সবুজের সমারোহে তারুণ্যের মেলা

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২২, ০০:০০

মো. মারুফ মজুমদার
পহেলা মে, দিনটি স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে ২০২০ সালে গঠিত হওয়া পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব নাঙ্গলকোটের (পিউসান) সব পাবলিকিয়ান শিক্ষার্থীর কাছে। একঝাঁক সতেজ-সবুজ তরুণ দীপ্ত আগামীর উজ্জ্বল নক্ষত্রের মিলনমেলায় ভরে উঠেছিল নাঙ্গলকোট সরকারি কলেজের প্রাঙ্গণ। সিয়াম-সাধনার মাসের ঊনত্রিশতম রমজানে আয়োজন করা হয় নাঙ্গলকোটের পাবলিকিয়ানদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ইফতার মাহফিল- যা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় পুনর্মিলনীতে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলতে শুরু করে মাঠ-প্রাঙ্গণ তখন জমে ওঠে পাবলিকিয়ানদের ইফতার আড্ডায়। বিকালের গোধূলি লগ্নের যে রক্তিম আবহ তা অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়। নিত্যদিনের ব্যস্ততা বই-খাতা, আড্ডা, ক্লাস, অতঃপর একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরার ঘটনার বিপরীতে সবার অপেক্ষা মুয়াজ্জিনের সুমধুর আজানের ধ্বনির। কেউ কেউ ব্যস্ত ইফতারের অনুষঙ্গ তৈরিতে। ইফতারে ঠিক আগ মুহূর্তে সবুজ ঘাসের বুকে জ্যামিতিক আঙ্গিকে লম্বা শীতল পাটি বিছানো হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন পাবলিকিয়ান যারা বর্তমানে সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। যাদের বক্তৃতায় ফুটে উঠেছে তেজোদ্দীপ্ত তারুণ্যের জয়ধ্বনি ও পারস্পরিক দৃঢ় বন্ধনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্ব-যার অন্তর্নিহে রয়েছে সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের দারুণ উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে আয়োজনের প্রবর্তনা ঘটে, তারপর পরিচিত পর্ব যেখানে অংশগ্রহণ করে সব পিউসান সদস্যরা। এরপর আসে সংবর্ধনা অর্থাৎ যারা সরকারে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তন্মধ্যে ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন সবুজ (ঢাবি), শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত সাইফুল ইসলাম স্বপ্নীল (চবি)। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অতঃপর উপস্থিত অতিথিদের সমাপনী বক্তৃতায় পিউসানের সার্বিক উন্নতি ও মঙ্গল কামনা করা হয়। ওই আয়োজনে উপস্থিত অতিথি হিসেবে ছিলেন কর কমিশনার মওদুদ আহমেদ ভূঁইয়া, প্রভাষক বরিউল ইসলাম রবি, জাবেদ শাহজালাল, শাহাদাত হোসাইন সুমনসহ প্রাক্তন পাবলিকিয়ানরা। মাগরিবের আজানের ঠিক আগ মুহূর্তে সবার মধ্যে ইফতার বিতরণ শেষে মসজিদ থেকে নিঃসৃত শ্রম্নতিমধুর আজানের ধ্বনিতে ইফতার করা শুরু। নামাজ শেষ করে-শুরু হয় সিনিয়র-জুনিয়র আড্ডা, হাস্যোজ্জ্বল, উৎসবমুখর পরিবেশে সৃষ্টি হয় চারপাশ। হবে নাইবা কেন? সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়রের সালামি গ্রহণ, জন্মদিন পালন একদিনে এতসব আয়োজন! সারাদিনের ক্লান্তির রেশটুকু আর রইল না। এসময় স্বেচ্চাসেবী সংগঠন সংশপ্তকের সমন্বয়ক ও বর্তমান পিউসানের সভাপতি জহিরুল ইসলাম (ঢাবি) বলেন, পাবলিকিয়ান মিলনমেলায় যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে তা চিরকাল অম্স্নান হোক, বিশ্ব থেকে দূর হোক মহামারি, মানুষে মানুষে বিভেদ ভুলে এগিয়ে চলি একসাথে- এই হোক আমাদের মর্মবাণী। এবং সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল হাসান (চবি) বলেন, 'ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধন অটুট রাখতে প্রতি বছর এই উৎসব আয়োজন করা হয়, হবে। যার মধ্যে ফুটে উঠবে পারস্পরিক বন্ধন যা পারিবারিক বন্ধনের সমান্তরালে এগিয়ে চলবে।' হৈ-হুলেস্নাড় শেষে প্রাঙ্গণে ফের পিনপতন নীরবতা নিয়ে আপন নীড়ে ফেরা। একদিন এই নীরবতা ভেঙে ব্যস্ততা ফিরবে। তবে এই সন্ধ্যার মুগ্ধতা থেকে যাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণে ও মননে। সময়ের পরিক্রমায় ভালোবাসার এই মিলনমেলায় হয়তো ছেড়ে চলে যেতে হবে অনেককে, শুধু স্মৃতিপটে থাকবে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো এত দিনের মধুর সময়গুলো- তখন শুধুই স্মৃতি রোমন্থন।