সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এক যুগে পদাপর্ণ

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

খসরু মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন
২ নভেম্বর সাফল্যের একযুগ অতিক্রম করল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। কৃষি নিয়ে সম্ভাবনার যে বড় বড় স¦প্নগুলো তৈরি হয়েছিল ১২ বছর পর তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। উত্তর পূবার্ঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সিকৃবি প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলেটের লালচে মাটির গুণগতমান দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতর। আবার বৃহত্তর সিলেটে রয়েছে হাজার হাজার একর অনাবাদি উঁচু-নিচু পাহাড়ি অসমতল ভূমি। আছে হাওর নামের বিস্তীণর্ জলাশয়। অপার সম্ভাবনাময় এসব প্রাকৃতিক সম্পদসমূহকে গবেষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য ২০০৬ সালে ২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ক্যাম্পাসটি। ৬টি অনুষদ ও ৪৭টি বিভাগের মাধ্যমে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ থেকে মাত্র ৫০ একর জায়গা নিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাযর্ক্রম। একযুগ পর টিলাঘেরা এই সবুজ মৃত্তিকার ওপরই মাথা উঁচু করে দঁাড়িয়ে আছে সিকৃবি। ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে একটি মানুষও না খেয়ে নেই। দাম যেমন তেমন এখন আর দুভির্ক্ষ হয় না। দেশি মাছ হারিয়ে গেলেও হাইব্রিড মাছ পাওয়া যাচ্ছে দেদারসে। মেহমান এলে সাধের পালা মুরগী উঠোন থেকে ধরে এনে জবাই করতে হয় না। অল্প টাকায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পোল্ট্রি। যে ক্ষেতে আগে ১ টন ধান ফলন হতো, এখন সেখানে ফলছে ৫-৬ টন। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের কারণে। আর প্রতি বছর এরকম বহু কৃষি বিজ্ঞানী তৈরি করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এখন পযর্ন্ত সিকৃবির কৃষি অনুষদ এবং মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ থেকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ৭টি করে ১৪টি ব্যাচ বের হয়েছে। এদিকে ভেটেরিনারি, অ্যানিমাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সস অনুষদ থেকে ইতোমধ্যে ১৯টি ব্যাচ বেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি কৃষি অথর্নীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে বেরোলো ৫টি ব্যাচ এবং কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ থেকে আরো ৩টি ব্যাচ। সম্প্রতি সিকৃবির প্রথম সমাবতর্ন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবতের্ন ১ হাজার ৭৩৩ জনকে স্নাতক, ৫১৫ জনকে মাস্টাসর্ সনদ ও ১ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষাসহ দেশে-বিদেশে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের ছড়াছড়ি। ভাবতে ভালোই লাগছে এরা সবাই এখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করে আছে এবং বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূণর্ অবদান রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাথীর্র মধুর সম্পকের্র কারণেই তারা সফল হয়েছে। এটা সত্য, ছোট্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো খবর কম। তবু কয়েকটা কথা শেয়ার না করলেই নয়। সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় হাওরে জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে এখানকার গবেষকরা। হাওরে বছরে ৭/৮ মাস চারিদিকে থৈথৈ পানি দিয়ে ভরা। শুধুমাত্র বসতভিটার উঁচু জায়গাটুকুই দ্বীপের মতো ভাসমান। সিকৃবির প্রচেষ্টায় সেখানে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। বোরো ফসল নিভর্র হাওরাঞ্চলে এক সময় শীতকালেও মাঠের পর মাঠ পতিত থাকত। ২০১৫ সাল থেকে সুনামগঞ্জের দেকার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে সিকৃবি নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। সিকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহায়তায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর অথার্য়নে পরিচালিত প্রকল্পে খরিফ ও রবি মৌসুমে লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রান্তিক জনপদের প্রভ‚ত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। গবেষকদের সাবির্ক তত্ত¡াবধানে লাগসই ধান চাষ, সবজি চাষ, মাছ চাষ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালন, কবুতর পালনসহ নানাবিধ কাযর্ক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি আতর নিয়ে গবেষণার অবদানের জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. নাজমুল হক আন্তজাির্তক পুরস্কার পেয়েছেন। সিকৃবির আরেকটি গবেষণা একেবারে চোখে পড়ার মতো।