ডায়েরির পাতা ধরে ঠিক ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে স্থবির হয়ে আছে মেলবন্ধনকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাঙ্গন। যদিও শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে তাদের শিক্ষাঙ্গন ও আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যে দেশের অনেক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচল হয়েছে।

আমরা সবাই জানি, একজন মায়ের কাছে সন্তানের গুরুত্ব যতখানি, ঠিক তেমনি শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীর মূল্য ততখানিই। ব্যক্তিজীবনের পাশাপাশি শিক্ষকদের মনন ও মগজে চিন্তার জায়গা সবসময় দখল থাকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবনায়। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রস্তুতি নিতে থাকে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে রওনা হওয়ার জন্য। আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগেও পরবর্তী দিন ক্লাসে কি পড়াতে হবে সেটা মাথায় সেট করেন। এরকমভাবে, শিক্ষকরা সকালে ঘুম থেকে ওঠেন এবং রাতে আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের কথা মনে করতে থাকেন। মোদ্দাকথা, শিক্ষার্থীরা হলো শিক্ষকদের অক্সিজেন। দীর্ঘ ১৮ মাস অক্সিজেন ছাড়া শিক্ষকরা কেমন ছিলেন? তাজা তাজা শিক্ষার্থীদের দেখতে না পেয়ে শিক্ষকরা যেমন বিষণ্নতায় ডুবে আছেন তেমনি শিক্ষার্থীদের পদচারণা ছাড়া সবুজ ক্যাম্পাসও হয়ে আছে মরুভূমিময়। একাডেমিক কাজের জন্য শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে যাতায়াত করলেও শিক্ষার্থীরা ছাড়া ক্যাম্পাস যেন নীরব-নিথরই থাকে।

একইভাবে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জরাজীর্ণ হয়ে আছে দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে। উপরের ছবিতে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষকরা প্রতিক্ষার প্রহর কাটিয়ে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের আগমনের জন্য অপলক তাকিয়ে থাকার প্রহর কেটেছে। যদিও আমরা এই শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য অনলাইন পস্ন্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার গতি ধরে রেখেছি। যখন সব কলিগরা এক হয়ে একটু আড্ডা দেওয়ার চেষ্টা করেছি তখনই সবার মুখে একটাই ধ্বনি বহুবার শুনেছি, কবে যে ক্লাসে দাঁড়িয়ে দুচোখ মেলে শিক্ষার্থীদের দেখতে পাবো, কবে যে তাদের পড়াতে পারব!

বিভাগের কাজ পরিচালনার জন্য আমাদের লকডাউনের মধ্যে প্রায়ই ক্যাম্পাসে আসতে হয়েছে। অফিসে যাওয়া-আসার পথে যখনই আর যতবারই জানালার ফাঁকা দিয়ে ক্লাসরুমের দিকে চোখ পড়েছে ততবারই অজান্তেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ধুলোমাখা হলরুম, ক্যাফেটোরিয়া, কমনরুম এগুলোর দিকে তাকালেই চোখের কোণে আবছা করে জল চলে এসেছে। চলতি মাসের ১ তারিখেই ক্যাম্পাস খোলার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়। ঘোষণাটি শোনার পর থেকেই আমরা সবাই অতি আগ্রহের চোখে তাকিয়ে ছিলাম শিক্ষার্থীদের পদচারণায়।

উলেস্নখ্য, আমার শিক্ষকতার বয়স প্রায় দুই বছর হলেও ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে ক্লাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি মাস পাঁচেক। তারপরে ভয়াবহ মহামারির তান্ডবলীলা শুরু হলো। শিক্ষার্থীদের মনোবল দৃঢ় রাখার জন্য ভার্চুয়ালি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। এবার অপেক্ষার পালা শেষ করে ক্লাসে দাঁড়িয়ে আবারও পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ঠিক যেমন করে সুবেহ সাদিকের পর পূর্ব আকাশ অপেক্ষার স্তর কাটিয়ে সূর্যের রক্তমাখা কিরণের তরে আলোকিত হয়ে ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে