ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

চেতনার বাতিঘর শহীদ মিনার

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ইমরান মাহমুদ
'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি; আমি কি ভুলিতে পারি/ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রম্ন গড়ায়ে ফেব্রম্নয়ারি; আমি কি ভুলিতে পারি' ভাষাসৈনিক ও বরেণ্য সুরকার আলতাফ মাহমুদের গাওয়া এই গানটি শুনলেই মনে পড়ে বাঙালি জাতির অকুতোভয় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কথা। যারা মাতৃভাষা বাংলার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পেয়েছে তার মহান মাতৃভাষাকে। জাতির সেই সব আত্মত্যাগী বীর শহীদদের স্মরণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ শহীদ মিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে বামে তাকালেই চোখে পড়বে ক্যাম্পাসভিত্তিক সর্বোচ্চ এই শহীদ মিনারটি। প্রতিবছর বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে এখানে। শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোস্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। জানা যায়, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১২ সালে মিনারটির ভিত্তিপ্রস্তরের স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডক্টর এম আলাউদ্দিন। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মিনারটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস সূত্রে, শহীদ মিনারটি মূল বেদি থেকে ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৭৫ ফুট প্রস্থ। মাটির উপর থেকে মূল বেদি ৯ ফুট উপরে। মিনারটির পিলারগুলো স্টিলের এসএস পাইপ দিয়ে যুক্ত করা। এতে তিন পাশ দিয়ে ওঠার জন্য সুন্দর কারুকার্য খচিত সিরামিক ইট দিয়ে তৈরি সিঁড়ি রয়েছে। শহীদ মিনারটির মূল আয়তন ৪০০/২০০ বর্গফুট। মূল এরিয়ার চতুর্দিক দিয়ে স্থায়ীভাবে বক্স লাইটিং ও সার্চ লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। মূল বেদিতে খুব সহজে পঙ্গু ও প্রতিবন্ধীরা যাতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে পারেন সে জন্য স্থাপন করা হয়েছের্ যাম্প (ঢালু সিঁড়ি)। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরি মিনারটিতে মোট পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। মাঝখানের স্তম্ভটি সবচেয়ে উঁচু এবং উপরের অংশটি সামনের দিকে নোয়ানো। এই উঁচু স্তম্ভটির দুই পাশে সমান ছোট-বড় আরও চারটি স্তম্ভ্ভ রয়েছে। স্তম্ভগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টিকে মনে করা হয় অতন্দ্র প্রহরী মা চার সন্তানকে নিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যেমন অকাতরে জীবন দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত ও জব্বার। তেমনি মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব আর মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় মায়ের পাশে এখনো অতন্ত্র প্রহরায় তার সন্তানরা। পেছনে উদীয়মান লাল টকটকে সূর্য যা স্বাধীনতার, নতুন দিনের, অন্ধকার দূর করে আলোর উৎসারণের প্রতীক। শহীদ মিনারটির সামনে বেদনাঘন শহীদ দিবসের প্রতীক হিসেবে রয়েছে সততা ফোয়ারা। লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিফা তাসনিম বলেন, 'ভাষা শহীদদের স্মরণে আমাদের ক্যাম্পাসে নির্মিত সুউচ্চ শহীদ মিনারটি যেন চেতনার বাতিঘর হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভাষা আন্দোলন দেখিনি, কিন্তু ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত এই মিনারটি আমাদের জাতির আত্মত্যাগী শহীদদের স্মরণ করিয়ে দেয়। যা আমাদের সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়।'