চড়ুইভাতি

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

আসিফ হোসেন
ঘড়ির কাঁটা সকাল আটটা অতিক্রম করেছে। ডিপার্টমেন্টের গ্রম্নপে অলোকের মেসেজ। 'কেউ কি আমার সাথে মুরগি কিনতে শেখ পাড়াতে যাবি?'। আজ ডিপার্টমেন্টের পিকনিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পিকনিকের নাম নাকি 'চড়ুইভাতি'। ভুল করে গ্রম্নপের মেসেজে ক্লিক পড়ে গেল আমার। অলোকের মেসেজটা দেখলাম। আর আমার উপর বর্তালো তার বাজার সঙ্গী হওয়ার দায়িত্ব। কোনোমতে গুছিয়ে গেলাম অলোকের কাছে। মুরগি কেটে প্যাকেট করার কাজ প্রায় সম্পন্ন। অলোক এর মধ্যে শসা কিনে নিয়েছে। অবশিষ্ট বাজারের কাজ গতকালই সম্পন্ন হয়ে গেছে। মেয়েগুলো তাদের হলে মসলা বাটছে। মুরগি আর শসা নিয়ে আমি আর অলোক গেলাম ডেকোরেশনের দোকানে। সেখান থেকে যাবতীয় হাঁড়ি, গামলা, চামচ আর মিউজিক সিস্টেম ভ্যানে লোড করে পৌঁছে গেলাম আমাদের পিকনিক স্পট ইবির মফিজ লেকে। সেখানে গিয়ে দেখা মিলল হাতেগোনা ৬-৭ জনের। ঘড়ির কাঁটা ১০টা অনেক আগেই ছাড়িয়েছে। লেগে গেলাম আমরা বিদু্যৎ লাইন টানা, চুলা তৈরি, পানি আনার কাজে। এরই মধ্যে হাজির মেয়েরা। একে একে সবাই আসতে শুরু করল সবাই। শুরু হলো রান্না করার যাবতীয় কাজ। আনিকা তত্ত্বাবধায়ক ও কর্মী উভয়েরই মূল দায়িত্বে। মেয়েরা রান্না, কাটাকুটিসহ মূল কাজগুলো করছে। আর আমি, নুরুল, নয়ন কাজ করছি তাদের সাহায্যকারী হয়ে। জ্বালানি কাঠ আনা, চুলায় জ্বাল দেওয়া, পানি আনা, পাত্র ধোয়ার মতো কাজ। আর আঁখি, নাহিদাসহ কিছু সদস্য ব্যস্ত ফটো শুটিংয়ে। অপরপাশে, কিছু বন্ধু মাইকে গান বাজাচ্ছে আর নাচছে। অন্যদিকে রিম্পা, নাদিয়া, মিষ্টি, রিয়াদরা নীরব দর্শক। তারা লেকের এপাশ-ওপাশ ঘুরছে, আর খোশগল্প করছে। রান্নার পাশে দেখা গেল কিছু সমস্যা। কুয়াশাতে হালকা ভেজা কাঠগুলো জ্বলতে চাচ্ছে না। নয়নকে দিয়ে আনানো হলো পাটকাঠি। পাটকাঠির জোগান অতিরিক্ত চাহিদা উপলব্ধি করে বন্ধু হানিফ স্বতঃস্ফূর্তভাবে একগাদা কোথা থেকে পাটকাঠি আনল। সব কাজ যেহেতু রান্না বিষয়ক, ভেবেছিলাম মেয়েরাই বেশি কাজ করবে। তবে ভাবনাতে ফাটল ধরল। আমাদের এক বান্ধবী শ্যামলীর স্বামীই রান্নার দায়িত্ব হাতে নিলেন। দুলাভাই হয়ে গেলেন মূল রাঁধুনি। শ্যামলী আর দুলাভাই উভয়ই রান্নার কাজ করছে। আর তাদের পিচ্ছি মেয়েকে ঘিরে বাকিদের আহ্লাদি ও ব্যস্ততা। লেকের একপাশে বন্ধুরা জমা হয়ে গলা ছেড়ে গান ধরছে। আবার কখনো মোবাইলে লুডু খেলছে। আনাড়ি রাঁধুনিদের সমন্বয়ে ৪টা নাগাদ সম্পন্ন হলো আমাদের রান্না। পোলাও রান্না হলো দু'বারে। প্রথমবারের রান্না শেষে খেতে বসতে বলা হলো। ৩০ জন মতো প্রথম বারে খেয়ে নিল। আমরা খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করলাম। পরে আমরা খেতে বসলাম আর অন্যরা পরিবেশন করল। এভাবেই খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, ব্যস্ততা, হাসি, মজা আর বিনোদনের মধ্যদিয়ে কাটল দিনটি। সম্পন্ন হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের টু্যরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চড়ুইভাতি। যান্ত্রিকতার যুগে আমাদের জীবনে এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়োজন হৃদয়ে সিন্দুকে স্মৃতি হয়ে জমা থেকে যাবে। যেগুলো পেশাজীবনের ব্যস্ততায় প্রশান্তির দোলা দিয়ে যাবে।