ইকবাল সিদ্দিকী কলেজ

করোনাকালে শিক্ষা বিস্তারের বাতিঘর

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

মো. ইমু হোসাইন, প্রভাষক
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস এলাকার সবুজ বিটপী ঘেরা প্রশান্ত পরিবেশে ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটির পৃষ্ঠপোষকতায় ৩ দশকের বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে শিক্ষাবিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কচি-কাঁচা একাডেমি। এ অঞ্চলের বিদ্যোৎসাহী শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ধারাবাহিক অনুরোধ এবং পরামর্শের ফলে ২০১৫ সালে ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইকবাল সিদ্দিকী কলেজ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কলেজটি তার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই মানসম্মত শিক্ষা-কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। উচ্চ মাধ্যমিকে ধারাবাহিক ঈর্ষণীয় ফলাফল ছাড়াও কলেজটি ব্যাপকভাবে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে একটি সফল মহাবিদ্যালয়ের নতুন ধারণা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বৈশ্বিক অতিমারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সারাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যখন স্থবিরতা নেমে আসে, অর্ধ সহস্রাধিক দিন ধরে দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর ক্লাসরুম তালাবদ্ধ থাকলেও ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের তৎপর কর্মব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনুকূল শিক্ষাবস্থা বজায় রাখতে। কোভিড পরিস্থিতিতে ইকবাল সিদ্দিকী কলেজ দুই ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করে, (ক) শিক্ষা কার্যক্রম (খ) সামাজিক কার্যক্রম (ক) শিক্ষা কার্যক্রম : দেশের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃচিন্তাগ্রস্ত এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছিল তখন ইকবাল সিদ্দিকী কলেজে শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে নিয়মিত এড়ড়মষব গববঃ পস্ন্যাটফর্মে অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করা হয় এবং অনলাইনে পাঠদান ও বাড়ির কাজ দেওয়া হতো। শিক্ষার্থীরা ক্লাসগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে ও বাড়ির কাজ সম্পন্ন করে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা সরকারি নির্দেশনানুসারে সব অ্যাসাইনমেন্টের কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করে। অনলাইনে লাইভ ক্লাসের পাশাপাশি ভিডিও ক্লাসেরও আয়োজন করা হয়। ক্লাসগুলো যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষাদানের জন্য ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের শিক্ষা উপকরণ হিসেবে স্মার্ট বোর্ড স্থাপন করা হয়। ওছইঅখ ঝওউউওছটঊঊ ঈঙখখঊএঊ ইউটিউব চ্যানেলে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের ১৩০০টিরও অধিক ক্লাস সংরক্ষিত রয়েছে যা দেখে শুধু অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরাই নয় বরং সারাদেশের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে। করোনাকালে অনলাইনে সব জাতীয় ও বিশেষ দিবস উপলক্ষেও নানান আয়োজন করা হয়। (খ) সামাজিক কার্যক্রম : সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি বিদ্যালয়কে অবশ্যই সামাজিক দায়িত্ব জ্ঞানসম্পন্ন হতে হয় বলে বিশ্বাস করে ইকবাল সিদ্দিকী কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর সেই বিশ্বাস থেকে করোনাকালীন কর্মযজ্ঞে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে সামাজিক-মানবিক কার্যক্রম, যেমন- ১. করোনারর্ যাপিড কিট উৎপাদনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে শিক্ষক কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার অনুদান প্রদান। ২. স্থানীয় করোনা আক্রান্ত দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী বিতরণ। ৩. কলেজের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গণ-সচেতনতা বৃদ্ধি। ৪. প্রতি বছর রমজানের সামান্য ইফতার কার্যক্রমের পাশাপাশি করোনাকালীন অসচ্ছল পরিবারগুলোর ঈদকে আনন্দঘন করতে তাদের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ। আর তাই করোনা মহামারিতেও ক্যাম্পাসে সদা সুরক্ষিত শিক্ষার্থীরা। করোনা প্রতিরোধে ইকবাল সিদ্দিকী কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করেছে এক সুরক্ষা বলয়। কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও দর্শনার্থীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধান করতে হয় এবং পেরোতে হয় সুরক্ষার প্রতিটি ধাপ। কলেজের প্রধান ফটকের পাশেই স্থাপিত বেসিনে হাত ধুয়ে কলেজে প্রবেশ পথে সম্মুখীন হতে হয় থার্মাল মিটারের। তাপমাত্রা পরিমাপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে হ্যান্ডস্যানিটাইজ করে ডিসইনফেকশন টানেলের মধ্যদিয়ে কলেজে প্রবেশ করতে হয়। কলেজ অভ্যন্তরে সুরক্ষা সুদৃঢ় করতে কলেজ ভবনের প্রতি তলায় দুই পাশে রয়েছে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার সুব্যবস্থা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থানকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে শ্রেণিকক্ষ, বেঞ্চ ও করিডোরসহ সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসে প্রতিদিন দুইবেলা জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষাকে আরও সুনিশ্চিত করতে ব্যবস্থা করা হয়েছে একটি আইসোলেশন কক্ষের। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের স্বার্থে শিক্ষকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন কমিটি, যারা ক্যাম্পাসের প্রতি ইঞ্চি জীবাণুমুক্ত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে অবিচল। এভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে করোনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সুচারু শিক্ষা এবং শিক্ষাসহায়ক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইকবাল সিদ্দিকী কলেজ।