শিক্ষায় তারুণ্যের আইডল

প্রকাশ | ২১ মে ২০২২, ০০:০০

কাদের বাবু
তিনি একজন লেখক। শিক্ষক। আবৃত্তিকার। গান করেন। ছবি আঁকেন। ছবি তোলাও শখ তার। মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং করেন। শিক্ষার্থীদের মনন বিকাশে সহায়তা করেন। ক্যারিয়ারের প্রতি মনোযোগী হওয়ার জন্য নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক গুণের অধিকারী তিনি। তবে শিক্ষকতা করে, বই পড়ে ও লেখালেখি করেই মূলত তার বেশিরভাগ সময় কাটে। এই ব্যক্তি আর কেউ নন, তিনি শিক্ষার্থীদের প্রিয় স্যার, তরুণ কিশোরদের প্রিয় লেখক ফজলুল পলাশ। সময়ের প্রয়োজনে নিজেকে প্রস্তুত করার মতো একজন ব্যক্তি তিনি। শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক, সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি যে কারও সঙ্গে তিনি সহজেই মিশে যেতে পারেন। আড্ডায় হয়ে ওঠেন মধ্যমণি। হয়ে ওঠেন তারুণ্যের আইডল। প্রিয় হয়ে ওঠেন কোনো আসরে, আয়োজনে। তিনি বিনামূল্যে তার শিক্ষার্থী, বন্ধু-বান্ধব এবং অনেক ব্যক্তিকে ক্যারিয়ারসহ অন্য বিষয়েও সমাধানে পরামর্শ দিচ্ছেন। করোনা মহামারির সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছেন। ঘরে বন্দি থাকতে থাকতে কিংবা বেকারত্ব, প্রেমঘটিত সমস্যা, পারিবারিক চাপ, একাকিত্ব ও ড্রাগ অ্যাডিকটেড অনেকেই আত্মহত্যার পথে চলে গিয়েছিল। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য অবদান রাখছেন ফজলুল পলাশ। তবে এদের মধ্যে ২০-২৫ বছর বয়সিদের প্রেমঘটিত সমস্যাই বেশি। সমাজবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক হিসেবে বিশ্বাস করি পারিবারিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। একজন শিশু পরিবারে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে। ব্যক্তির সবচেয় বড় আবেগ, আশ্রয় ও ভালোবাসার জায়গা হলো তার পরিবার। যে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্পর্কের গভীরতা বেশি। যে পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে খোলামেলাভাবে নিজেদের সমস্যাগুলো পরিবারের অন্য সদস্যের কাছে ভাগাভাগি করতে পারে। সেসব পরিবারের সদস্যের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা কম। একটা মানুষের পরিবারই তো আসলু। পরিবার চাইলেই শুরুতেই এর সমাধান করতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ পরিবারেই তো সেই আগের বন্ধন নেই। আগে বড় পরিবার ছিল। পরিবারেই আড্ডা হতো। এখন তা হয় না। বইপড়ার চর্চাও কমে গেছে। বই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু। ফজলুল পলাশের বেশির ভাগ সময় কাটে হয় লিখে না হয় পড়ে। পড়তে তিনি খুব ভালোবাসেন। তার বাসায় ছোট্ট একটি লাইব্রেরি আছে। তার দীর্ঘদিনের ইচ্ছে গাইবান্ধায় নিজ বাড়িতে বাবার নামে একটি বড় পাঠাগার করবেন। যেখানে সব শ্রেণির মানুষ এসে বই পড়তে পারবে। তিনি বই উপহার দিতে ভালোবাসেন। শিক্ষার্থী বা বন্ধু-বান্ধব ছাড়াও বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বই গিফট করেন। বই-ই মূলত তার ধ্যান-জ্ঞান। তার বিশ্বাস, তরুণরা বইপড়ার প্রতি ঝুঁকলে, এ দেশ সোনার বাংলায় পরিণত হবে। বইয়ের থেকে সুন্দর, বইয়ের থেকে মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। প্রতিটি পরিবারেই লাইব্রেরি থাকা উচিত। পরিবারের শিশুরা যেন মোবাইল বা টিভি দেখে নয়, তাদের দিনের সূচনা করবে বই পড়ে। বই নিয়ে তার অফুরন্ত স্বপ্ন থাকলেও ছবি আঁকাআঁকিতেও এগিয়ে আছেন পলাশ। সময় পেলে জল ও তেল রং উভয় মাধ্যমেই ছবি আঁকেন। নিজের আঁকা ছবি বাছাই করে রেখেছেন প্রদর্শনীর জন্য। সময় সুযোগ বুঝে প্রদর্শনী করবেন বলে জানান তিনি। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল পলাশ বর্তমানে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত। শিক্ষকতার বয়স এক যুগের বেশি। শিক্ষার্থীদের শুধু শেখান না বরং তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় শেখেন- এভাবে বলতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফজলুল পলাশের জন্ম ১৯৮০ সালের ১৭ ফেব্রম্নয়ারি গাইবান্ধা জেলার হাট লক্ষ্ণীপুরে। লক্ষ্ণীপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কারমাইকেল কলেজ রংপুর থেকে এইচএসসি, উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্সে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থানসহ, মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখি করে আসছেন। স্কুলের দেয়াল পত্রিকা দিয়ে লেখালেখির যাত্রা শুরু। মাঝেমধ্যে ক্লাসের বন্ধুদের খাতা কবিতা এবং ছবি দিয়েই ভরিয়ে ফেলতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় লেখার আগ্রহ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। মা ফিরোজা আখতার লেখালেখির প্রথম অনুপ্রেরণা। পরবর্তী সময়ে সিংহভাগ লেখার প্রথম পাঠক সহধর্মিণী তানজিলা শবনম। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১টি। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসা এই মানুষটি বর্তমান বেকারত্ব নিয়ে বলেন, করোনায় অনেকেই কর্মহীন হয়েছে সত্য, পাশাপাশি অনেক উদ্যোক্তাও তৈরি হয়েছে। এই সংকটে পরিকল্পিতভাবে যারা এগিয়ে যাবে তারাই ভালো করবে। বাঁচার অনেক অবলম্বন আছে, উপকরণ আছে। আর কোনো কিছুই একেবারে পারফেক্ট হবে না। ডেডিকেশন নিয়ে কাজ করলে এক সময় পারফেকশন চলে আসবে। সুতরাং পারফেকশনের চেয়ে ডেডিকেশনটাই বেশি জরুরি। ডেডিকেশনই একসময় পারফেকশন নিয়ে আসবে।