রবিঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২২, ০০:০০

আজাহারুল ইসলাম
খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিণডিহি। সবুজ ছায়াঘেরা ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছ-গাছালিতে ঠাসাসৌম্য একটি গ্রাম। আর এই গ্রামের ঠিক মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতি বিজড়িত একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। বর্তমানে এটি দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপেস্নক্স নামেও পরিচিত। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এই ভবনটির স্থাপত্য ও গঠন কাঠামোতে ব্রিটিশ যুগের স্থাপত্য রীতিনীতির প্রভাব সুস্পষ্ট। কক্ষগুলোতে এখনো রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত আলমারি। এ ছাড়া সাজানো রয়েছে বিশ্বকবি, তার পরিবার ও মৃণালিনীর স্মৃতি স্মরণে বিভিন্ন ধরনের আলোকচিত্র ও চিত্রপটের হাতে আঁকা ছবি। সিঁড়ির সাহায্যে দোতলা ও তিনতলা চিলেকোঠায় ওঠার ব্যবস্থাও আছে। বর্তমানে ভবনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। তথ্য সূত্রে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৩ বেণীমাধব রায় চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ঠাকুর পরিবারের প্রথা অনুযায়ী ভবতারিণীর নাম বদলে মৃণালিনী দেবী রাখা হয়। পরে কলকাতাতে পাড়ি জমান দক্ষিণডিহির ঠাকুর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই দক্ষিণডিহি গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকী ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীও এই গ্রামেরই মেয়ে। যৌবনে কবি কয়েকবার তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামাবাড়িতে এসেছিলেন। মৃণালিনী দেবীর বাড়িও এখানেই। রবীন্দ্র পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত দক্ষিণডিহি রবীন্দ্রনাথের পাঁচপুরুষের শ্বশুরবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে মৃণালিনীর বিয়ের পর উন্নত বসতবাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন রায় পরিবার। ১৮৯০ সালে কবির শ্যালক নগেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী দক্ষিণডিহি রায়বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এখানে কবিগুরু ও কবিপত্নীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ২৫ বৈশাখ ও ২২ শ্রাবণে এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্রজয়ন্তী ও কবিপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়। এ ছাড়া সারা বছর দর্শনার্থীদের আনাগোনা লেগেই আছে। স্থানীয়রা ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে ভ্রমণ ও জ্ঞানপিপাসুরা হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাতে ছুটে আসেন রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতি বিজড়িত এই স্থাপনাটিতে।