সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩, ৬ চৈত্র ১৪২৯
walton

ক্যাম্পাসের স্মৃতিতে মধুর স্বপ্ন

মোহাম্মদ এনামুল হক ফজলে রাব্বী
  ১৪ মে ২০২২, ০০:০০

ক্যাম্পাসের দিনগুলো যেন বন্ধু ছাড়া কেবল এক নির্জন ভূমি ছাড়া আর কিছুই না। অঞ্চল, সংস্কৃতি, জাতি, ধর্মকে উপেক্ষা করে বাঁচার নামই তো বন্ধুত্ব। ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, প্রক্সি দেওয়া আর পরীক্ষার হলে ভুলে যাওয়া অংশটা দেখানো এই বন্ধুর-ই এক অসামান্য অবদান। বন্ধু মানে কিছু স্বপ্নের ভাগাভাগি, বন্ধু মানে ঝগড়ার পর কাঁধে কাঁধ রাখা ইত্যাদি।

আর আমাদের চট্টগ্রাম কলেজের সান্নিধ্যে এলে কার না ভালো লাগে! সত্যি বলতে নিজের ক্যাম্পাসকে ভালোবাসে না পৃথিবীতে এমন লোক পাওয়া খুবই দুষ্কর। আমরাও এর বিপরীত নই। আমরা কয়েকজন অনেকদিন থেকেই পরিকল্পনা করেছিলাম চট্টগ্রামের ভিতরে কোনো একটি জায়গা থেকে ঘুরে এলে মন্দ হয় না। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় সেটি আর হয়ে উঠছিল না। হঠাৎ মিশকাত এসে বলল, চল সবাই, আজ আমাদের ক্যাম্পাসে দেখতে যাব। প্রথমত, সবাই শুনে বিস্ময়ের অবধি নেই। মনে অবিশ্বাস আর সংশয়ের ছায়া দুলছে। অবশেষে তার উদ্যোগে আমাদের দীর্ঘদিনের সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন ঘটে।

গন্তব্যস্থল চট্টগ্রামের ভিতরে নীলিমার কৃষ্ণচূড়া মনোমুগ্ধকর হয়ে আছে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস। বাণিজ্যের শহর তথা চট্টগ্রামের রাস্তার জ্যাম ঠেলে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা সকাল ১০টার কিছু পরে নির্ধারিত গন্তব্যস্থলে পৌঁছাই। আগে থেকে অপেক্ষারত বন্ধু মানিক ও তার বন্ধু আমাদের জন্য উপেক্ষার প্রহর গুনছে। সেখান থেকে সরাসরি হাবিবের নেতৃত্বে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের কাছে চলে যাই। সেখানে সবাই একসঙ্গে একত্র হই। দুপুর ১১টার দিকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন বন্ধুবর মাসুম বিলস্নাহর সঙ্গে নাশতা-পানি নিয়ে আসে। আমরা ভাস্কর্যের পাশে বসেই সবাই নাশতা করলাম। সেদিন কলেজে ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান ছিল। যার কারণে মাসুম বেশিক্ষণ গল্প করে আমাদের সঙ্গে সময় দিতে পারেনি। সে বিএনসি দায়িত্ব ছিল দায়িত্ব পালনের কারণে সেখানে থাকতে হয়েছিল। আমরা ভাস্কর্যের সামনে বসে খোশগল্প করতে করতে নামাজের সময় হয়ে যায়। আমরা সবাই ক্যাম্পাসের মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য চলে গেলাম। সবারই মনে পড়ে ক্ষুধা লেগেছে। ক্ষুধাই যেন তাগাদা দেয় আর কতক্ষণ, এবার খেয়ে নাও। নামাজ সেরে দ্রম্নত সবাই একসঙ্গে মেজবান হাইলে আইয়ুন সেখানে গিয়ে খেতে বসি। মেজবানির মাংস, চনার ডাল, নলার ঝোল সঙ্গে চিকন চালের পোলাও স্বাদে ছিল অসাধারণ। খাওয়া শেষে সবাই মিলে সারা ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করি।

সব কিছু দেখার পর আমরা অডিটোরিয়াম মঞ্চে আসি সেখানে আমাদের সম্মানিত শিক্ষক মহোদয়গণের কাছ থেকে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম সেই আলোচনা শুনেই। আমরা পরক্ষণে দৌড়ে কলেজ ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট চলে যাই, পাশে খেলার বিশাল মাঠে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেখানে চট্টগ্রামের শীর্ষ স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে তাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলা দেখে আমাদের মন কাড়ে। যা দেখলাম চোখজুড়ে, মনজুড়ে তা অম্স্নান থাকবে দীর্ঘকাল। আমরা জায়গাগুলোতে নিজেদের ক্যামেরাবন্দি করি। আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ক্ষণিকের মধ্যে হারিয়ে যাই এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। বন্ধু হাবিবের সেলফিতে নিজেদের ধারণ করি। অপার্থিব অনূভূতিতে হৃদয়-মন ভরে উঠল। এভাবে চলে আরও ঘণ্টা খানিক। দিনের আলো কমতে শুরু করে। সঙ্গে শুরু হয় আমাদের ঘরে ফেরার প্রস্তুতিও। বাদ আসর মাগরিবের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘটে এই ভ্রমণের। তবে আমাদের ক্যাম্পাসের স্মৃতিতে মধুর স্বপ্ন হয়ে যা বেঁচে রইল তার মূল্য তো সোনা-দানা টাকা-কড়িতে মাপা যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে