বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ফুলে ফুলে ফুলেল ক্যাম্পাস

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
'বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।' ঋতুরাজ বসন্তে প্রস্ফুটিত নতুন ফুলের গন্ধে উন্মাতাল হয়ে লোকশিল্পী শাহ আবদুল করিম গেয়েছিলেন এমন গান। তবে বর্ষপঞ্জি বলছে বসন্ত আসতে এখনো ঢের দেরি। কিন্তু এখনই বাহারি ফুলে ফুলেল প্রাঙ্গণ দেখে খানিকটা অবাকই হতে হয় প্রকৃতিকন্যাখ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি)। রং বাহারি এ সব ফুল মুগ্ধতা ছড়িয়ে বসন্তের আগেই এনে দিয়েছে ফাগুন হাওয়া। ঋতুপরিক্রমায় শীত এখনো আমাদের মধ্যে বিরাজমান। মাঘের কনকনে শীতের সাদা ও ঘন কুয়াশা আর বাতাসের শনশন শব্দ, প্রকৃতি ছেয়ে আছে প্রচন্ড শুষ্কতা আর রুক্ষতায়। কুয়াশার চাদরে আবৃত হয়ে আছে বাংলাদেশ। তীব্র শীতে মানুষ এখনো জড়সড়। এরই সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাহারি রঙের নতুন ফুলে ফুলে সেজেছে বাকৃবি ক্যাম্পাস। যেদিকে তাকাই সেদিকেই বিচিত্র সব ফুলের সমারোহ। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা পুরো ক্যাম্পাস, যা অনন্য এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। প্রাকৃতিক শোভা যেন হাত বাড়িয়ে টেনে আনছে ক্যাম্পাসের সবাইকে। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার টানে বারবার ছুটে আসছেন বাকৃবিতে। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। বিশেষ করে প্রশাসনিক ভবনগুলো, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে, বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের সামনে, বিভিন্ন অনুষদ ভবনের সামনে, এবং প্রত্যেক হলের ভেতরে এবং বাইরেসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি স্থানে গড়ে উঠেছে সুন্দর সুন্দর ফুলের বাগান। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরের সৌন্দর্য। পুরো মাঠজুড়ে হলুদ, লাল, গোলাপি আর সবুজের সমারোহ অদ্ভুত ভালোলাগা সৃষ্টি করছে প্রকৃতিপ্রেমীর হৃদয়ে। এ সব বাগানে ফুটেছে নানান প্রকৃতির ফুল। তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো বিভিন্ন ধরনের গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, গোলাপ, আকাশি-সাদা স্নোবল, চন্দ্রমলিস্নকা, মোরগ ঝুঁটি, কচমচ, জুঁই, চামেলি, টগর, বেলিসহ নানান প্রজাতির ফুল। প্রতিদিন প্রকৃতির সুশোভিত সবুজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে সব বয়সের দর্শনার্থী বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা। প্রকৃতির টানে ব্যস্ত সময়ে একটু অবসরের প্রয়োজনে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসে এই ক্যাম্পাসে। যেখানে প্রকৃতির মধ্যে যুক্ত হয়েছে এই ফুলের বাগান। এর মধ্যে নিজেকে ক্যামেরায় বন্দি না করলে চলেই না। চারদিক থেকে ভেসে আসে ক্যামেরার ক্লিক, ক্লিক শব্দ। ছবি ও সেলফি তোলায় ব্যস্ত থাকে সবাই। কেউ ব্যস্ত সেলফি তোলায়, আবার কেউ ব্যস্ত বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে ছবি তুলতে আর কেউ ব্যস্ত নিজের ছবি তোলায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুল দেখতে স্বজনদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষের পদচারণে মুখরিত থাকে বাকৃবির সবুজ ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, প্রতি বছরই আমাদের ক্যাম্পাসে এই সময়টায় বাহারি ফুলে ছেয়ে যায়। ক্যাম্পাসকে তখন আরও বেশি চমৎকার লাগে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা, এই সময়টা খুব ভালো লাগে ফুলের স্বর্গে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, শীতকালে এত সুন্দর ফুল শুষ্ক প্রকৃতিকে সতেজ করে তুলেছে। খুব ভালো লাগছে ঘুরতে এসে। মনে হচ্ছে এখনই বসন্তের আবহ তৈরি হয়ে গেছে।